ad720-90

চর্বিযুক্ত খাবারে ঘটছে লিভারের সর্বনাশ


ফাস্ট ফুডের দিকে ঝুঁকে পড়ছে মানুষ। দেশে গত কয়েক বছরে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে এমন পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো। রাজধানীর নামিদামি মার্কেট, আন্তর্জাতিক চেন রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে অলিগলি, এমনকি দেশের শহরাঞ্চলে ফাস্ট ফুডের দোকান। অতি তৈলাক্ত, চর্বিযুক্ত ও অতিমাত্রায় লবণ ও বিটলবণ ব্যবহার করে নানা দেশি-বিদেশি রেসিপির খাবার পরিবেশন করে এ দোকানগুলো। আর এ খাবারের চাহিদাও ব্যাপক। মুখরোচক হওয়ায় এখন ঘরে ঘরে এসব ফাস্ট ফুড বানানোর প্রচলন শুরু হয়েছে।

বিশেষ করে শিশু ও নারীদের এসব খাবারের প্রতি ঝোঁক বেশি। আর এসব ফাস্ট ফুডই এখন ভয়ানক বিপদ বয়ে এনেছে বাংলাদেশের জন্য। লিভারের মারাত্মক সব রোগের ঝুঁকির জন্য বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন এমন অস্বাস্থ্যকর খাদ্যকে। এসব অস্বাস্থ্যকর খাদ্য থেকে ফ্যাটি লিভার, লিভার সিরোসিস, এমনকি লিভার ক্যান্সার পর্যন্ত হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে ৩০ শতাংশ বা সাড়ে চার কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। এর চেয়েও আরো ভয়ের তথ্য হলো—এই ফ্যাটি লিভারে আক্রান্তদের মধ্যে ৩৬ থেকে ৫৪ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়েছে অস্বাস্থ্যকর খাবারজনিত লিভারের রোগ বা নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়েটোহেপাটাইটিসে (ন্যাশ)। রোগটির পরিচিতি নতুন হলেও বিশ্বব্যাপী এই ন্যাশ এখন মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে একইভাবে বিস্তার ঘটছে ন্যাশের। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আজ বুধবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো পালিত হচ্ছে ‘ইন্টারন্যাশনাল ন্যাশ ডে-২০১৯’।

দেশের খ্যাতিমান লিভার রোগের বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ হেপাটোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মবিন খান বলেন, শিশু-কিশোর, মধ্যবয়সী ও নারীদের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। ন্যাশ প্রাথমিকভাবে লিভার কোষে প্রদাহ শুরু করে। পরে লিভার সিরোসিসের দিকে এগোয়। এত দিন লিভার সিরোসিসের প্রধান কারণ হিসেবে হেপাটাইটিস বি, সি এবং অ্যালকোহলকে দায়ী করা হলেও এখন লিভার সিরোসিসের প্রধান কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে এই ন্যাশ।

বাংলাদেশ ফোরাম ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভারের চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, ‘লিভারে অ্যালকোহলবিহীন চর্বির আধিক্যের কারণে ন্যাশ হয়ে থাকে। ন্যাশ আমাদের জন্য এখন বড় সর্বনাশ হয়ে এসেছে। এ থেকে বাঁচতে হলে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। খাদ্যাভ্যাস পরির্বতন করতেই হবে। ফ্যাটি লিভার থেকে রক্ষায় তৈলাক্ত, চর্বিযুক্ত অতিমাত্রায় লবণ দিয়ে তৈরি খাবার পরিহার ছাড়া কোনো গতি নেই। লিভার সুস্থ রাখতে চাইলে ওজন ও স্থূলতাকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

বিশেষজ্ঞরা জানান, ন্যাশের চিকিৎসা নিয়েও কাজ চলছে। এ ছাড়া যারা ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত তাদের অতি সতর্ক থাকার মাধ্যমেও ন্যাশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। দ্রুত ওজন কমিয়ে এবং স্বাস্থ্যসম্মত ওজন ও ডায়েটের মাধ্যমে ন্যাশ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ ছাড়া ডাক্তার ও ফার্মাসিউটিক্যালস কম্পানি এ রোগের চিকিৎসার আরো উদ্ভাবনীর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা এরই মধ্যে একটি ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা করছে আশা করা হচ্ছে ২০১৯ সালের মধ্যে এ ওষুধটি অনুমোদন পাবে। যদি কারো ডায়াবেটিস ও স্থূলতা থাকে, তাহলে সে ন্যাশের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে, কিন্তু ঘাবড়ানোর কারণ নেই। ডায়াবেটিস ডায়েট অনুসরণ করে ন্যাশের ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব।

বারডেমের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমাদের দেশে হেপাটাইটিস বি আক্রান্তের সংখ্যা ৪ থেকে ৭ শতাংশ, হেপাটাইটিস সি ১ শতাশং আর ন্যাশ ১২ থেকে ১৭ শতাংশ। বাংলাদেশেও লিভার ট্রান্সপ্লান্টের দ্বিতীয় কারণ ন্যাশ। আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরে সারা বিশ্বে লিভার ট্রান্সপ্লান্টের প্রধান কারণই হবে ন্যাশ। লিভার সিরোসিসের ১২ থেকে ১৩ শতাংশের লিভার ক্যান্সার হয়। তবে ন্যাশ সিরোসিস রোগে ক্যান্সারটা অতি তাড়াতাড়ি আরম্ভ হয়। আর ন্যাশ সিরোসিসে লিভার ক্যান্সার হয় মাল্টিফ্যাকটরিয়াল।

আইসিডিডিআরবি সিনিয়র ডিরেক্টর (নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস) ড. তাহমিদ আহম্মেদ বলেন, বাংলাদেশে নারীদের অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতার হার দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে; যা ন্যাশ বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে ১৯৯৬ সালে দেশে অতিরিক্ত ওজনের নারী ছিল মাত্র ৩ শতাংশ। সেটা এখন দাঁড়িয়েছে ২৪ শতাংশে। এটা শুধু উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে নয়, যদি ঢাকার বস্তিগুলোতে যাওয়া যায়, তাহলেও দেখা যাবে অনেক মহিলাই অতিরিক্ত ওজনের। ওভারওয়েট, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, অবিসিটি সবই ন্যাশের ঝুঁকি বাড়ায়।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar