ad720-90

সখীপুরে কিন্ডারগার্টেনগুলো বন্ধের পথে হুমকি মুখে শিশু শিক্ষাব্যবস্থা


নিজস্ব প্রতিনিধি:  করোনা মহামারির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। পুনরায় কবে চালু করার নির্দেশনা আসবে তা নিশ্চিত বলতে পারছেন না কেউ। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকলেও বন্ধ নেই তাদের মাসিক ভবন ভাড়াসহ নানা খরচ। টাঙ্গাইলের সখীপুরে ভবন ভাড়াসহ বিবিধ খরচের চাপে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এসব স্কুলের পরিচালকরা মনে করছেন ভবনের মালিকপক্ষ উদার না হলে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও বন্ধ হয়ে যাবে অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন। শিক্ষাবিদরা বলছেন, হঠাৎ এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে শিশু শিক্ষা ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক, পরিচালক ও এই খাতে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সখীপুর উপজেলায়  ১৪৫টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। সরকারি নির্দেশনায় বিগত এক বছর তিনমাস ধরে ওইসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পরপরই অভিভাবকরাও স্কুলের বেতন দেওয়া বন্ধ করে দেন। বেতন-ভাতা না পেয়ে বিপাকে পড়েন কিন্ডারগার্টেনে কর্মরত উপজেলার প্রায় দুই হাজার শিক্ষক- কর্মচারী। গুটি কয়েক শিক্ষক বাদে কাজ হারিয়ে এখন তাঁরা সবাই অন্য পেশায় যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে আয়ের উৎস হারিয়ে মহা বিপদে পড়েছেন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পরিচালকরা। উপজেলার প্রায় সব কিন্ডারগার্টেন স্কুলই ভাড়া করা ভবনে পরিচালিত হয়। ভাড়ার চাপে স্কুল ভবন ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন অনেক পরিচালক। ইতোমধ্যে ৩০ টির বেশী কিন্ডারগার্টেন স্কুল স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান অর্ধেক ভাড়া পরিশোধ করে অথবা বকেয়া রেখে নামমাত্র টিকে রয়েছে। প্রতিষ্ঠান পরিচালকরা বলছেন, ‌এই মুহূর্তে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও স্কুল পরিচালনা করা সম্ভব হবেনা। ভবন মালিকরা দীর্ঘ দেড় বছরের ভাড়া ছাড় না দিলে স্কুলের সকল সরঞ্জাম বিক্রি করেও তা পরিশোধ করা সম্ভব নয়।

উপজেলার প্রতিমা বংকী গ্রামের গোল্ডেন লাইফ কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পরিচালক জহির ইকবাল বলেন, গ্রামের মধ্যে দু’টি টিনশেড ঘর ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাই। প্রতিমাসে ভাড়া দিতে হয় ৪ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার টাকার ভাড়া বাকি পড়েছে। প্রতিষ্ঠান খোলা অবস্থায় যে আয় হয়, তাতে শিক্ষকদের বেতন ঠিকমতো দিতে পারি না। তাই ঘর ভাড়ার এত টাকা বাকী পরিশোধ করে পুনরায় স্কুল চালু করা সম্ভব নয়। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে হলেও সহযোগিতার আশা করেন তিনি।

উপজেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আল মামুন। তিনি পৌর শহরে তিনতলা ভবন ভাড়া নিয়ে শাহীন শিক্ষা পরিবারের একটি শাখা পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে ৭৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০০ জন নামমাত্র টিকে রয়েছে। ভবন মালিককে অর্ধেক ভাড়া দিয়ে কোনভাবে বুঝিয়ে-সুজিয়ে রয়েছি। তিনিই উল্টো প্রশ্ন করেন, দেড় বছর ধরে একটি প্রতিষ্ঠানের আয় না থাকলে তা কিভাবে চলবে? এজন্য নিরবে কত প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে তার সঠিক হিসেবই নেই আমাদের কাছে।

উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থনৈতিক দুরবস্থার বিষয়ে সরকারের ভাবা উচিত। দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত এতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একেবারেই বন্ধ হয়ে গেলে অবশ্যই শিশু শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি কেজি স্কুলগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি বর্ধিত কলেবর। হঠাৎ প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেলে দেশের শিশু শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছুটা বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখতে আমরা শিক্ষক ও পরিচালকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ ও সরকারি মুজিব কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ছদরুদ্দীন আহমদ  বলেন, বাসা/ভবন ভাড়াসহ নানা অর্থনৈতিক চাপ সামলে শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে। কিন্ডারগার্টেনগুলো জাতি বা সরকারের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। এই বিশেষ দুর্যোগে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিলে আমাদের জাতি ও দেশও ধ্বংসের দিকে যাবে। তাই সকলের সহযোগিতায় এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে যাঁদের সামর্থ্য রয়েছে, তাঁদের উচিত; সকল প্রকার সহযোগিতা দিয়ে এসব শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চিত্রা শিকারী বলেন, বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা কেজি স্কুলগুলোর জন্যে করোনাকালীন সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। আপাতত প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখতে পরিচালকদেরই মুখ্য ভূমিকা রাখতে হবে। বরাদ্দ এলে অবশ্যই সুষ্ঠু বন্টন করা হবে।

“নিউজ টাঙ্গাইল”র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar