ad720-90

সূর্য মরে গেলে পৃথিবীর কী হবে


আমাদের সোলার সিস্টেম এর মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সূর্য । আর এই সোলার সিস্টেম অথবা সৌরজগত এর তিন নম্বর গ্রহ হিসেবে রয়েছে আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী। আর সেই হিসেবে সূর্য আমাদের সবচাইতে নিকটবর্তী একটি নক্ষত্র। আর এই পৃথিবীর সমস্ত শক্তির উৎস এই সূর্যই। সূর্যই পৃথিবীর প্রাণভোমরা। কিন্তু কখনো কী ভেবেছেন এই সূর্য যদি মরে যায়, কিংবা ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে কী ঘটবে পৃথিবীর ভাগ্যে? যদি এই সোলার সিস্টেম থেকে হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায় সূর্য? 

পৃথিবীতে সকল প্রকার জীব এবং উদ্ভিদকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সূর্যের কোনো বিকল্প নেই। মূলত সূর্যের জন্যই আমাদের পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব এখনও টিকে আছে। সূর্য উপর থেকে পৃথিবীতে আলো বিকিরণ করার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রাকে একটি সহনশীল মাত্রায় রাখে। আর যার ফলে আমরা জীব থেকে শুরু করে উদ্ভিদ সবাই আমাদের সকল রকম জৈবিক কার্যকলাপ খুবই সুস্থভাবে পালন করতে পারছি। কেবল মাত্র সূর্যের জন্য সকল প্রকার উদ্ভিদ ফটোসিনথেসিস তথা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৌরআলোকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে নিজের খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করছে এবং আমাদের জন্য বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ত্যাগ করছে। তো বন্ধুরা, চলুন এবার জানি যদি এই সূর্য আমাদের থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় বা হারিয়ে যায় তাহলে কি হবে?

সূর্য পৃথিবী থেকে প্রায় ৩,৩৩,০০০ গুন ভারী আর এটা প্রতি সেকেন্ডে ১০০ বিলিয়ন হাইড্রোজেন বোমার সমান শক্তি তৈরি করে। আর এর প্রবল আকর্ষণ বল দিয়েই এটা পৃথিবীসহ আটটি গ্রহকে তাদের কক্ষপথে ধরে রেখেছে। তাহলে চিন্তা করে দেখুন সূর্য না থাকলে আমাদের কী হবার কথা!
বিজ্ঞানীদের মতে, সূর্য হঠাৎ গায়েব হয় গেলে সৌরজগতের গ্রহগুলো সব ছিটকে মহাশূন্যে হারিয়ে যাবে। পাশাপাশি এদের মাঝে সংঘর্ষ হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়।

সূর্য কিন্তু আমাদের আলোরও প্রধান উৎস। কিন্তু আলোর ব্যাপারটি একটু ভিন্ন। কারণ এত বেশি গতিতে চলার পরেও বিশাল দূরত্ব পাড়ি দিয়ে সূর্য থেকে আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে প্রায় ৮ মিনিট লেগে যায়। তাই মজার ব্যাপার হল ঠিক এই মুহূর্তে সূর্য বিলীন হয়ে গেলে তা আমাদের চোখে দেখে বুঝতে ৮ মিনিট সময় লেগে যাবে। মানে ৮ মিনিট পর বুঝবো যে সূর্য নেই। অবশ্য তার আগেই গ্রহগুলো ছিটকে গিয়ে একটা হুলস্থূল কাণ্ড ঘটে যাবে।

তবে অন্য কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে শুধু আলোর অভাবে আমাদের তৎক্ষণাৎ কোন সমস্যা হবে না। কারণ ইলেকট্রিসিটি থাকবে এবং পাশাপাশি তারাগুলো তখনও কিছুটা আলো দিবে। এমনকি বৃহস্পতি গ্রহকেও প্রায় ১ ঘণ্টার মত দেখা যাবে (কারণ বৃহস্পতি থেকে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে আসতে আসতে কিছুটা সময় নেবে। এই সময়ের পার্থক্যের কারণে সূর্য হারিয়ে গেলেও ঠিক আগের মুহূর্তের আলোটুকু এই পথ ঘুরে আসতে যে সময় দরকার সেই সময়টা বৃহস্পতিকে দেখা যাবে)।
কিন্তু পৃথিবীতে বিপত্তি ঘটবে ৮ মিনিট পর। কারণ, সূর্যের আলো ছাড়া সালোকসংশ্লেষণ হবে না।

তাই ছোট উদ্ভিদগুলো খাবার তৈরি করতে না পেরে কয়েকদিনের মধ্যেই মারা পড়বে। আর বড়গুলো হয়তো আরো কিছুদিন টিকে থাকবে। এর চেয়েও বড় সমস্যা আছে। আমরা জানি যে সূর্য আমাদের তাপেরও উৎস। আর তাপ যে কতটা দরকারি তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। সূর্য বিলীন হয়ে যাওয়ার ১ সপ্তাহের মাঝে পৃথিবীর তাপমাত্রা ০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে যাবে। আর সূর্যহীন এক বছর শেষে পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রা দাঁড়াবে মাইনাস ৭৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

চিন্তা করে দেখুন তো, এই বরফশীতল অবস্থায় কোন জীবটির অস্তিত্ব থাকবে? তবে হাইড্রথার্মাল ভেন্টে যেসব প্রাণি আছে সেগুলো সূর্য ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।

ওই অবস্থায় পৃথিবীর সমুদ্রের উপরিভাগের পানিগুলো বরফ হয়ে পুরো পৃথিবীকে একটি বরফ খণ্ডের মত লাগবে। তবে মাটির নিচে, পৃথিবীর অভ্যন্তরে পৃথিবীর “কোর” তখনও তাপ উৎপাদন করবে। কেউ যদি এইদিকটায় সুবিধাজনক কোনো আশ্রয় পায়, তাহলে তার ভাগ্য কিছুটা প্রসন্ন বলা যায়, কিন্তু খাবে কী!

সূর্য না থাকলে মহাকর্ষ বল এর অভাবে পৃথিবী শূন্যের দিকে সোজা ছুটতে থাকবে। এখন পৃথিবী সূর্যের চারপাশে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৬৭০০০ মাইল বেগে ছুটে চলেছে। সেই হিসেবে অন্য কোন কিছুর সাথে সংঘর্ষ না ঘটলে পৃথিবী প্রথম ১ বিলিয়ন বছরে পুরো আকাশগঙ্গা ছায়াপথের দৈর্ঘ্যের সমান  দূরত্ব অতিক্রম করে ফেলবে আর অনন্তকাল এইভাবেই চলবে (?) কিন্তু আসলেই কি তাই? আমাদের ছায়াপথেই প্রায় ১০০ বিলিয়ন সূর্যের মত তারা রয়েছে, আরও আছে ১ বিলিয়নের মত ব্ল্যাক হোল। তাদের মাঝে কোন একটা যে পৃথিবীকে আবার ঐটার কক্ষপথে বসিয়ে দিবে না (কিংবা গ্রাস করবে না) তাই বা কে বলতে পারে!

মোট কথা সূর্য হারিয়ে গেলে আমাদের মানবসহ সকল স্বাভাবিক প্রানি অস্তিত্ব ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে শুরু করবে; পৃথিবী তখন একটি বিশাল বরফের গ্রহে পরিণত হয়ে যাবে; তবুও পৃথিবীর গভীরতম স্থানে অবস্থানরত মাইক্রব এর মত নানা জীব বেঁচেই থাকবে। হয়ত কোন গ্রহের সাথে সংঘর্ষ না হলে মিলিয়ন বছর পর পৃথিবী অন্য কোন নক্ষত্র এর কক্ষপথে চলে আসবে; আর তখন তাপ এর কারণে পৃথিবী আবারও গলতে শুরু করবে, আর নিজের আদি রূপে ফিরে আসবে। তখন হয়ত সমুদ্রের নিচে থাকা এসব মাইক্রন থেকে আবার নতুন জীব প্রজাতি তৈরি হবে, যেমন ভাবে পৃথিবীতে সর্বপ্রথম জীব তৈরি হওয়া শুরু হয়েছিল।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar