ad720-90

বিল গেটসের চোখে স্টিভ জবস বনাম ইলন মাস্ক


বৈদ্যুতিক গাড়ি আর পুনরায় ব্যবহারযোগ্য রকেট বানানো টেসলা ও স্পেসএক্স এখন আলোচনায় থাকছে নিয়মিতই। ইলন মাস্ককে কী তাহলে আগামী দিনের স্টিভ জবস বলা যায়? বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন বিল গেটসের কাছে এই প্রশ্ন রেখেছিল ব্লুমবার্গ।  

বিল গেটসের জবাব: “কাউকে যদি আপনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন, তখন এরকম গড়পরতা তুলনা করার চেষ্টা খুব উদ্ভট মনে হবে।”

স্টিভ জবস ও ইলন মাস্কের কাজের ধরনে মৌলিক কিছু পার্থক্যের কথা ব্লুমবার্গের সঙ্গে সেই সাক্ষাৎকারে বলেছেন বিল গেটস।

সেই সাক্ষাৎকারের সঙ্গে প্রযুক্তি দুনিয়ার অন্য মহারথীদের বক্তব্য মিলিয়ে জবস আর মাস্কের মিল-অমিলগুলো বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে।

বিল গেটস বলেন, “ইলন অনেক বেশি নিজ হাতে কাজ করা কারিগর। অন্যদিকে স্টিভ নতুন নকশা তৈরি, মানুষ চেনার ক্ষমতা আর বিপণনে ছিলেন অসাধারণ।… দুজনকে গুলিয়ে ফেলার কোনো সুযোগ নেই।

লক্ষ্য স্থির করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ বের করে আনার চেষ্টার কথা মাস্ক নিজেই বিভিন্ন সময়ে বলেছেন। আর সেই চেষ্টা সফল করতে তিনি নিজেই হাত লাগান কাজে।   

২০১৭ সালের নভেম্বরে কনফারেন্স কলে টেসলার এক সভায় মাস্ক বলছিলেন, কীভাবে তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা টেসলার ব্যাটারি উৎপাদন কারখানায় কাটিয়ে দিচ্ছেন। কারখানার ওয়ার্কে ফ্লোরেই ঘুমাচ্ছেন, সময় বাঁচানোর জন্য গোসলেও যাচ্ছেন না। লক্ষ্য একটাই, ২০১৮ সালে টেসলা ৩ বাজারে আনা। 

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ উদ্ধারের চেষ্টার কথা তুলে ধরে মাস্ক ওই বৈঠকে বলেন, “আমি নিজে এই কাজে হাত লাগিয়েছি, সেই মেশিন নিয়েই কাজ করছি, যেখানে সম্ভব নিজেই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছি।”

“আমরা এখানে সপ্তাহে সাত দিন কাজ করছি। আমি নিজে রোববার ভোর ২টার সময় জোন ২ মডিউল লাইনে হাজির… আমার পক্ষে যা করা সম্ভব আমি তাই করে যাচ্ছি।”

স্টিভ জবস আর বিল গেটসের দ্বৈরথ এক সময় ছিল দারুণ আলোচনার বিষয়।

স্টিভ জবস আর বিল গেটসের দ্বৈরথ এক সময় ছিল দারুণ আলোচনার বিষয়।

আর স্টিভ জবস কেমন ছিলেন? বিল গেটসের ভাষায়, তিনি ছিলেন ‘মানুষ বশ করার জাদুকর’।

“আমি এখনও দেখতে পাই, কীভাবে তিনি ইন্দ্রজাল বিস্তার করছেন এবং তারপর দেখি, মানুষ কীভাবে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আছে।”

স্টিভ জবসের প্রস্তাবে সাড়া দিয়েই নয় বছর আগে অ্যাপলে যোগ দিয়েছিলেন এখনকার সিইও টিম কুক। তাদের দেখা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে।

২০১৪ সালে চার্লি রোজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টিম কুক বলেছিলেন, কীভাবে স্টিভ জবস তাকে অ্যাপলে যোগ দিতে রাজি করিয়েছিলেন। 

শুরুতে দ্বিধা ছিল টিম কুকের মনে। কিন্তু স্টিভ জবস যেভাবে কথা বলেছিলেন, আর পুরো ঘরে যে পরিবেশ তাতে তৈরি হয়েছিল, তাতেই মন বদলে যায় কুকের।

“আমি অ্যাপলের সমস্যাগুলোর কথা ভাবলাম। তারপর আমার মনে হল, এখানে কিছু করার সুযোগ আমার আছে। আর স্টিভ জবসের সঙ্গে যদি কাজ করা যায়, সেটা তো জীবনের একটা সুবর্ণ সুযোগ।

“তারপর হুট করেই আমার মনে হল, আমি এখানে কাজ করব, এই দায়িত্ব আমি নেব।”

২০১১ সালের অগাস্টে আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাপেলের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান স্টিভ জবস। তার দুই মাস পর অক্টোবরে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে ভুগে তিনি মারা যান।

জবস মারা যাওয়ার পর সমালোচকদের অনেকে ভেবেছিলেন, অ্যাপল হয়তো খুব বেশি হলে দুই থেকে চার বছর চলবে। তবে কুকের নেতৃত্বে ২০১৮ সালে বিশ্বের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয় অ্যাপল। আর অ্যাপল প্রধান টিম কুক নিজেও এ বছর শতকোটিপতি ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন।

এদিকে রকেটের গতিতে বাড়তে থাকা টেসলার শেয়ার দরের ওপর ভর করে ইলন মাস্কের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণও এ বছর ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

স্টিভ জবসের জন্য টিম কুকের শ্রদ্ধা

স্টিভ জবসের জন্য টিম কুকের শ্রদ্ধা

বিল গেটস আর স্টিভ জবসের দ্বৈরথ এক সময় ছিল দারুণ আলোচনার বিষয়। মাস্কের সঙ্গেও অনেক বিষয়ে মতপার্থক্য আছে গেটসের।

গত অগাস্টে বিদ্যুৎচালিত বাহন নিয়ে নিজের ব্লগ গেটসনোটস ডটকমে বিল গেটস লেখেন, ট্রাক ও ভারী বাহনের বিকল্প হিসেবে বিদ্যুতচালিত গাড়ি কখনোই বাস্তবসম্মত সমাধান হবে না।

এর জবাবে মাস্ক ১১ সেপ্টেম্বর এক টুইটে লেখেন, “বিদ্যুৎচালিত ট্রাক নিয়ে তার (গেটস) কোনো ধারণাই নেই।”

অবশ্য ব্লুমবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গেটস বলেছেন, মাস্কের বিদ্যুৎচালিত গাড়ি জলবায়ু পরিবর্তন রোধের চেষ্টায় বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে।

“টেসলা মানসম্মত কাজই করেছে। তাদের এই সাফল্য দেখে গাড়ি নির্মাতা অন্য কোম্পানিগুলোও এগিয়ে আসবে।”

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত এপ্রিলে ক্যালিফোর্নিয়ায় সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হলে ওই নির্দেশনাকে ‘ফ্যাসিবাদী’ বলেছিলেন ইলন মাস্ক। বিল গেটস তখন এর সমালোচনা করতে ছাড়েননি।

জুলাই মাসে সিএনবিসিকে তিনি বলেন, “সব সময় স্তম্ভিত করে দেওয়ার মত কথা বলবে, এটাই হচ্ছে ইলন। টিকা তৈরির কোনো বিষয়ে তিনি যুক্ত নন। দারুণ এক বিদ্যুৎচালিত গাড়ি তিনি বানাচ্ছেন। তার বানানো রকেটগুলোও ভালো চলছে। তো সেসব নিয়ে তিনি কথা বলতেই পারেন। আমি আশা করব, কোন বিষয়গুলোতে তিনি সেভাবে যুক্ত নন, সেটা যেন গুলিয়ে না ফেলেন।”

গেটসের নিজের ভাবমূর্তিতেও উত্থান-পতন ঘটেছে বিভিন্ন সময়ে। মাইক্রোসফটে যখন ছিলেন, বিল গেটস তখন কর্মীদের কাছ থেকে অনেক বেশি উঁচু মান আশা করতেন, তার কঠোর ভূমিকা নিয়েও সে সময় আলোচনা হত।  

সেসব স্বীকার করে নিয়েই গেটস বলেছেন, “মাইক্রোসফট যখন চালাতাম, আমি তখন অবশ্যই খুব মিষ্টভাষী ছিলাম না।”

৬৫ বছর বয়সী বিল গেটস দাতব্য কাজে বেশি সময় দিতে মাইক্রোসফটের পরিচালনা পর্ষদ থেকে সরে দাঁড়ান গত মার্চে। এর আগে ২০০৮ সালে মাইক্রোসফটের দৈনন্দিন কাজের পরিচালনার দায়িত্ব থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন তিনি।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar