ad720-90

ফাইবার অপটিক ক্যাবল কমিউনিকেশন, পৃথিবীর দ্রুতগতির এক বিষ্ময়কর তথ্য আদান-প্রদান-পদ্ধতি ! – নার্গিস জিনাত


ফাইল ছবি

প্রিয় পাঠক, এইমাত্র আমার যে লিখাটি আপনি পড়ার জন্য ক্লিক করেছেন আর এক ক্লিকেই পুরো বিষয়টা আপনার চোখের সামনে মোবাইল বা ল্যাপটপের পুরো স্ক্রীনজুড়ে চলে এসেছে,এটা কেমন করে সম্ভব হলো?গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আমরা দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা পেয়ে আসছি।দ্রুতগতির ইন্টারনেট আসলেই যেনো একটা যাদুর ভেলকিবাজি। এই ভেলকিবাজি ছাড়া যেন আমাদের একদম চলেই না!অনেকে এই ভেলকিবাজির সুবিধা পেয়েই খুশি,এর বেশি কিছু জানতে চান না।আবার অনেকে এর দ্রুততার কারণ জানতে চান। আজ আমি আপনাদেরকে ইন্টারনেটের দ্রুত গতির কারণ নিয়ে কিছু লিখার চেষ্টা করবো।

এটা পড়ে আপনাদের বার বার মনে হতে পারে যে,আমি আপনাদেরকে ক্লাস এইট/নাইনের বাংলা পদার্থবিজ্ঞান থেকে জ্ঞান দিচ্ছি।সে জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তবুও আমার মনে হচ্ছে জানার তো কোন শেষ নেই। চলুন একটু জেনে নেই।
প্রথমে একটু লাফিয়ে অন্য প্রসংগে যাই।
শীতের মিষ্টি একটি আমেজের রোদ্দুরময় একটি সকাল।আপনি ব্যালকনিতে নরম রোদ পোহাতে বা রাস্তায় চোখ রাখতে গেলেন।হঠাৎ সূর্য থেকে কিছু আলোকরশ্মি এসে আপনার চোখ ধাঁধিয়ে দিল!আপনি চোখ পিট পিট করলেন।আমরা অনেকেই জানি আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল বা সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার।এই গতিবেগে আলো, সূর্য থেকে কমপক্ষে ১৪৭ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্বের রাস্তা পাড়ি দিয়ে দুনিয়াতে এসে, আপনার ব্যালকনিতে এসে আপনার চোখে ঝলক মারতে কত সময় লাগে,জানেন? ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড।
এবার দ্বিতীয় প্রসংগে আসি,যা মূল প্রসংগের অংশবিশেষ।
বর্তমানে আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার যেই স্বর্ণযুগে বসবাস করছি,তা দ্রুতগতির ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল।
এই দ্রুতগতির ইন্টারনেট পুরোটাই নির্ভরশীল যে জিনিসটির উপরে তার নাম “অপটিক্যাল ফাইবার”।সহজ বাংলা করলে দাঁড়ায়,কাঁচের সুক্ষ চুল। অপটিক হলো আলো সংক্রান্ত বিষয়, ফাইবার হলো সুক্ষ তন্তু।

আমর প্রথম প্রসংগের সাথে আমার দ্বিতীয় প্রসংগের চমৎকার এক বিষ্ময়কর সম্পর্ক রয়েছে। অনেকটা সময় নিয়ে বিজ্ঞানীরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে “আলো” নামের শক্তিটির গতিবিধি এবং “আলোর প্রতিফলন” কে অতি বুদ্ধিমত্তার সাথে সুকৌশলে কাজে লাগিয়ে আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন আজকের সম্পূর্ণ নতুন এক তথ্য আদান-প্রদানের পৃথিবী।

আমাদের পাঠানো সকল তথ্য,ছবি, অডিও এবং ভিডিও,সবকিছুই আলোর রূপে পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে।এরপর আলো হিসেবেই মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে ছুটে চলেছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে।
অপটিক্যাল ফাইবার নিয়ে ইউটিউব ও গুগলে প্রচুর তথ্য আছে। আমি চেষ্টা করেছি সবাই যেনো সহজে বুঝে, সেইভাবে তুলে ধরতে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সময়ে গান লিখে সুর করেছিলেন,
“আলো আমার আলো ওগো,আলোয় ভুবন ভরা,আলোয় নয়ন ধোয়া আমার,আলো হৃদয় হরা।”
কবিগুরু নির্ঘাত আমাদের সমসাময়িক যুগে জন্মালে তার ফেইসবুক টাইমলাইনে পোস্ট লিখে ফেলতেন,
“আলো আমার আলো ওগো,আলোয় নেটওয়ার্ক গড়া।
আলোয় ফেইসবুক ভরা,
আমার,আলো হৃদয় হরা”
অপটিক্যাল ফাইবার আবিষ্কার হয়েছে অনেক সময় ধরে বিজ্ঞানীদের অনেক গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে অবশেষে বিশেষ উপায়ে তৈরি কাঁচের অতি সুক্ষ নমনীয়(বাঁকানো যায়,ভেংগে যায় না) তন্তু যা আপনার বা আমার মাথার চুলের সরু অংশের ১০ ভাগের মাত্র এক ভাগ। এই সরু কাঁচের তন্তুর মধ্য দিয়ে অতি সুকৌশলে আলোক রশ্মিকে ব্যবহার করে(কাজে লাগিয়ে)
পুরোপুরি মাইলের পর মাইল অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করিয়ে আলোকরশ্মির মাধ্যমে অতি দ্রুততার সাথে ইন্টারনেটের তথ্য আদান-প্রদান করানো হয়।মানুষের চুলের দশ ভাগের এক ভাগ পুরু এই সুক্ষ কাঁচের নমনীয় চুলগুলি পৃথিবীর মাটি ও সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে সারা দুনিয়ার তথ্য আদান-প্রদান করানোর কাজটিকে নিয়ে এসেছে এক চুটকিতে মোবাইল বা ল্যাপটপের “ওয়ান টাচ এওয়ে” বা “ওয়ান ক্লিক এওয়ে” এর মতোন দ্রুতগতিতে।
কাঁচের সুক্ষ চুলগুলির (অপটিক্যাল ফাইবার) মধ্য দিয়ে অদৃশ্যমান আলো ( যা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না) ইনফ্রারেড আলোর ফোটন কণাকে সুকৌশলে মাইলের পর মাইল প্রেরণ করানো হয়।
কাঁচের চুলগুলি যেই ক্যাবলে থাকে তাকে “অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল” বলে।
অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের গঠনঃ
এর ৩ টি অংশ।

সিংগেল মোড অপটিক্যাল ফাইবারের গঠন
১)কোরঃ এগুলো ডোপড সিলিকা দিয়ে তৈরি,একটি কাঁচের তন্তু একা থাকলে তাকে বলে সিংগেল মোড অপটিক্যাল ফাইবার।
অনেকগুলি শত শত কাঁচের চুল একসাথে গুচ্ছাকারে থাকলে “মাল্টিমোড অপটিক্যাল ফাইবার” বলে।
২) ক্ল্যাডিংঃ
এটি ন্যাচারাল সিলিকা দিয়ে তৈরি কাঁচের বেষ্টনী যা কাঁচের চুলগুলির চারপাশে আবরণের মতোন আবৃত করে রাখে যার মাধ্যমে ভ্রমণ-রত আলোর কণাগুলি বাহিরে যেতে না পেরে “কোন এক বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন করার জন্যে” প্রতিফলিত হয়ে কাঁচের চুলের ভিতরেই পরিপূর্ণভাবে থেকে গিয়ে তারপর মাইলের পর মাইল ভ্রমণ করে।
৩) কোটিংঃএটি প্লাস্টিক দিয়ে বানানো ক্যাবলের বাহিরে অংশ যা বাহিরের প্রতিকূল পরিবেশ থেকে ভিতরের জিনিসগুলোকে রক্ষা করে।
জায়গাভেদে প্রতিকুল পরিবেশে অপটিক্যাল ফাইবারের প্রটেক্টিভ প্লাস্টিক কোটিং এর সাথে আরো অনেক বিশেষ অংশ -ও জুড়ে দেওয়া হয়,বিশেষ করে সমুদ্রের তলদেশের মাটির উপরিভাগের অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলে।
আমি এখানে যেই “কোন এক বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন” উল্লেখ করেছি,সেটা হলো “আলোর পুর্ণ আভ্যন্তরীন প্রতিফলন” বা “টোটাল ইন্টারনাল রিফ্লেকশান”।

আসুন একটি খেলা খেলি।
আপনি যেই রুমে থাকেন,তার সব পর্দা টেনে দিন যাতে বাহির থেকে কোন আলো রুমের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে।ঘর অন্ধকার করে এবার আপনার ড্রেসিং আয়নার সামনে একটি টর্চ নিয়ে দাঁড়ান।আয়নায় টর্চ মারুন। টর্চটা বারবার আয়নার থেকে কাছে বা দূরে নিয়ে বিভিন্ন এংগেলে বা কোণে আয়নায় মারুন।দেখবেন, টর্চের আলোকরশ্মি আয়নায় ভিতরই প্রতিফলিত হয়ে নানা রকম কোণ /এংগেল তৈরি করছে।আপনি আয়নার সামনে অন রাখা টর্চ লাইটের অবস্থান বদলান,দেখবেন আয়নার ভিতরে প্রতিফলিত আলো নানা রকম ছোট বড় কোণ বা এংগেল তৈরি করছে।এই কোণগুলি/এংগেলগুলি নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে আপনি প্রতিফলিত আলোকরশ্মির দিক-ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন।আপনার মাধ্যমে এই টর্চ লাইটের আলো, আয়নায় ফেলার এই সম্পূর্ণ খেলাটিকে বিজ্ঞানের ভাষায়

আলোর পূর্ণ আভ্যন্তরীণ প্রতিফলন

আলোর পূর্ণ আভ্যন্তরীণ প্রতিফলন বা টোটাল ইন্টারনাল রিফ্লেকশান বলে।
তাত্ত্বিক ভাষায় বলতে গেলে, আলো একটি ঘনমাধ্যম(আপনার রুমের আয়না) থেকে, হালকা মাধ্যমে(আপনার রুমের স্পেস এ) যাওয়ার সময় সংকট কোণ বা ক্রিটিক্যাল এংগেল এর চেয়ে বেশি কোণ এ আপতিত হলে,আলোকরশ্মি হালকা মাধ্যমে না গিয়ে সেটা আবার ঘনমাধ্যমে ফেরত আসে।এটিকে আলোর পূর্ণ আভ্যন্তরীণ প্রতিফলন বা টোটাল ইন্টারনাল রিফ্লেকশান বলে।
(স্বাভাবিকভাবে আমরা সবাই জানি,আলোর একটি পরিচিত ধর্ম হলো,আলো যখন একই মাধ্যমে প্রেরিত হয়,তখন আলো সরল রেখায় গমন করে।)আলোর
পূর্ণ আভ্যন্তরীণ প্রতিফলের আরো কতগুলি উজ্জ্বল উদাহরণ হলো মরুভুমিতে সৃষ্ট আলেয়া,আপনার হাতে হিরে বসানো সোনার আংটি থাকলে সেটায় আলো পড়লে হিরে এবং সোনা দুটোই চক চক করা।
এবার ফিরে আসি ফাইবার অপটিক ক্যাবলের তিন অংশের দ্বিতীয় অংশ ক্ল্যাডিং এ।

ক্ল্যাডিং আবরণটির কাঁচের বেষ্টনীতে ন্যাচারাল সিলিকা এবং কিছুটা জার্মেনিয়াম ও বোরন মিশিয়ে এটাকে অপটিক্যাল ফাইবারের চেয়ে তুলনামূলকভাবে হালকা মাধ্যম হিসেবে এমনভাবে তৈরি করা হয় যেনো এক গুচ্ছ কাঁচের চুলের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত আলোকরশ্মি, ক্ল্যাডিং আবরণটিতে শোষিত না হয়ে যায়।ক্ল্যাডিং আবরণটির কারণে আলোর কণা-গুলি কাঁচ-তন্তুর বা “কোর” এর মধ্য দিয়ে প্রেরিত হবার সময় বাউন্স করে (তিড়িং বিড়িং করে লাফায়) মানে,আলোকরশ্মিগুলো এঁকে বেঁকে কোণ তৈরি করার মাধ্যমে একটা জিগ-জ্যাগ রাস্তায় ভ্রমণ করে চলে।ফলে,অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্যে দিয়ে ভ্রমণকারী আলোকরশ্মির পূর্ণ আভ্যন্তরীণ প্রতিফলন বা টোটাল ইন্টারনাল রিফ্লেকশান হয়।এতে করে আলোর কোন লস বা হ্রাস হয় না।এছাড়া-ও প্রয়োজন বুঝে কিছু দূর পর পর অপটিক্যাল ফাইবার কমিউনিকেশনে রিপিটার ও এমপ্লিফায়ার ব্যবহার করা হয়।যাতে আলো মাইলের পর মাইল একই রকম রূপে কোন শক্তির হ্রাস না ঘটিয়েই ভ্রমণ করতে পারে।
মাল্টি মোড ফাইবার অপটিক ক্যাবলের গুচ্ছ কাঁচের বিভিন্ন তন্তুর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন আলাদা রঙ এর আলোকরশ্মি প্রেরণ করা হয়।প্রতিটা আলাদা আলাদা রঙ এর আলোকরশ্মি,আলাদা আলাদা রকমের “ইন্টারনেট তথ্য” বহন করে থাকে।এতক্ষণ যা বলছিলাম,তার সারমর্ম হলো এই যে,মানুষের চুলের পুরুত্বের দশ ভাগের এক ভাগ পুরুত্বসম্পন্ন অতি সুক্ষ কাঁচের নমনীয় একটি চুল(সিংগল মোড হলে) বা অগনিত গুচ্ছাকার কাঁচের নমনীয় চুল বা তন্তুর(মাল্টিমোড অপটিক্যাল ফাইবার হলে) মধ্য দিয়ে অতি সুকৌশলে বিশেষ উপায়ে আলোকরশ্মির পুর্ণ আভ্যন্তরীন প্রতিফলন ঘটিয়ে আলোক রশ্মির সংকেতকে কাঁচের চুলের ভিতর দিয়ে পূর্নাংগ রূপে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ভ্রমণ করানোর মাধ্যমে ইন্টারনেটের তথ্যগুলো ছবি,ভিডিও বা মেসেজরূপে মুহুর্তের মধ্যেই আমাদের কাছে চলে আসে।

এখন প্রশ্ন হলো,আলো কিভাবে তথ্য বহন করে?

আলো ব্যবহার করছে

আলো ব্যবহার করছে
আমাদের কম্পিউটারে যা কিছু আছে, সবই “বাইনারি কোড” এর মাধ্যমে প্রেরিত হয়।বাইনারি কোড হলো অনেকগুলি “জিরো” এবং অনেকগুলি “ওয়ান” এর সমন্নয়ে গঠিত।ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মধ্য দিয়ে প্রেরিত আলোকরশ্মিগুলি মরস কোড /Morse Code ব্যবহার করার মাধ্যমে “জিরো” এবং “ওয়ান” এর বাইনারি সিস্টেমকে উপস্থাপন করে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ,
লাইট সিগনাল অন হলে “ওয়ান”
লাইট সিগনাল অফ হলে “জিরো”
এই লাইট সিগনালের অন/অফ হবার ব্যাপারটা আমাদের জানবার বা বুঝবার চেয়েও অনেক বেশি অবিশ্বাস্য রকম দ্রুত গতিতে ঘটে থাকে।
যখন এই অন/অফ সিগনালটি ফাইবার অপটিক মডেম এ আসে,তখন ফাইবার অপটিক মডেম লাইট এর সিগনালকে ডিজিটাল সিগনালে পরিবর্তিত করে।তখন এই ডিজিটাল সিগনালটি আপনার এবং আমার ল্যাপটপ বা পিসিতে চলে আসে।এভাবেই ফাইবার অপটিক ক্যাবল কমিউনিকেশনের মাধ্যমে ইন্টারনেটে প্রায় আলোর গতিতে তথ্য, ছবি, ভিডিও মেসেজ আদান-প্রদানের সুবিধা পেয়ে আসছি।
প্রথমে বিদ্যুৎ শক্তি থেকে আলোক শক্তি,তারপর আবার আলোকশক্তি পরিবর্তিত হয়ে বিদ্যুৎ শক্তি।

সাবমেরিন ক্যাবলসাবমেরিন ক্যাবলসাবমেরিন ক্যাবলসাবমেরিন ক্যাবলঃ

যে সব ফাইবার অপটিক ক্যাবল সমুদ্রের এক্কেবারে গভীরে সমুদ্রের তলদেশের মাটির উপর দিয়ে বয়ে নিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দূরবর্তী দেশের সাথে ইন্টারনেটের তথ্য আদান প্রদান করানো হয়,তাদেরকে সাবমেরিন ক্যাবল বলে।
এক্ষেত্রে সামুদ্রিক হাংগর বা লবণাক্ত পানি থেকে কাঁচের চুল-গুলিকে বাঁচানোর জন্য ক্ল্যাডিং এর বাহিরের প্রোটেকটিভ জ্যাকেটের বাহিরেও অনেক গুলি স্তর দিয়ে বিশেষ উপায়ে পানি-রোধক সাবমেরিন ক্যাবল তৈরি করা হয়।বিশেষ জাহাজে করে বিশেষ কর্মীরা অনেক রকম টেকনিক্যাল ও মেকানিকেল পদ্ধতি অবলম্বন করে এই কাজের জন্য।

সাবমেরিন ক্যাবল

রিমুটচালিত হাই ডেফিনিশান ক্যামেরাযুক্ত একটি লাংগল সাগরের তলদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সাবমেরিন ক্যাবল সাগরের তলের মাটিতে স্থাপন করার জন্য,আর জাহাজ থেকে ক্যাবল কতটুকু পাঠাতে হবে তা জেনে জাহাজের ক্রু-রা পাঠাতে থাকে।ডুবসাঁতার জানা ডুবুরি এবং একই সাথে “সাবমেরিন ক্যাবল স্পেশালিষ্ট-রা” সাগরের তলদেশের নিচে নেমে ক্যাবল ছিঁড়ে গেলে রিপেয়ার করে সমাধান করে আসে।
এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন,
টেলিকমিউনিকেশনে আগে কপার বা তামার তার ব্যবহার করা হতো,এখন কেন তামার তারের পরিবর্তে অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করা হয়?

অনেক দূর থেকে তথ্য/ উপাত্ত প্রেরণের ক্ষেত্রে তামার তারের চেয়ে অপটিক্যাল ফাইবার অনেক বেশি সুবিধাজনক।কারণ, অপটিক্যাল ফাইবারে “অ্যামপ্লিফায়ার” বা “রিপিটার” ছাড়া ব্যবহার করলেও তথ্যের ক্ষতি খুব কম হয়।এবং এর ডাটা পরিবহন ক্ষমতা এতই বেশি যে এই ক্ষমতা পেতে হাজার হাজার ইলেকট্রিক্যাল লিংক লাগবে শুধুমাত্র একটি অপটিক্যাল ফাইবারকে প্রতিস্থাপন করতে।কাঁচের তন্তু বা চুল, তামার তারের চেয়ে অনেক হালকা।টেলিযোগাযোগে ৭০০ কি. মি. লম্বা তামার তারের ওজন ২০ টন।এই একই ক্যাবল, কাঁচের ফাইবার দিয়ে বানাতে শুধুমাত্র ৭ কেজি কাঁচ লাগবে।অনেকগুলি অপটিক্যাল ফাইবার পাশাপাশি একসাথে অনেক দূরের পথ পাড়ি দিলেও ক্রসটক হয় না,যা কিনা কোন কোন ইলেকট্রিক তারের একটি সমস্যা।কোন স্পার্ক হয় না,তাই দাহ্য কিছুর সাথেও ব্যবহার করা যায়,ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ইন্টারফেরেন্স এবং আনবিক তেজষ্ক্রিয়তা প্রতিরোধ করা যায়, হাই-ভোলটেজ মেশিনারিজেও ব্যবহার করা যায়, কোন ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশান হয় না এবং সংকেত নষ্ট না করে ট্যাপ করা কঠিন, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অনেক জরুরি।

স্যার চার্লস  কে কাও।

আবিষ্কারকঃ
Sir Charles Kuen Kao, উনি চীনের সাংহাইতে ১৯৩৩ সালের ৪ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।উচ্চশিক্ষিত উনি পদার্থবিদ এবং হংকং, আমেরিকায় এবং ব্রিটেনে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন।উনার আমেরিকা, ব্রিটেন এবং হংকং এর নাগরিকত্ব ছিল।উনি দ্রুতগতির অপটিক্যাল ফাইবারের উন্নতিসাধনের জন্য ২০০৯ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন।উনি “গডফাদার অব ব্রডব্যান্ড” নামেই বেশি পরিচিত।
২০০২ সালে তাঁর আলজেইমার ও কথা না বলার রোগ ধরা পড়ে।
২০১৮ সালের ২৩ শে সেপ্টেম্বর উনি পরলোকগমন করেন।
পতন হয় তথ্য-প্রযুক্তি -আকাশের অসাধারণ এক নক্ষত্রের।

চলমান বিজ্ঞানের সাথে বিষ্ময়কর কোন নতুন কিছু আবিষ্কার হলে বিজ্ঞান যেন

বিশেষ একটি নতুন মাত্রা পেয়ে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়।
আমাদের পৃথিবীও যেনো ফাইবার অপটিক ক্যাবল কমিউনিকেশনসের মাধ্যমে ইনফরমেশন টেকনোলজিতে নতুন এক মাত্রা পেয়েছে।
আমাদের ভবিষ্যত বংশধরদের মধ্যেও হয়ত একদিন একজন স্যার চার্লস কে কাও আবার নতুন করে জন্মাবেন।

উনি হয়ত তখন আলোর গতির চেয়েও দ্রুতগতিতে চলতে পারে এমন সুলভ, সবার জন্য ব্যবহারযোগ্য টাইম মেশিন বা টাইম ক্যাপসুলও আবিষ্কার করে ফেলবেন! তখন হয়ত মানুষ ভবিষ্যৎ পাড়ি দিবে।
টাইমমেশিন আবিষ্কারের থিওরি সম্ভব, প্র‍্যাকটিক্যাল এপ্লিকেশান সম্ভব না, কারণ কোন কিছুর গতি আলোর গতির চেয়ে বেশি হলে অতিরিক্ত পরিমাণ তাপশক্তি উৎপন্ন হবে।যাতে সব পুড়ে যাবে।ওই ভবিষ্যত চার্লস কে কাও হয়ত এমন এক ধরণের টাইম মেশিন আবিষ্কার করে ফেলবেন, যাতে তাপশক্তি উৎপন্ন হয় না।
আজ আমার মুখে যা “হয়ত”, আগামীকাল বিজ্ঞানের ভাষায় তা-ই “বাস্তব” হয়ে দাঁড়াবে।
অসম্ভবকে সম্ভব করাই যে বিজ্ঞানের কাজ!
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।

নার্গিস জিনাত

সুত্রঃ Youtube Channel ..Techquickie,Tech For Bangla, Ultimate Tech Hub, টেক দুনিয়া, রঙ বেলুন, Earth Titan, Knowledge Facts Bengali, 10 Minute School, Tutor Vista, Uniclass Content, Learn Engineering, RF BD,
Google Search, Optical Fiber Wikipedia.

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৩৯:৪১   ১৮ বার পঠিত   #  #  #





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar