ad720-90

‘ছাইপাশ’ শুনানিতে একে অন্যকে দুষলেন আইনপ্রণেতারা


ওই শুনানিতে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করার পাশাপাশি আইনপ্রণেতারা একে অন্যের সঙ্গেও বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে প্রতিবেদনে জানাচ্ছে রয়টার্স।

শুনানিতে হাজির হয়েছিলেন ফেইসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গ, গুগল প্রধান সুন্দার পিচাই এবং টুইটার প্রধান জ্যাক ডরসি।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ‘কমিউনিকেশন ডিসেন্সি অ্যাক্ট’ এর ২৩০ ধারার অধীনে জনমত প্রকাশ প্রশ্নে বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়, তা নিয়ে মতপার্থক্য তৈরি হয় আইনপ্রণেতাদের মধ্যে। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময়ে পাশ হওয়া ওই আইনটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহারকারীর কনটেন্টের জন্য মামলার শিকার হওয়া থেকে রক্ষা করে আসছে।

শুনানিতে রিপাবলিকান আইনপ্রেণতারা প্রায় পুরোটা সময় জুড়েই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করেন। তাদের অভিযোগ, রক্ষণশীলদের বিরুদ্ধে বেছে বেছে সেন্সরশিপ চালাচ্ছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।

আইনের ব্যাপারে কমই প্রশ্ন করা হয় গুগল, ফেইসবুক ও টুইটারের প্রধান নির্বাহীদেরকে। নিজ নিজ ভাষ্যে জাকারবার্গ, পিচাই ও ডরসি জানান, ইন্টারনেটে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকার ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আলোচিত আইনের ২৩০ ধারা তাদেরকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও কনটেন্ট মডারেটের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করছে।

তিন প্রধান নির্বাহীই রাজনৈতিক বক্তব্য মডারেট করার অভিযোগ অস্বীকার করেন। ব্যাপারটি ভালোভাবে নিতে পারেননি কয়েকজন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা।

শুনানিতে জ্যাক ডরসি জানান, নির্বাচনের উপর কোনো প্রভাব বিস্তার করছে না টুইটার। এর পরপরই ডরসিকে এক হাত নেন রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ।

তিনি বলেন, “যা গণমাধ্যমের প্রকাশের অনুমতি রয়েছে এবং মার্কিনীদের জানার অধিকার রয়েছে, তা আটকানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আপনাকে কে দিয়েছে এবং কার ভোটে তিনি ওই পদে বসেছেন?”

উল্লেখ্য, টেড ক্রুজ কয়েকদিন আগে প্রকাশিত নিউ ইয়র্ক পোস্টে প্রকাশিত এক নিবন্ধ প্রসঙ্গে এ কথা বলেন। ওই নিবন্ধে ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেনশিয়াল প্রার্থী জো বাইডেনের ছেলের প্রসঙ্গ এসেছিল। কিন্তু নিবন্ধটির ‘রিচ’ কমিয়ে দিয়েছিলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, আর তা ব্লক করে দিয়েছিল টুইটার।   

ডেমোক্রেট সিনেটর ব্রায়ান শার্টজ জানান, তার কোনো প্রশ্ন নেই। ওই সময়ে শুনানিকে “ছাইপাঁশ” বলেও আখ্যা দেন তিনি। শার্টজ বলেন, “এটি হয়রানি এবং পুরো কাজটিই নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে করা হয়েছে।”

অন্যান্য ডেমোক্রেটরাও একই অভিযোগ তোলেন। এদের মধ্যে ছিলেন সিনেটর ট্যামি বল্ডউইন, সিনেটর এড মার্ক এবং সিনেটর এমি ক্লবুচার। সবার ভাষ্যেই, শুনানিটি আয়োজন করা হয়েছে ডনাল্ড ট্রাম্পের ‘পুনঃনির্বাচনী’ প্রচেষ্টাকে সহায়তা করার লক্ষ্যে।

অন্যদিকে, শুনানি চলাকালে টুইট করেছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। টুইটে তিনি লেখেন, “২৩০ ধারা বাতিল করুন!”।   

শুনানির মূল সমালোচনার ঝড়টা টুইটারের ডরসির উপর দিয়েই গিয়েছে। তিনি উপস্থিত কমিটিকে সতর্ক করেন, ২৩০ ধারা বাতিল করলে তা উল্লেখযোগ্যভাবে মানুষের অনলাইন যোগাযোগকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে।

পিচাই জানান, গুগল কোনো পক্ষপাতমূলক আচরণ ছাড়াই নিজ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, এর উল্টোটা হলে তা তাদের ব্যসায়িক স্বার্থেরই বিরুদ্ধে যাবে।

এদিকে, শুনানির শুরুতেই কারিগরি সমস্যায় পড়েন জাকারবার্গ। কিছুটা সময় ইন্টারনেট সংযোগের কারণে ভুগতে হয় তাকে। পরে ফেইসবুক প্রধান শুনানিতে জানান, আইনের সংশোধন সমর্থন করেন তিনি। কিন্তু ২৩০ ধারা বাতিল করলে আইনি জটিলতার ঝুঁকি কমিয়ে আনতে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি করে কনটেন্ট সেন্সর করতে পারে।

ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনও আইন প্রত্যাহারের ব্যাপারে সমর্থন জানিয়েছেন বলে উঠে এসেছে রয়টার্সের প্রতিবেদেনে।

শুনানি কমিটির দায়িত্বে ছিলেন সিনেটর রজার উইকার। তিনি জানান, অপছন্দের কনটেন্ট সেন্সর করার সক্ষমতা না দিয়ে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে দায়বদ্ধতা থেকে রক্ষা করাটা গুরুত্বপূর্ণ।

তবে, “এখন ওই ফ্রি পাস দেওয়ার সময় ফুরিয়ে এসেছে।” – বলেন তিনি।

নিউ ইয়র্ক পোস্ট নিবন্ধের রিচ কমিয়ে দেওয়া প্রশ্নে ফেইসবুকের, আর ব্লক করে দেওয়ার ব্যাপারটি নিয়ে টুইটারের সমালোচনা করেন তিনি।

টুইটার কেন বিশ্ব নেতাদের ভুল তথ্য সম্বলিত টুইট মুছে দেয় না, সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অন্যান্যরা। 

শুধু মার্কিন আইনপ্রণেতারাই নন, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রশ্নে যুক্তরাজ্যের ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নির্বাহী কমিশনও নতুন ‘ডিজিটাল পরিষেবা অ্যাক্ট’ আইনের খসড়া প্রণয়ন করছে।  





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar