ad720-90

চর্বি ঝরাবেন? সুখবর দিলেন বিজ্ঞানীরা


সারা বিশ্বেই বাড়ছে স্থূলতা বা মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যা। ছবি: রয়টার্সশরীরে চর্বি জমে যাচ্ছে? এ নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে যাচ্ছে, কিন্তু চর্বির কোনো নড়নচড়ন নেই। এই দশা এখন বিশেষত শহুরে মানুষের। ফলে নির্দিষ্ট ডায়েটের খোঁজে থাকা মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এই অবস্থায় যদি খোঁজ মেলে এমন কোনো অণুর, যা কিনা শরীরের ভেতরে থেকেই চর্বি পোড়াতে নিরন্তর কাজ করে চলে, তবে খুশি তো হওয়ারই কথা। এমন খুশির খবরই এবার দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী সম্প্রতি এমন একটি অণুর খোঁজ পেয়েছেন, যা চর্বি পোড়াতে সহায়তা করে। এরই মধ্যে ইঁদুরের শরীরে অণুটি প্রয়োগ করে আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়া গেছে। এর সুবিধা হচ্ছে, দিনে কতটা খাবার গ্রহণ করা হচ্ছে, তার ওপর এর ক্রিয়ার কোনো হেরফের হয় না। এমনকি এর কার্যকলাপের কারণে শরীরে বাড়তি কোনো তাপমাত্রাও সৃষ্টি হয় না।

অনলাইন গবেষণা পত্রিকা সায়েন্স ডেইলির প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থূলতা বা মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যা এখন বিশ্বব্যাপী। সারা বিশ্বের ১৩ শতাংশ মানুষই এই সমস্যায় ভোগে। আর এই স্থূলতা হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগকে এটি জটিল করে তোলে।

এ বিষয়ে ভার্জিনিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব সায়েন্সের সেন্টার ফর ড্রাগ ডিসকোভারির ক্লিফ অ্যান্ড অ্যাগনেস লিলি ফ্যাকাল্টি ফেলো ও রসায়নের অধ্যাপক ওয়েবস্টার সান্তোস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে স্থূলতা সবচেয়ে বড় সমস্যা। কিন্তু মানুষের পক্ষে ওজন হ্রাস করা এবং এ লক্ষ্যে নির্দিষ্ট খাদ্যতালিকা দিনের পর দিন মেনে চলা ভীষণ কঠিন। এ ক্ষেত্রে একটি ওষুধ দ্রুত ও সহজ সমাধান হতে পারে।

ওয়েবস্টার সান্তোসের নেতৃত্বে পরিচালিত এ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের শরীরে বিশেষ এ অণুর প্রয়োগ করেন। বিএএম-১৫ নামের এই অণু শরীরে চর্বির পরিমাণ কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ–সম্পর্কিত একটি গবেষণা নিবন্ধ ১৪ মে নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত হয়েছে।

সাধারণভাবে মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের শক্তিঘর (পাওয়ার হাউস) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অ্যাডেনিন ট্রাই ফসফেট (এটিপি) উৎপাদনের জন্য কোষের পুষ্টি উপাদান পোড়ানোর পাশাপাশি মাইটোকন্ড্রিয়ার মধ্যেই একটি প্রোটন মোটিভ ফোর্স (পিএমএফ) তৈরির প্রয়োজন পড়ে। এটিপি উৎপাদন প্রক্রিয়াটি অনেক জটিল হলেও সহজ ভাষায় বলতে গেলে, কোষপ্রাচীরের সঙ্গে যুক্ত এটিপি সিনথেজের মধ্য দিয়ে প্রোটনের চলাচলের সময় মূলত এটিপি উৎপন্ন হয়। এই একই সময়ে পুষ্টি উপাদানের জারিত হওয়ার (সাধারণভাবে পোড়ানো বলা হয়) ঘটনাটিও ঘটে। তাই যেকোনো কিছু পিএমএফের গতি কমাতে কাজ করা মানে তা শ্বসন প্রক্রিয়ার গতি বাড়ায়। আর শ্বসনের হার বৃদ্ধি মানেই হলো আগের চেয়ে বেশি চর্বি পুড়বে। ফলে কোনো বাড়তি ব্যায়াম ছাড়াই বেশি পরিমাণ ক্যালরি পোড়ানো যায়।

এটিপি উৎপাদনের স্বাভাবিক গতিকে বাধাগ্রস্ত করলে, তা একই পরিমাণ এটিপি তৈরির জন্য বেশি জ্বালানি পোড়াতে শুরু করে। আর এই কাজটিই করে নতুন সন্ধান পাওয়া এই বিএএম-১৫ অণুটি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই আবিষ্কার ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ। স্থূলতার চিকিৎসায় নানা ধরনের ওষুধের কথা এ যাবৎকালে বলা হলেও, এগুলো অনেকটাই নির্দিষ্ট খাদ্যতালিকা মেনে চলার নীতির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই অণুটির প্রয়োগ এমন হ্যাপা থেকে মুক্তি দেবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই বিএএম-১৫ অণুটি নিরাপদ। এতে কোনো ধরনের বিষক্রিয়ার ঝুঁকি নেই। এর আগে আবিষ্কৃত এ ধরনের অণুগুলোর মধ্যে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এর মধ্যে খাদ্য গ্রহণের হার বৃদ্ধি বা উচ্চ তাপমাত্রার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে।

ইঁদুরের ক্ষেত্রে এই অণুটি কাজ করলেও মানুষের ক্ষেত্রে এটি কতটা কাজ করবে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা। তবে এটি একটি আশার আলো দেখাচ্ছে। একই অণু যদি কাজ না–ও করে, তবে কাছাকাছি কোনো অণু হয়তো ঠিক কাজ করবে বলে তাঁরা আশাবাদী।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar