ad720-90

২১ এর চেয়ে আরও ভয়ংকর হবে ২০২২


জলবায়ু সংকট, করোনা মহামারি এবং কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে উত্তেজনা লেগেই ছিল ২০২১ সালে। একই দশা চলবে সামনের বছরেও। আসছে ১২ মাসও সংকট-সংঘাত নিয়ে কাটাবে বিশ্ববাসী। বারবার চোখ রাঙানো কোভিড-১৯ মহামারি, জলবায়ু জরুরি অবস্থা, গণতন্ত্র এবং কর্তৃত্ববাদের, মানবিক সংকট, গণঅভিবাসন এবং বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস আরও বিপজ্জনক করে তুলতে পারে ২০২২ সালকে। প্রাণঘাতী স্বায়ত্তশাসিত অস্ত্রের বিস্তারের দরুন মানবেতর পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়।

মধ্যপ্রাচ্যের হটস্পট : সমালোচকদের মতে মধ্যপ্রাচ্যে আলোচনার হটস্পট হতে পারে লেবানন। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে দেশটি। বিশৃঙ্খলার চূড়ান্তে পৌঁছবে লিবিয়া। ইসরাইল-ফিলিস্তিনের দিকেও নিবিড় মনোযোগ থাকবে বিশ্ববাসীর-যেখানে রয়েছেন মাহমুদ আব্বাসের মতো একজন অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট। ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের সঙ্গে সহিংসতা, পশ্চিম তীরের জমি দখল শান্তি প্রক্রিয়ার অভাব আরও প্রকট করতে পারে।

ভারত-চীন সম্পর্ক অবনমন : ভারত চীনের সবচেয়ে বড় আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী। অনুমান করা হচ্ছে শিগগিরই ভারতের জনসংখ্যা চীনের ১.৪১ বিলিয়নকে স্পর্শ করতে কিংবা ছাড়িয়ে যেতে পারে। দুটি বিশাল প্রতিবেশীর মধ্যে অমীমাংসিত হিমালয় সীমান্ত বিরোধ আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। পশ্চিমের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শক্তিশালী সম্পর্কের নীতি বিশেষ করে চতুর্ভুজ জোট কোয়াড (ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া) চীনের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছে।

এশিয়া অঞ্চলে ক্ষুধার রাজ্য : ক্ষুধার রাজ্য হিসাবে পরিচিত হবে এশিয়ার কয়েকটি দেশ। মিয়ানমারের সহিংস দমন-পীড়ন, তালেবান দখলের পর আফগানদের দুর্দশা পশ্চিমাদের দয়াপরবশ হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে আফগানিস্তান। কিম জং-উনের প্যারানয়েড শাসনযুদ্ধ এবং শান্তি সম্পর্কে মিশ্র সংকেত থাকলেও দেশটিতে ক্ষুধা আর দারিদ্র্য জনগণের নিত্যসঙ্গী। উপরন্তু তাদের পারমাণবিক শোডাউন দেশটিকে আরও গভীর সংকটে ফেলতে পারে।

ম্যাক্রোঁর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ : ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হবে ২০২২ সাল। ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বর্ণবাদী, ইসলামোফোবিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে এগিয়ে যেতে হবে। জরিপ তাকে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য এগিয়ে রাখলেও তিনি মধ্য মধ্য-ডান রিপাবলিকানদের কাছ থেকে একটি বাধার সম্মুখীন হতে পারেন। সুইডেন, সার্বিয়া এবং অস্ট্রিয়াতেও নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।

ক্ষমতা হারাতে পারেন বলসোনারো : অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে ব্রাজিলের কুখ্যাত ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে হারাতে এক মহাকাব্যিক লড়াই হবে বলে মনে হচ্ছে। দেশটির অভ্যন্তরে কোভিড মহামারিটির প্রতি মারাত্মক অবহেলা বলসোনারোকে দেশে তো বটেই, বিশ্বব্যাপীও নিন্দিত করেছে। কোভিডে মারা গেছেন পাঁচ লক্ষাধিক ব্রাজিলিয়ান। তা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনে অস্বীকার এবং আমাজন রেইনফরেস্টের ধ্বংস ত্বরান্বিত করায় ব্যাপকভাবে সমালোচিত বলসোনারো সহজেই হেরে যাবেন বলে জানিয়েছে একটি জরিপ। তবে বলসোনারো ‘সহজে হারবেন না’ বলে নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতারও আশঙ্কা করছেন অনেকে।

বাইডেনের বয়স হবে ৮০ বছর : ২০২২ সালে ডেমোক্র্যাটদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হতে পারে দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজন। জো বাইডেন ২০২৪ সালের নির্বাচনে আবার অংশ নিচ্ছেন কি-না তা নির্ভর করবে তার মানসিক তৎপরতা এবং এজেন্ডা সরবরাহের ক্ষমতার ওপর। কারণ, নভেম্বরে তার বয়স হবে ৮০ বছর। এ ছাড়া মাইক্রোস্কোপের নিচে রয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস-যাকে বলা হচ্ছে অস্থির এবং কম পারফর্মিং। ইউক্রেন হবে আফগানিস্তানের মতো বাইডেনের আরেকটি বড় বৈদেশিক নীতি বিপর্যয়। যেমন ইউক্রেনে একটি রাশিয়ান ভূমি দখল, তাইওয়ানের বিরুদ্ধে সরাসরি চীনা আগ্রাসন বা ইসরাইল-ইরান সংঘাত-মার্কিন বাহিনীকে চুষে ফেলার এবং প্রেসিডেন্ট হিসাবে বাইডেনকে বিতাড়িত করার প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে।

করোনা ধকলে বিপর্যয় ঘটবে আফ্রিকার : দৈত্যাকার মহাদেশ আফ্রিকাজুড়ে করোনার ধকল চলবে ২০২২ ব্যাপী। আফ্রিকানরা এখনো অনেকটাই টিকাবিহীন। উন্নত বিশ্বের ভ্যাকসিনের একচেটিয়াকরণ, উদ্বৃত্ত বিতরণ এবং পেটেন্ট ভাগ করতে অনীহার কারণে মহামারীটি মহাদেশটিতে গোপন মারণাস্ত্রে পরিণত হতে পারে করোনা মহামারি। অর্থনৈতিকভাবে এই পঙ্গু মহাদেশটি আরও পঙ্গু হতে পারে, নেমে আসতে পারে মানবিক বিপর্যয়। ওমিক্রনের আকস্মিক বিস্তার এই মহাদেশে আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করে আবির্ভূত হতে পারে। এ ছাড়া ২০২২ সালে আফ্রিকার আড়াই কোটি মানুষ এইচআইভি-এইডস নিয়ে বসবাস করবে বলে অনুমান করা হয়েছে। সাধারণভাবে আফ্রিকায় ম্যালেরিয়া মারা যায় বছরে চার লাখ মানুষ। এ ছাড়া যক্ষ্মা এবং ডায়াবেটিস তাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে।

ঝুঁকিতে আরও ২০ দেশ : দাতব্য সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির ২০২২ জরুরি নজরদারি তালিকা অনুসারে মানবিক সংকট আরও খারাপ হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ২০টি দেশের মধ্যে ১২টি আফ্রিকায়। তারা হলো ইথিওপিয়া, দক্ষিণ সুদান, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, সোমালিয়া, সুদান, নাইজেরিয়া, বুরকিনা ফাসো, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, মোজাম্বিক, মালি, নাইজার ও ক্যামেরুন। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অ-আফ্রিকান দেশগুলো হলো-আফগানিস্তান, ইয়েমেন, সিরিয়া, মিয়ানমার, হাইতি, হন্ডুরাস, লেবানন এবং ভেনিজুয়েলা।

স্যাটেলাইট-ক্ষেপণাস্ত্র-নাসা : ২০২২ সালে মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা ত্বরান্বিত হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন সবাই নতুন অস্ত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। রাশিয়া ২০২১ সালের শেষের দিকে একটি অ্যান্টি-স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্রের বেপরোয়া পরীক্ষার মাধ্যমে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। তা ছাড়া ক্ষেপণাস্ত্রের ‘নিয়মিত সদস্য’ উত্তর কোরিয়া তো রয়েছেই। অন্যরা এটি অনুসরণ করবে, সম্ভাব্য বিশ্বব্যাপী যোগাযোগকে হুমকির মুখে ফেলবে।

অব্যাহত থাকবে নিপীড়ন : কিউবা, নিকারাগুয়া, হাইতি এবং ভেনিজুয়েলায় জনগণের কথিত নেতারা তাদের নিপীড়ক হয়ে উঠেছে এবং তা অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে। চিলিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রথম রাউন্ড জোসে আন্তোনিও কাস্তের জন্য জোরালো সমর্থন তৈরি করেছিল, একজন কট্টর-ডান পিনোচে ক্ষমাপ্রার্থী, যদিও তিনি শেষ পর্যন্ত একজন বামপন্থি সাবেক ছাত্রনেতা গ্যাব্রিয়েল বোরিকের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

“নিউজ টাঙ্গাইল”র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar