ad720-90

রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা মাঝেমধ্যে পরীক্ষা করুন


আমাদের কারও করোনাভাইরাস আক্রান্তের হালকা উপসর্গ দেখা দিলে সাধারণত ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে বাসায় নিজ উদ্যোগে কোয়ারেন্টিনে থাকি। এই সময় আমাদের সচেতন থাকতে হবে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে কি না। সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ বা একটু কম থাকলে ঠিক আছে। কিন্তু ৯৫ শতাংশের নিচে নেমে গেলে বুঝতে হবে হাসপাতালে যাওয়া দরকার।

এখানে দুটি সমস্যা। প্রথমত, আমরা কীভাবে অক্সিজেনের মাত্রা জানতে পারব। দ্বিতীয়ত, হালকা উপসর্গের রোগী অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে কোনো ধরনের লক্ষণ শরীরে দেখা দেবে কি না। অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপের জন্য ‘পালস অক্সিমিটার’ নামে ছোট ইলেকট্রনিক যন্ত্র রয়েছে। সেটা আঙুলের মাথায় দু–এক মিনিট লাগিয়ে রাখলেই অক্সিজেনের মাত্রা জানা যায়। একই সঙ্গে হৃদ্‌স্পন্দনের মানও (পালস রেইট) উল্লেখ করে। যন্ত্রটা কিনতে পাওয়া যায়। অথবা পাড়ার ফার্মেসির দোকানে ডাক্তারের কাছে গেলে তিনিই অক্সিজেনের মাত্রা তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়ে দেবেন। যদি মাত্রা কম থাকে, তাহলে জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন নিতে হবে।

সংক্রমণের পর করোনাভাইরাস ধীরে ধীরে সেটা ফুসফুসের বায়ুথলিগুলো (অ্যালভিওলি) অকার্যকর করে দেয়। তখন রক্ত অক্সিজেন পায় না। ফলে দেহের হাত–পা, স্নায়ুতন্ত্র, এমনকি মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। অনেক রোগী সেটা টের পায় বেশ দেরিতে। তখন হয়তো তার শারীরিক অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গেছে। অনেকের সামান্য মাথা ঝিমঝিম করে বা হাঁটা ও চলাফেরায় সমস্যা হয়। এ থেকেই বুঝে নিতে হবে ওগুলো রক্তে অক্সিজেনের মাত্র কমে যাওয়ার লক্ষণ। তখন আর দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। অক্সিজেন নেওয়ার জন্য হাসপাতালে যেতে হতে পারে।

অক্সিজেন যদি দ্রুত পাওয়া না যায়, তাহলে অন্তত উপুড় হয়ে শুয়ে জোরে জোরে শ্বাস–প্রশ্বাস নিতে হবে। এতে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়। কারণ, এর ফলে ফুসফুসের একটা বড় অংশে সহজে বাতাস যায় এবং রক্ত সহজে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু শুধু এর ওপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না। অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

আমাদের দেশে সব রোগীর হাসপাতালে চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না। এটা শুধু আমাদের দেশেই না, ইউরোপ–আমেরিকায়ও দেখা গেছে সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার পর শুধু মারাত্মক অবস্থার রোগীদেরই হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়। অন্যদের বাসায় নিজ ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চিকিৎসা চলে। এ সময় নিজেদের সতর্কতা খুব জরুরি। বাসায় পরিবারের অন্য সদস্যদের দূরে রাখা। আলাদা শৌচাগার ব্যবহার। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া। রোগীর জন্য আলাদা থালা–বাটি ও অন্যান্য বিধি–ব্যবস্থা মেনে চললে অনেকে সুস্থ হয়ে ওঠে।

কিন্তু এর একই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে, রোগীর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক আছে কি না। দেখা গেছে, সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরও শুধু মাত্র অক্সিজেনের মাত্রার হেরফেরে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়তে পারে। তাই এ বিষয়ে সতর্কতা দরকার। দিল্লিতে হোম কোয়ারেন্টিন রোগীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় পালস অক্সিমিটার দেওয়া হয়। আমাদের দেশে বিশেষভাবে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রেড ও ইয়েলো এলাকাগুলোতে নির্ধারিত শর্তে এ ধরনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

ধূমপান ও ভাজাপোড়া খাবার

করোনার এই দুঃসময়ে আমাদের পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে মনোযোগ দিতে হবে। প্রতিদিন সাধ্যমতো ভাত–ডাল–মাছ–মংস–দুধ তো খেতে হবেই, এর সঙ্গে কিছু মৌসুমি ফলও খেতে হবে। ফলের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

একই সঙ্গে সিগেরেট ও তামাক একেবারে বাদ দিতে হবে। কারণ, তামাক ফুসফুসের ক্ষতি করে এবং আমাদের রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে। অন্যদিকে ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করা দরকার। বিশেষভাবে সম্পৃক্ত চর্বি ও ট্রান্সফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় না রাখাই ভালো। এগুলো আমাদের রক্তে এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টরেল বাড়ায় এবং এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টরেল কমায়। এর ফলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এটা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর জন্য খারাপ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।

দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়িয়ে চলার জন্য আমাদের অনেকে প্রায় সারাক্ষণ বাসায় থাকি। ভিড় এড়িয়ে চলি। প্রায় যোগাযোগবিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকি। এর ফলে আমাদের মনে একধরনের নির্জীব ভাব আসতে পারে। এটা স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করতে হবে। যাঁরা হোম অফিস করেন, তাঁদের কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু হাঁটাহাঁটি, আনন্দে থাকার চেষ্টা এই সময় খুব উপকারে আসে।

দুশ্চিন্তা থাকলে শরীর আরও ভেঙে পড়ে। তখন ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই মন ভালো রাখার চেষ্টা দরকার। এ জন্য প্রতিদিন শরীরচর্চার অভ্যাস করা প্রয়োজন।

মাঝেমধ্যে বাইরে যেতে হয়। এ সময় অবশ্যই মুখে মাস্ক পরতে হবে। যাঁরা অফিসে কাজ করেন, সেখানেও অবশ্যই মাস্ক পরে কাজ করতে হবে। তাহলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা প্রায় ৯০ ভাগ কমে যাবে। আর ১০ ভাগ থাকে চেয়ার–টেবিল, দরজার হাতল, লিফটের বোতাম স্পর্শ প্রভৃতির মাধ্যমে সংক্রমণের আশঙ্কা। এ জন্য অফিস বা বাসার যেকোনো আসবাব, কাচ–স্টিল–প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের উপরিতল স্পর্শের মাধ্যমে সংক্রমণ রোধের উপায়গুলো মেনে চলা দরকার। যেমন, কিছুক্ষণ পরপর সাবান–পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোওয়ার কথা তো আমরা জানি। পাশাপাশি নাক–চোখ–মুখে হাত দেওয়ার অভ্যাস সচেতনভাবে বন্ধ রাখতে পারলে স্পর্শের মাধ্যমে সংক্রমণ প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব।

আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
[email protected]

 





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar