ad720-90

বিল-মেলিন্ডার বিচ্ছেদের ঢেউ চীনা সামাজিক মাধ্যমে


“বিল গেটসের বিয়ে বিচ্ছেদ” হ্যাশট্যাগটি বুধবারের মধ্যে ‘চীনের টুইটার’ নামে পরিচিত ওয়েইবোতে ৮৩ কোটিরও বেশি ভিউ এবং ৬৬ হাজার পোস্ট তৈরি করেছে। এটি এর আগে আরেক খ্যাতিমান প্রযুক্তি দম্পতি অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এবং ম্যাকেঞ্জি স্কটের ২০১৯ সালে বিয়ে বিচ্ছেদের সময়য়ের নয় কোটি ১০ লাখ ভিউয়ের তুলনায় আকাশচুম্বি বলে মন্তব্য উঠে এসেছে সিএনএন-এর প্রতিবেদনে।

উইবো ব্যবহারকারীরা সবকিছু নিয়েই চিন্তিত। এই দম্পতি কীভাবে তাদের বিশাল সম্পদ ভাগাভাগি করবেন থেকে শুরু করে এই বিচ্ছেদ মাইক্রোসফট বা তাদের দাতব্য সংস্থার ওপর কোনো প্রভাব রাখবে কিনা- সব তাদের আলোচনার বিষয়। দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে এই জুটি বিশ্ব স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য বিমোচন এবং অন্যান্য উদ্যোগের জন্য প্রায় পাঁচ হাজার তিনশ’ কোটি ডলার ব্যয় করেছেন।

ব্লুমবার্গ বিলিওনেয়ার ইনডেক্স অনুসারে বিল গেটসের মোট সম্পদ প্রায় ১৪ হাজার ছয়শ’ কোটি ডলার এবং এই দম্পতি তাদের সম্পদের বেশিরভাগ অংশ দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।

“আপনি এবং মেলিন্ডা সারা বিশ্বের মানুষের জন্য বিশাল অবদান রেখেছেন। এমনকি যদি আপনি ভবিষ্যত জীবনে একসঙ্গে হাত না ধরেন, আমি আশা করি আপনার ফাউন্ডেশন তখনও চালু থাকবে এবং মানব কল্যাণে কাজ করা চালিয়ে যাবে” বিল গেটসের অফিসিয়াল ওয়েইবো অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের নীচে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লিখেছেন এক ব্যবহারকারী।

যদিও বিল গেটস এখন আর মাইক্রোসফট পরিচালনার সঙ্গে নেই, সংস্থাটি বেইজিংয়ের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য কয়েক দশক ব্যয় করেছে। চীনে মাইক্রোসফটের পণ্যের সরব উপস্থিতি রয়েছে, এমনকি অন্যান্য পশ্চিমা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলি তালা ঝোলানোর পরও।

উদাহরণস্বরূপ, চীনে ফেইসবুক বন্ধ থাকলেও মাইক্রোসফটের লিঙ্কডইন চীনা মূল ভূখণ্ডে পাওয়া যায় এমন হাতে গোণা কয়েকটি পশ্চিমা সামাজিক মাধ্যমের অন্যতম। মাইক্রোসফটের বিং সার্চ ইঞ্জিনও চালু রয়েছে সেখানে, অথচ গুগল বছরের পর বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।

ব্যবসার সাফল্য সম্ভবত বিল গেটসের ব্যক্তিগত ইমেজেও প্রভাব রেখেছে। ওয়েইবোতে তার এখন ৪১ লাখেরও বেশি অনুসারী রয়েছে, যা টেসলার সিইও ইলন মাস্কের ১৭ লাখ এবং অ্যাপল প্রধান টিম কুকের ১৪ লাখের যোগফলের চেয়েও বেশি।

বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন ২০০৭ সালে বেইজিং অফিস স্থাপনের পর থেকে চীন সরকারের সঙ্গে এইচআইভি থেকে শুরু করে দারিদ্র্য বিমোচন পর্যন্ত দেশটির বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ প্রকল্পে কাজ করেছে।

বিল গেটস নিজেই ১৯৯০ এর দশকে এক ডজনেরও বেশি বার চীন সফর করেছেন এবং শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৯৪ সালের মার্চ মাসে চীনের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিন তাকে স্বাগত জানান। সেটি চীন আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার পাওয়ার ঠিক আগের ঘটনা।

সে সময় চীন তার অর্থনীতি উন্মুক্ত করা এবং প্রযুক্তিতে পশ্চিমাদের সাথে যোগাযোগে আগ্রহী ছিল। সেই সফরে গেটস জিয়াংকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, মাইক্রোসফট চীনকে তার সফটওয়্যার শিল্প বিকাশে সহায়তা করবে। বিষয়টি চীনের বাজারে দ্রুত সাফল্য পেতে মাইক্রোসফটকেও সহায়তা করেছিল।

২০০৬ সালে গেটস এবং মেলিন্ডা সাবেক চীনা প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওকে ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে তার বাড়িতে নৈশভোজে আপ্যায়ন করেন। গত বছরই চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চিঠি লিখে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমর্থনের জন্য গেটসকে ধন্যবাদ জানান।

এমনকি ২০১৮ সালে ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টি গেটসকে “চীনা জনগণের পুরানো বন্ধু” বলে অভিহিত করে। এই সম্বোধন দেশটির ক্ষমতাসীন দলটি কেবল সেই সব বিদেশীর জন্য ব্যবহার করে যাদেরকে তারা বিশ্বস্ত বন্ধু হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।

কাজেই, অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ওয়েইবোতে বিল গেটসের বিয়ে বিচ্ছেদের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় একজন মন্তব্য করেছেন, “এমনকি আপনারও বিচ্ছেদ হলো। আমাদের বাকিদের কীভাবে আর বিয়েতে আশা থাকতে পারে?”





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar