ad720-90

বিশেষ সময়েও জীবন হোক স্বাভাবিক ……….শারমিন সোমা


পিরিয়ড মেয়েদের জীবনে খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। বলা উচিত শরীরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি না হলেও সমস্যা আবার বেশি হলেও সমস্যা। তবে এই সময় আগেকার যুগের নারীরা একেবারেই অন্তরালে থাকতেন কিংবা দৌড়াদৌড়ি করতেন না, শান্ত থাকতেন। তবে বদল ঘটেছে, পাল্টেছে সময়- বেশ কিছু পরিবর্তনে দেখা গেছে এখন বেশিরভাগ নারীই খুব স্বাভাবিক আচরণ করেন। তবে ভাগ রয়েছে- একদল যত অস্বস্তিবোধ করুক, নিজেদের প্রতিদিনের ব্যায়াম তারা করবেই আবার অনেকেই আছে যারা শুধুই যন্ত্রণা অনুভব করেন, হাত-পা নাড়াতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তবে আদৌ এই সময় শরীরচর্চা কিংবা ব্যায়াম করা যায়?

ভারতীয় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক লীনা এন শ্রীধর বলেন, এই সময় বাধা ধরা বলে কিছুই নেই! আপনি চাইলে সব কিছু করতে পারেন এমনকি ব্যায়ামও। তবে খুব কঠিন কিছু নয়, হালকা এবং শরীরের ক্ষতি করবে না এমন কিছু অবশ্যই করতে পারেন।

সেগুলোর মধ্যে-

হাঁটা এবং দৌড়ানো

এই অভ্যাসটি সবার থাকা উচিত। অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা প্রয়োজন। এতে হৃদরোগ, প্রেসার এবং সুগারের সমস্যা দূর হতে পারে। যদি পিরিয়ডের মাত্রা বেশি হয়, তবে একটু ভাবনাচিন্তা করা উচিত এবং হাঁটা তাদের পক্ষে ভালো প্রমাণিত হতে পারে। এ সময় ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন এর মাত্রা সমস্যা সৃষ্টি করে, আপনাকে অলস করে তুলতে পারে এবং হালকা জগিং করতে পারেন। এতে শরীরের প্রদাহ কমতে পারেন।

যোগ ব্যায়াম

এ সময় স্ট্রেস সাংঘাতিক থাকে। তাই মুডসুইং সহজেই হতে পারে। যোগ ব্যায়াম খুব ভালো বিষয়। এটি শরীরকে ভারমুক্ত রাখে এবং তার সঙ্গে মানসিকভাবে সুস্থ থাকতেও সাহায্য করে। প্রতিদিন অভ্যাস করলে চিন্তা, রাগ এবং ডিপ্রেশন সব কমতে থাকে। পরবর্তীতে রিলাক্সে থাকতে গেলে যোগ ব্যয়াম করা খুব ভালো।

সাঁতার

সাঁতারও কাটতে পারেন। পিরিয়ডের সময়ে খুব স্বাভাবিক নিয়মে সাঁতার সম্ভব। এ সময় সাঁতার সবচেয়ে বেশি উপকারি শরীরচর্চা। এতে শরীর ভালো থাকবে এবং পিরিয়ডকালীন সমস্যা কমবে।

নাচ-গান

গান কিন্তু মন ভালো করতে পারে। নাচ অন্যতম পছন্দ হলে তা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনি জুম্বা ক্লাসে যান কিংবা বল ক্লাস। এতে আপনার ফ্লেক্সিবল ভাব বাড়তে থাকে। আপনার মেজাজ ভালো হতে থাকে এবং ক্যালরি কমতে থাকে। অ্যারোবিক কিংবা জুম্বা ক্লাস থেকে ব্যথা এবং ভারী ভাব কমে থাকে।

স্ট্রেচিং

যদি কোনোরকম শরীরে অসুবিধা হতে থাকে তখন স্ট্রেচ কিংবা টুইস্ট করতে পারেন। বসে প্রণামের ভঙ্গিতে ব্যায়াম করতে পারেন। অনুলোম বিলোম করতে পারেন। পেশিগুলোকে স্বতন্ত্র করতে শিখুন। নিজের শরীরের আড়ষ্ট ভাব কমাতে হবে। কোবরা স্ট্রেচ, ট্রাঙ্ক রোটেশন, হাঁটু স্ট্রেচ- এগুলো ট্রাই করতে পারেন। এ সময় বসে না থেকে বরং নিজেকে শারীরিকভাবে চালনা করতে শিখুন।

পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্যবিধি

নিয়মিত গোসল করা, সময়মতো অন্তর্বাস পরিবর্তন, একই প্যাড বারবার ব্যবহার না করা। প্রতি ৪-৬ ঘণ্টা অন্তর প্যাড পরিবর্তন করা। ওয়ার্কআউটের পর জামা-কাপড় দ্রুত পরিবর্তন এবং পরিষ্কার করা উচিত।

খাবার

প্রতি বেলার খাবারে রাখুন সবুজ শাকসবজি ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। কোনো পানীয় নয়, শুধু পানি। চা, কফি, কোলা ইত্যাদি দিয়ে এই ঘাটতি পূরণ হবে না। ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়ামযুক্ত খাবার খান। মিষ্টিকুমড়ার বিচি, হোল  গ্রেইন খাবার, কলা, মিষ্টি আলু, বিনস, অ্যাভোকাডো ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়ামের অন্যতম উৎস। কলা পটাশিয়ামের অন্যতম ভান্ডার। ভিটামিন বি১২ ও ভিটামিন বি৬ পেট ফাঁপা এবং মুড পরিবর্তন রোধ করে। ব্রকলি, টমেটো, লেবু, কমলা, কর্ন, ডিম, আখরোট, চিয়া বীজ ইত্যাদি ভিটামিন বি১২ ও বি৬ সমৃদ্ধ খাবার। শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে খান- মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, কচুশাক, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, ফুলকপির পাতা, ছোলাশাক, ধনেপাতা, তরমুজ, কালো জাম, খেজুর, পাকা তেঁতুল, আমড়া ইত্যাদি। রক্তশূন্যতা কমানোর জন্য লাল মাংস খুব প্রয়োজন।

পিরিয়ডের সময় ভিটামিন সিযুক্ত ফল শরীরের জন্য অনেক উপকারি। পেয়ারা, আমড়া, আমলকী, লেবু, মাল্টা, জলপাই, জাম্বুরা, পাকা টমেটো, কামরাঙা, পাকা পেঁপে, আনারস ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন সি পাওয়া যায়। দুধজাতীয় খাবার, পনির, টোফু, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ সয়া মিল্ক, কাঁটাযুক্ত মাছ ইত্যাদি ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার পেশিব্যথা, পেটব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। পিরিয়ডের সময়টাতে ডাল, ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন। এ ছাড়া কুমড়ার বিচি, গমের বীজ, শুকনা ভাজা সূর্যমুখীর বীজসহ নানা ধরনের বীজ রাখতে পারেন খাবারের তালিকায়। এতে রয়েছে ভিটামিন ই, যা ঋতুস্রাবের ব্যথা হ্রাস করে।

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

“নিউজ টাঙ্গাইল”র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar