মার্কিন নির্বাচনের প্রভাব পড়বে মহাকাশেও
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ২০২৪ সাল নাগাদ ফের চাঁদে মানুষ পাঠিয়ে মহাকাশ প্রতিযোগিতায় নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে বদ্ধপরিকর।
ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় এলে ২০২৫ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সমর্থন হারাতে পারে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র। এমনকি কয়েক দশক পুরোনো মার্কিন ‘অরবিটাল ল্যাবরেটরি’র নিয়ন্ত্রণও ব্যক্তি মালিকানাধীন মহাকাশ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে দিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তার।
অন্যদিকে, জো বাইডেনের হিসেব এক্ষেত্রে হবে অন্যরকম। সংশ্লিষ্ট এক সূত্রের তথ্য বলছে, প্রথমেই চাঁদে মানুষ পাঠানোর অভিযান পিছিয়ে দেবেন এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের জন্য তহবিল সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাবও রাখবেন তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, চন্দ্রাভিযান পিছিয়ে গেলে বোয়িংয়ের ‘স্পেস লঞ্চ সিস্টেম’(এসএলএস) রকেটের ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় বাড়বে। কারণ অন্যান্য মহাকাশ প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো বসে নেই। আগামী বছর নাগাদ নিজ নিজ প্রতিদ্বন্দ্বী রকেট নিয়ে বাজারে পা রাখতে চাইছে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স এবং জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিন।
সবমিলিয়ে বোয়িংয়ের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ২২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের চুক্তি ফুরিয়ে যাবে ২০২৪ সাল নাগাদ।
এ ছাড়াও কোভিড-১৯ মহামারীর চাপ এবং প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার পর নিজেদের ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজগুলোকে বসিয়ে রাখার কারণে বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটি। তবে, বাইডেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের তহবিলে সময়সীমা বর্ধিত করলে তা বোয়িংকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বর্তমানে নভোচারীদেরকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ায় জন্য বোয়িং ও স্পেসএক্স মহাকাশযান সরবরাহ করছে। এ কমর্সূচী শুরু হয়েছিল ওবামা প্রশাসনের আমলে। ট্রাম্প ও বাইডেন দুই জনেরই এতে সমর্থন রয়েছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
চন্দ্রাভিযান পিছিয়ে দিলে সেটির প্রভাব পড়বে চাঁদে অবতরণকারী ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশের চুক্তির বেলায়। অনেক প্রতিষ্ঠানই ওই চুক্তি করতে আগ্রহী। কিন্তু পুরো প্রক্রিয়াটিই পিছিয়ে যাবে।
মহাকাশযান এবং স্বল্প খরচ ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট তৈরি প্রশ্নে বোয়িংয়ের মতো গতানুগতিক প্রতিরক্ষা ঠিকাদার এবং স্পেসএক্সের মতো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি করতে চান বাইডেন, অন্তত তার মহাকাশ পরিকল্পনা সে দিকেই ইঙ্গিত করছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বাণিজ্যিক মহাকাশ শিল্পের জন্য ‘ধারাবাকিতাই মূল চাবিকাঠি’ বলে জানিয়েছেন অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক ফ্রেঞ্চ। তিনি এর আগে ওবামা প্রশাসনের অধীনে নাসার কর্মী বাহিনীর প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
“আপনি যদি এখন কারিগরি রেখাঙ্কন পাল্টে ফেলেন, তাহলে আপনি সম্ভাব্য ধারাবাহিক ঐতিহাসিক অর্জন এবং নাসার পোর্টফোলিওতে বিদ্যমান দৃঢ় ও শক্ত দ্বিদলীয় সমর্থনকে ঝুঁকির মুখে ফেলছেন,”বলেছেন ফ্রেঞ্চ।
সবমিলিয়ে ২০ জনের মতো জ্যেষ্ঠ নাসা কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী বাইডেন শিবিরের বিজ্ঞান কমিটির অধীনে কাজ করতে একত্রিত হয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবক উপগোষ্ঠী হিসেবে তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে মহাকাশ প্ল্যাটফর্ম বিষয়ক পরিকল্পনার একটি খসড়া তৈরিতে সহায়তা করবেন।
ওবামা প্রশাসনে দায়িত্বে ছিলেন এমন অনেকেই বাইডেন প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে চেষ্টা করছেন। উপগোষ্ঠীর অনেক সদস্যই নাসা তহবিল বাড়ানোর এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্ব সমর্থনে যাওয়ার পক্ষে। তাদের ভাষ্যে, বাইডেনের মহাকাশ পরিকল্পনা ও এর নেতৃত্বে কর্মীদের দায়িত্বের ব্যাপারটি এখনও গঠনমূলক পর্যায়ে রয়েছে। কারণ বাইডেন শিবির বর্তমানে করোনাভাইরাস মহামারী ও বেকারত্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
অগাস্টে স্পেসএক্স প্রায় এক দশক পর যুক্তরাষ্ট্রের মাটি থেকে মহাশূন্যে নভোচারী পাঠিয়ে আবার তাকে ফিরিয়ে এনেছিল। ওই সময় বাইডেন বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের “অনুসন্ধান ও বৈজ্ঞানিক পরিসীমা বাড়াতে নভোচারী পাঠানো অব্যাহত রাখবে এমন একটি দৃঢ় মহাকাশ কর্মসূচীর নেতৃত্ব দেওয়ার” অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।
এ বিষয়গুলো নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ব্লু অরিজিন ও বোয়িং। আর স্পেসএক্স ও ট্রাম্প শিবির মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
বাইডেনের স্পেস নীতি এসএলএস বান্ধব হবে, না কি নতুন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে যাবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে তিনি নাসা প্রশাসক হিসেবে কাকে দায়িত্ব দেবেন সেটির উপর। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই সূত্র জানিয়েছেন, এ দায়িত্ব একজন নারীকে দিতে চাইছে বাইডেন শিবির।
Comments
So empty here ... leave a comment!