ad720-90

করোনাভাইরাস ট্রেসিং অ্যাপ: দুই ভাগে এখন বিভক্ত বিশ্ব


অ্যাপ তৈরিতে নিজ নিজ পন্থা প্রয়োগ করছে দেশগুলো। কোনো দেশ কেন্দ্রীভূত প্রক্রিয়ায় বা কেন্দ্রীয় সার্ভারে ডেটা জমা রাখার কথা জানিয়েছে। আবার কোনো দেশ কেন্দ্রবিমুখ বা ব্যবহারকারীদের ডিভাইসেই ডেটা রাখার কথা বলছে। যুক্তরাজ্য নিজেও কেন্দ্রীভূক্ত প্রক্রিয়ার পক্ষে। —  প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

হিসেবে কেন্দ্রীভূত অ্যাপের থেকে কেন্দ্রবিমুখ অ্যাপে ডেটার উপর নিয়ন্ত্রণ বেশি থাকবে ব্যবহারকারীদের। ফলে গোপনতা সমর্থকরা কেন্দ্রবিমুখ প্রক্রিয়াটিকে পছন্দ করছেন বেশি। ট্রেসিং অ্যাপ প্রযুক্তি নিয়ে কর্মরত অ্যাপল-গুগল জোটও রায় দিয়েছে কেন্দ্রবিমুখ অ্যাপের পক্ষেই।

দুটি পক্ষেরই রয়েছে নিজ নিজ তর্ক-যুক্তি ও সমর্থন।

কেন্দ্রীভূত প্রক্রিয়ার সমর্থকরা জানিয়েছেন, এর মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাবেন কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, কেন্দ্রবিমুখ প্রক্রিয়ার সমর্থকদের দাবি, এ প্রক্রিয়ায় ব্যবহারকারীর গোপনতা নিশ্চিত হচ্ছে, ডেটা সুরক্ষিত থাকছে হ্যাকার বা রাষ্ট্রের হাত থেকে।

কোনো প্রক্রিয়ার স্বপক্ষেই এখন পর্যন্ত অবশ্য কোনো ব্যবহারিক প্রমাণ নেই। কোভিড-১৯ লড়াইয়ে সফলদের খাতায় নাম লেখানো দেশ দক্ষিণ কোরিয়া কোনো কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ ছাড়াই করোনাভাইরাস সংক্রমণ সামাল দিয়েছে। তবে, কাজটি করতে নজরদারি প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিয়েছে দেশটি, যা অনেকেই পছন্দ করতে পারেননি।

শুরুতে সবাই ট্রেসিং অ্যাপের উদাহরণ হিসেবে সিঙ্গাপুরের ‘ট্রেসটুগেদার’ অ্যাপটি অনুসরণ করছিলেন। কিন্তু স্থানীয় জনসংখ্যার ২০ শতাংশ অ্যাপটির ব্যবহার শুরু করতেই সে চিন্তাধারা পাল্টে যায়। হুট করে দেশটিতে বেড়ে যায় করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা।

‘ট্রেসটুগেদার’ ঠিকমতো কাজ না করার অন্যতম একটি কারণ নিজে থেকে আইফোনের ব্লুটুথ তরঙ্গ বন্ধ হয়ে যাওয়া। চার্জ বাঁচাতে কিছুক্ষণ পরপর ব্লটুথ তরঙ্গ বন্ধ করে দিতে থাকে আইফোন, ফলে সঠিক তথ্য দেখাতে পারে না কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ। শর্তস্বপেক্ষে এ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে অ্যাপল। শর্তটি হলো, অ্যাপকে অবশ্যই কেন্দ্রবিমুখ প্রক্রিয়ার হতে হবে।

নিজ শর্তের ব্যাপারে অ্যাপল যে বেশ কড়া, তার প্রমাণ মিলেছে ফ্রান্সের বেলায়। কেন্দ্রীভূত অ্যাপ তৈরি করে অ্যাপলকে ব্লুটুথ তরঙ্গ সমস্যার সমাধান করতে বলেছিল দেশটি। ফ্রান্সকে এ ব্যাপারে কোনো সাহায্য করেনি প্রতিষ্ঠানটি। সিঙ্গাপুর অবশ্য নিজেদের অ্যাপকে কেন্দ্রবিমুখ করছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।

“আমরা অ্যাপকে আরও কার্যকর করতে অ্যাপল ও গুগলের সঙ্গে কাজ করছি, বিশেষ করে আইওএস ব্যবহারকারীদের জন্য।” – বলেছেন দেশটির মুখপাত্র।

এদিকে, কেন্দ্রীভূক্ত অ্যাপ বানানোর ব্যাপারে জানিয়েছে নরওয়ে। ব্লুটুথের পাশাপাশি জিপিএস অবস্থান ডেটাও সংগ্রহ করবে নরওয়ের ‘স্মিটেসটপ’ ট্রেসিং অ্যাপ। অ্যাপটির ডেভেলপাররা বলছেন, “খুবই নির্ভুল কনট্যাক্ট ট্রেসিং ফলাফল জানাতে পারা অ্যাপটির গুগল-অ্যাপল ইন্টারফেইনের প্রয়োজন নেই”।

ট্রেসিং অ্যাপ নিয়ে ভুগতেও হয়েছে নরওয়েকে। ১৫ লাখ মানুষ অ্যাপটি ডাউনলোড করলেও, অ্যাপটি সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করছেন আট লাখ ৯৯ হাজার ১৪২ জন।

ভারতের তৈরি কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ ‘আরোগ্য সেতু’-ও কেন্দ্রীভূক্ত ট্রেসিং অ্যাপ। মানুষ যাতে অ্যাপ ব্যবহার করে সেজন্য সব ভারতীয় সরকারি-বেসরকারি কর্মীকে অ্যাপটি বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

অনেক দেশ আবার কেন্দ্রীভূক্ত অ্যাপ ছেড়ে কেন্দ্রবিমুখ অ্যাপ তৈরি করা শুরু করেছে। এ কাজ প্রথম করেছে জার্মানি। কেন্দ্রীভূক্ত অ্যাপের পক্ষে থাকলেও, মত পরিবর্তন করে কেন্দ্রবিমুখ অ্যাপ তৈরির ব্যাপারে জানায় প্রতিষ্ঠানটি। পরে পোল্যান্ড-ও একই কাজ করেছে।

“আমাদের ধারণা ‘প্রোটেগো সেইফ’ কনট্যাক্ট ট্রেসিং প্রক্রিয়ায় গুগল এবং অ্যাপলের এপিআইয়ের প্রয়োজন পড়বে। – বলেছেন দেশটির মুখপাত্র।

ইতালিসহ আরও অনেক দেশ সাধুবাদ জানিয়েছে মার্কিন দুই টেক জায়ান্টের উদ্যোগকে। এ ধরনের দেশের মধ্যে রয়েছে, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, লাতভিয়া ইস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং কানাডা।

কেন এই ব্যাপারগুলো চিন্তা করা প্রয়োজন? কারণ দুটি ভিন্ন প্রক্রিয়ার একত্রে কাজ করার সময় সমস্যা দেখা দেবে। “মূল কারণটি হলো কেন্দ্রীভূক্ত প্রক্রিয়ায় মানুষের সংস্পর্শে এলে সে ডেটা আপনাকে আপলোড করতে বলা হবে, আর কেন্দ্রবিমুখ প্রক্রিয়ায় এই ডেটার প্রয়োজন পড়বে না, ফলে একটি আরেকটির সঙ্গে মিলছে না”। – বলেছেন অ্যাপল-গুগল ডিপিটি৩ গ্রুপের অধ্যাপক মাইকেল ভিল।

“ফলে আপনি যদি লকডাউন উঠানোর সমাধানের অংশ হিসেবে অ্যাপের কথা ভাবেন, তাহলে আপনি কিন্তু সীমান্ত পার হলেই ভাইরাস শনাক্ত করার সক্ষমতাকে সরিয়ে নিচ্ছেন, কিন্তু ভাইরাস কোনো সীমান্ত মানে না”।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar