ad720-90

জুম কি নেতৃত্ব দেবে নাকি মিলিয়ে যাবে বুদ্বুদের মতো?


গুগল আর ফেইসবুক তাদের ভাণ্ডারে ভিডিও সংক্রান্ত যা কিছু আছে তাই নিয়ে এখন ঝাপিয়ে পড়েছে। এদের দুজনেরই পকেটে আছে প্রচুর পয়সা। আছে বিশাল গ্রাহকগোষ্ঠী। প্রশ্ন হচ্ছে, এই দুই ক্ষমতাধর কি পারবে সদ্য মাথা তুলে দাঁড়ানো জুমের পাতে ভাগ বসাতে? এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে সিএনএন। 

মনে রাখা দরকার, জুম সেবাটি প্রায় বন্ধই হয়ে যাচ্ছিল। এখন, আচমকা এর যে উত্থান, সেটি কতোদিন বজায় থাকবে?

কয়েক সপ্তাহ আগেই ফেইসবুক ‘মেসেঞ্জার রুম’ নামে নতুন একটি ভিডিও কলিং সেবার ঘোষণা দিয়েছে যেখানে ৫০ জন পর্যন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ ইচ্ছা ভিডিও কনফারেন্স করতে পারবেন এবং এজন্য কোনও ফেইসবুক অ্যাকাউন্টও লাগবে না।

অপরদিকে গুগলের ছিল অর্থের বিনিময়ে কেনা সম্ভব এমন একটি প্যাকেজ। এর অনেকগুলো সেবার একটি ছিল ভিডিও কনফারেন্সিং সেবা ‘গুগল মিট’। গুগল এখন এই মিটকে ওই প্যাকেজের বাইরে এনে বিনামূল্যের সেবার কাতারে ফেলেছে। এখন ইমেল ঠিকানা থাকলেই যে কেউ গুগল মিট-এ ১০০ জন পর্যন্ত ব্যবহারকারীর সঙ্গে যতক্ষণ খুশি ভিডিও কনফারেন্স করতে পারবেন।

যখন গুগলের মিট বিনাপয়সায় সেবা ছিল না, মেসেঞ্জার রুম ছিলই না তখন জুম-এর ৪০ জন পর্যন্ত ৫০ মিনিট ভিডিও কনফারেন্স করার সুবিধাটিই বিশাল একটি বিষয় ছিল এবং তার সঙ্গে কোনো রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই স্রেফ একটি লিঙ্কে ক্লিক করে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি জুমকে তার বিশাল জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে।

জুমের সেই জনপ্রিয়তা আছে এখনও। তবে, ফেইসবুক এবং গুগল তার জন্য বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বীতা ছুড়ে দিয়েছে সেটা সম্ভবত তার চেয়েও বেশি সত্যি, অন্তত এই সময়ে।

প্রশ্ন হচ্ছে, জুমের এই অবস্থান থাকবে কি না। না কি জুম হঠাৎ ওঠা বুদ্বুদের মতো মিলিয়ে যাবে, না কি বাজারে কয়েকটি বড় সেবাদাতার একজন হয়ে টিকে থাকবে?

নিজেদের সাফল্য মাপতে জুমের অবশ্য একটি বাটখারা আছে। সেটি হচ্ছে দৈনিক বৈঠকে অংশগ্রহনকারীর সংখ্যা।

এখানে একটি বিষয় খেয়াল রাখা দরকার, বৈঠকে অংশগ্রহনকারীর সংখ্যা কিন্তু মোট ব্যবহারকারী না-ও হতে পারে। অনেক সময় একজন ব্যবহারকারী একাধিক মিটিংয়ে যোগ দিতে পারেন।

গত সপ্তাহেই জুম জানিয়েছে প্ল্যাটফর্মটিতে প্রতিদিন ৩০ কোটি অংশগ্রহনকারী মিটিং সম্পন্ন করেছে। মার্চ মাসেই এই সংখ্যা ছিল ২০ কোটি। জুমের জনপ্রিয়তা বা এর ওপর নির্ভরতা দ্রুত বাড়ছে সন্দেহ নেই। কিন্তু গুগলও যে খুব পিছিয়ে আছে তা বলা যাবে না। একই মানদণ্ডে গুগল গেল সপ্তাহে ১০ কোটির মাইলফলক স্পর্শ করেছে। আর মেসেঞ্জারের বেলায় এই সংখ্যা ছিল সাত কোটি অংশগ্রহনকারী। ফেইসবুক এবং গুগলের যে বিশাল ভোক্তাশ্রেণি আছে তা প্রতিষ্ঠানদুটির জন্য বড় ভিত্তি সন্দেহ নেই। এবং সেটি জুমের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠানদুটিকে শক্ত অবস্থানে নিতে সাহায্যই করবে।

তবে ভিডিও কনফারেন্সিং বাজারে “গুগলের তুলনায় ফেইসবুক সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে”- বলছিলেন নিডহাম অ্যান্ড কো বিশ্লেষক লরা মার্টিন। তার কথার পক্ষে যুক্তি হচ্ছে, আগের রেকর্ড বলে অন্য প্রতিষ্ঠানের সাফল্য দেখে ছুটতে শুরু করার বেলায় গুগলের ফলাফল প্রায়ই কাঙ্ক্ষিত ফল আনে না। মনে করে দেখুন গুগল প্লাসের কথা। বিশাল আওয়াজ নিয়ে আসা ওই প্রকল্প শেষ পর্যন্ত বন্ধই করে দিতে হয়েছে। এমন আরও অনেক উদাহরণ আছে গুগলের।

অন্যদিকে ফেইসবুকের ইতিহাস বলে এরা অন্যকে অনুসরণ করার বেলায় চটজলদি সিদ্ধান্ত নেয়, প্রতিদ্বন্দ্বীর জনপ্রিয় ফিচারগুলো আয়ত্ব করে এবং একটা নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। মিলিয়ে দেখুন স্ন্যাপচ্যাটের সঙ্গে ইনস্টাগ্রামে স্টোরিজ ফিচার।

জুমের ভাগ্য কী হবে তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয় অথবা বলা চলে অনেকগুলো ‘যদি’র ওপর নির্ভরশীল।

কিছু বিশেষজ্ঞ বলেছেন ভিডিও কনফারেন্সিং খাঁটি সোশাল নেটওয়ার্কিং থেকে অনেকটাই আলাদা। এখানে আপনার বন্ধুবান্ধব কয়জন একই সেবা ব্যবহার করছেন তা আরও গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক মাধ্যমে যেমন অংশগ্রহনকারী সবাই একই প্ল্যাটফর্মে থাকেন, ভিডিও কলিংয়ের বেলায় তেমনটা নাও হতে পারে। অনেকেই হয়তো একাধিক সেবা ব্যবহার করবেন।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ল’ অ্যান্ড ইকোনমিকসের প্রতিযোগিতা বিশেষজ্ঞ জিওফ্রে মান বলছেন, ভিডিও কনফারেন্সিং মার্কেটটি একক কোনো প্রভাবশালী সংস্থার না হয়ে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী খেলোয়াড়ের ক্রীড়েক্ষেত্রই হয়তো হবে শেষ পর্যন্ত।

“জুমের কিছু ছোটখাট বিপর্যয় হয়েছে, সত্যি। কিন্তু জুম খুব শীগগীর প্রতিযোগিতায় হারিয়ে যাবে এমন লক্ষণ দেখছি না।”– তিনি বলেন।

“জুম টিকবে কি টিকবে না সেটা অনেকটাই নির্ভর করছে নিরাপত্তা বিষয়টিকে তারা কিভাবে সামাল দেয় তার ওপর।”





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar