দেশে গুম হওয়া ৩৪ জন ব্যক্তির অবস্থান জানতে জাতিসংঘের চিঠি
লাস্টনিউজবিডি, ০৯ আগস্ট: জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে গুম হওয়া ৩৪ জন ব্যক্তির অবস্থান ও ভাগ্য জানতে চায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল।
জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে পুলিশের বিশেষ শাখা-এসবি (এসসিও-সিকিউরিটি কিয়ারেন্স) হয়ে ওই চিঠি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’ তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ওয়ার্কিং গ্রুপ থেকে ৩৪ জনের বিষয়ে একটি চিঠি এসেছে। এগুলো আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠিয়েছি। তারা যে প্রতিবেদন দেবে, আমরা তা-ই জাতিসংঘে পাঠিয়ে দেবো।’
এদিকে গুম হওয়া ৩৪ ব্যক্তির অবস্থান ও ভাগ্য জানতে চেয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের চিঠি পাঠানোটা একটা বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশের মানবাধিকারকর্মীরা। যদিও তারা মনে করছেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে বা অবস্থান জানতে জাতিসংঘের চিঠি পাঠানোর প্রয়োজন ছিল না। গুম হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। কিন্তু গুমের বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ওয়ার্কিং গ্রুপ এর আগেও গুম হওয়া একাধিক ব্যক্তির অবস্থান ও ভাগ্য সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের পাঠানো সেসব চিঠির কোনও উত্তর দেয়নি। এছাড়া বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় একাধিকবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল উদ্বেগও প্রকাশ করেছে। এমনকি মানবাধিকার কাউন্সিলের ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় কাজ করতে দেশে আসতে চাইলেও বাংলাদেশ সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। উল্টো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নেওয়া বা গুমের ঘটনাগুলো সবসময় অস্বীকার করে আসছে সরকার।
আরও পড়ুন:
- দেশে গুম হওয়া ৩৪ জন ব্যক্তির অবস্থান জানতে জাতিসংঘের চিঠি
- টাইগারদের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন
- বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এবার যেহেতু জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ওয়ার্কিং গ্রুপ একটি বড় তালিকা পাঠিয়েছে এবং সেটি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে, এবার অন্তত প্রকৃত সত্যটা উঠে আসা উচিত। কিন্তু চিঠির প্রত্যুত্তর যেন শুধুই ‘আইওয়াশ’ না হয় সেটি লক্ষ রাখতে হবে।
ঢাকার পুলিশ কমিশনারের কাছে ৩৪ জনের তালিকা সংবলিত যে চিঠি পাঠানো হয়েছে, সেখানে তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের পিসি/পিআর (আগের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য) উল্লেখসহ সিডিএমএস (ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) যাচাই করে চারটি প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলরের ওয়ার্কিং গ্রুপের পক্ষ থেকে যেসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছে, তা হলো—গুমের অভিযোগগুলো সত্য কি না? সত্য না হলে প্রকৃত ঘটনা কী? সরকার এসব বিষয়ে প্রতিকারের জন্য কী ব্যবস্থা নিয়েছে? এসব ঘটনায় গুরুত্ব দিয়ে স্বাধীন ও পক্ষপাতহীন তদন্ত হয়েছে কিনা? গুম হওয়া ব্যক্তিদের অবস্থান ও ভাগ্য জানতে কী ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার? এবং গুম হওয়া ব্যক্তিবর্গ ও তাদের পরিবারের জন্য কী ধরনের প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলরের ওয়ার্কিং গ্রুপের পাঠানো গুম হওয়া ৩৪ জনের বিস্তারিত পরিচয় ও তাদের গুম হওয়ার সময়কার বর্ণনা এবং এ সংক্রান্তে থানা পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে অভিযোগ দেওয়ার বিস্তারিত প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে। তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা হলো—মোহাম্মদ চৌধুরী আলম, সাজেদুল ইসলাম, মোহাম্মদ আব্দুল কাদের ভূঁইয়া, মো. কাউসার হোসেন, মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, আল আমীন, সোহেল রানা, মোহাম্মদ হোসেন চঞ্চল, পারভেজ হোসেন, মো. মাহফুজুর রহমান, জহিরুল ইসলাম, নিজাম উদ্দিন, মীর আহমাদ বিন কাশেম, মাহবুব হাসান সুজন, কাজী ফরহাদ, সম্রাট মোল্লা, তপন দাশ ওরফে তপু, কে এম শামীম আক্তার, খালেদ হাসান সোহেল, আব্দুল্লাহ আজমি, এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন, মো. হাসিনুর রহমান, রাজু ইসলাম, ইসমাইল হোসেন, মো. তারা মিয়া, মোহাম্মদ নূর হোসেন, মোহন মিয়া, ইফতেখার আহমেদ দিনার, মো. ইলিয়াস আলী, আনসার আলী, কেইথিলপাম নবচন্দ্র, সেলিম রেজা পিন্টু ও জাহিদুল করিম।
নথিপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, ওয়ার্কিং গ্রুপের পাঠানো ৩৪ জনের সম্পর্কে যে পৃথক প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে, তাতে গুমের শিকার বেশিরভাগকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া এই ৩৪ জনের মধ্যে একজন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের সাবেক কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গুম হওয়া একজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকায় জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আজম ও সাবেক নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাশেম আলীর সন্তানের নামও রয়েছে। এদের প্রত্যেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।
লাস্টনিউজবিডি
সর্বশেষ
- এবার টিকা না নেওয়ায় কর্মচারীদের বেতন বন্ধ করলেন মেয়র
- দেশে গুম হওয়া ৩৪ জন ব্যক্তির অবস্থান জানতে জাতিসংঘের চিঠি
- টাইগারদের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন
- বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন
- আজও রাজধানীতে ২৫১ জনকে গ্রেপ্তার
The post দেশে গুম হওয়া ৩৪ জন ব্যক্তির অবস্থান জানতে জাতিসংঘের চিঠি appeared first on Lastnewsbd.com.
Comments
So empty here ... leave a comment!