ad720-90

বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে করোনার ওষুধ ‘অ্যাভিগান’


নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক: কোথাও কোনো প্রতিষেধক নেই, নেই ভ্যাকসিন। করোনাভাইরাস এমনই এক মহামারী হয়ে দাঁড়িয়েছে, স্পর্শ পেলেই ছড়িয়ে যাচ্ছে অন্যের দেহে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো করোনা সামাল দিতে হিমশিম। পৃথিবীতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যখন মৃত্যুর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে, তখনই পাওয়া গেছে এক সুখবর। বাংলাদেশেই তৈরি হতে যাচ্ছে করোনার ওষুধ ‘অ্যাভিগান’। এর এটি তৈরি করে দেশীয় ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস।

মূলত এটি জাপানের বিশেষজ্ঞদের আবিষ্কার। জাপানের ফুজিফিল্মের সহযোগি প্রতিষ্ঠান তয়োম ফার্মাসিউটিক্যালস তৈরি করেছে এটি। এ ওষুধ দিয়ে করোনাকে কার্যকরভাবে মেরে ফেলা সম্ভব হচ্ছে। জাপানে করোনায় আক্রান্তদের ওপর প্রয়োগ করে এর প্রমাণও মিলেছে। ইতোমধ্যে করোনা মারতে ডজনখানেক ওষুধ যেমন- ফ্যাভিপিরাভির, রেমডেসিভির, ইন্টারফেরন আলফা টুবি, রিবাভিরিন, ক্লোরোনকুইনিন, লোপিনাভির এবং আরবিডল তৈরি হয়েছে। সরাসরি নভেল করোনাভাইরাসের জন্য তৈরি না হলেও অন্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করা ড্রাগ করোনাভাইরাস ঠেকাতে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার শুরু হয়েছে।

করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ট্যাবলেট অ্যাভিগান জাপানের ফুজি ফিল্ম কোম্পানির সাবসিডিয়ারি ওষুধ কোম্পানি তয়োমা কেমিক্যাল। ট্যাবলেটটির জেনেটিক নাম ফ্লাভিপাইরাভির। বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস আগামী রবিবার ওষুধটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঔষধ প্রশাসনে হস্তান্তর করবে। ওষুধ‌টি সরকারকে সরবরাহ করার পাশাপাশি যে সমস্ত হাসপাতালে করোনা রোগী আছে সেখানেও সরবরাহ করা হবে। তবে এখনই ফার্মেসিতে সরবরাহ করা হবে না। ম্যাটেরিয়াল স্বল্পতার কারণে এখন মাত্র ১০০ রোগীর জন্য ওষুধটি তৈরি হবে, তবে এ মাসের মধ্যেই ওষুধটি উৎপাদন বাড়াতে পারবে বলে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস যে সমস্ত হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি আছে সেখানে ওষুধটি পৌঁছে দেবে। প্রতিটি ট্যাবলেটের দাম ৪০০ টাকা হলেও এখন এটি বিনামূল্যে আক্রান্ত রোগীদের সরবরাহ করা হবে।

এ ওষুধ প্রস্তুতের স্বত্ত্ব জাপানের হলেও অনুন্নত দেশ হিসেবে তারা বাংলাদেশকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধটি প্রস্তুতের অনুমোদন দিয়েছে।

তবে এটা সত্য, ফ্লাভিপাইরাভির ওষুধটি কভিভ-১৯ রোগের সুনিশ্চিত চিকিৎসা নয়। কিন্তু জাপানে ইতোমধ্যে ১২০ জন রোগীর ওপরে পরীক্ষা করে সফলতা পাওয়া গেছে। আক্রান্ত তরুণ রোগীদের ওপর ওষুধটি ব্যবহার করে সাত দিনে এবং বয়স্কদের ওপর ব্যবহার করে নয় দিনে তাদের দেহে আর করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। ফ্লাভিপাইরাভির ওষুধটির সাথে ওরভেসকো নামক আরও একটি ওষুধ মিলিয়ে করোনার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, জাপান, তুরস্ক এবং চায়না ওষুধটি ব্যবহার করছে। কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের তিনটি পর্যায়- সাধারণ, মাঝারি ও মারাত্মক। এই তিন ক্ষেত্রেই ওষুধটি কার্যকর। গর্ভস্থ শিশুর ওপর ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে।

এই ফ্যাভিপিরাভির অ্যাভিগান ২০১৪ সাল থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হয়। চীন উহানে ব্যাপক প্রাণহানির পর সেই দেশের সরকার গত মার্চে দাবি করে, অ্যাভিগান ওষুধ ‘কোভিড-১৯’ প্রতিরোধে ভাল কাজ দিয়েছে। চীনের দাবির এক মাসের মধ্যে জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রী কাতসুনোবু কাতো ইঙ্গিত দেন যে ‘এভিগান’ কোভিড -১৯-এর বিরুদ্ধে পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করছে।

আর এরপরই মূলত কোভিড-১৯ জন্য অ্যাভিগানকে প্রস্তুত করতে উঠে পড়ে লাগে জাপান। এর মধ্যে গত ৩১ মার্চ ফুজিফিল্মর প্রেসিডেন্ট জুনিজি ওকাদা এক বিবৃতিতে, ফ্যাভিপিরাভিরের জেনরিকের অ্যাভিগান তৃতীয় ধাপে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছে দাবি করেন। কোভিড-১৯ মহামারি রুখতে বিশ্বের অন্যন্য দেশের চাহিদা অনুযায়ী জাপান সরকারের পরামর্শক্রমে তারা এই ওষুধ সরবরাহ করবে জানান।

তবে অ্যাভিগান এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য দপ্তর এবং অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য দপ্তরের অনুমোদন পায়নি। ইতালিতেও এর দারুণ ফল পাওয়া গেলেও সে দেশে সরকারিভাবে এ ওষুদের অনুমোদন মেলেনি। বর্তমানে বিশ্বের ২০টি দেশে ওষুধটির ট্রায়াল চলছে। অ্যাভিগান সত্যি যদি করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারে, তাহলে এটি হবে এই শতকের সবচেয়ে বড় অর্জন।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar