ad720-90

সেই ফাহিম পেলেন কম্পিউটার


ফাহিমুল করিমবেশ কিছুদিন ধরে ফাহিমের ল্যাপটপটি ঠিকমতো কাজ করছিল না। একটি কমান্ড দিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছিল মিনিটখানেক। এতে ফাহিমের গ্রাফিকস ডিজাইনের কাজে বেশ সমস্যা হচ্ছিল। সম্প্রতি বিছানাবন্দী এই ফ্রিল্যান্সারকে দেখতে গিয়ে তাঁর সমস্যার কথা জানতে পারেন মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান। তখনই ফাহিমের চাহিদামতো একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। আজ রোববার সেই কম্পিউটার ফাহিমের হাতে তুলে দেন জেলা প্রশাসক আলী আকবর।

রোববার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে চলছিল জেলার উন্নয়ন সমন্বয় বৈঠক, যেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলার সব বিভাগের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা। সেই বৈঠকের মাঝেই ডাকা হয় ফ্রিল্যান্সার ফাহিমুল করিমকে (২১)। হুইল চেয়ারে করে ফাহিমকে সেখানে নিয়ে যান মা হাজেরা খাতুন ও বোন ফারিহা। সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে ফাহিমের কথা শোনেন ও তাঁর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হওয়া সভায় নিজের সফলতার পেছনের গল্প শোনান ফাহিম। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা এই তরুণ জানান, ডুচেনেমাসকিউলার ডিস্থ্রপি নামে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সাল থেকে বিছানাবন্দী তিনি। হাতের দুটি আঙুল ছাড়া শরীরের আর কিছুই চলে না। তবে মনোবল হারাননি। বিছানায় শুয়ে নিজের চেষ্টায় হয়ে উঠেছেন গ্রাফিকস ডিজাইনার। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আপওয়ার্ক ও ফাইভারে কাজ করা এই ফ্রিল্যান্সার জানান, তাঁর কাজের জন্য বায়ারকে প্রতি ঘণ্টায় দিতে হয় আট ডলার করে। বাংলাদেশে এই খাত এগিয়ে নেওয়ার জন্য ইন্টারনেটের গতি বাড়ানো ও পেপাল সুবিধা চালুর জন্য সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান এই তরুণ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সুফিয়ান বলেন, ফাহিম এমনই এক বিস্ময় বালক যে কিনা তাঁর শারীরিক অক্ষমতাকে হার মানিয়ে সফল ফ্রিল্যান্সার হয়ে উঠেছেন। তিনি এখন দেশের লাখো তরুণের অনুপ্রেরণা। ডুচেনেমাসকিউলার ডিস্থ্রপিতে আক্রান্ত এই তরুণের বিষয়ে মাগুরা সিভিল সার্জন প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, ওকে দেখে বোঝা যাচ্ছে ওর কোষগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। এখন ওর চিকিৎসা জরুরি। তাতে সে সম্পূর্ণ সুস্থ না হলেও যাতে আর অবনতি না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা যেতে পারে। ওই চিকিৎসক বলেন, প্রথমে ফাহিমকে নিউরোমেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখাতে হবে। তারপর তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এর জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন সিভিল সার্জন।

সভায় ফাহিমকে আইটি প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাহিদুল আলম। তিনি বলেন, ওর যে প্রতিভা আছে তা কাজে লাগাতে পারলে অনেক তরুণ-যুবক উপকৃত হবে। শারীরিকভাবে অক্ষম এই ফ্রিল্যান্সারকে সাধ্য অনুসারে সহযোগিতার আশ্বাস দেন জেলা প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকর্তা বাবলুর রহমান। এ ছাড়া ফাহিমের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মহম্মদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আবু আব্দুল্লাহেল কাফিসহ কয়েকজন। ফাহিমের চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে আহ্বান জানান তাঁরা।

বিছানাবন্দী জীবন থেকে সফল ফ্রিল্যান্সার‘ গত ২৪ মার্চ এই শিরোনামে ভিডিওসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় প্রথম আলো অনলাইনে।

জেলা প্রশাসক আলী আকবর বলেন, প্রথম আলোয় ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর ফাহিমের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। প্রতিমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে মাগুরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এর পাশাপাশি ফাহিমের চিকিৎসার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন জেলা প্রশাসক আলী আকবর।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar