ad720-90

করোনাভাইরাস: নতুন স্বাভাবিকতায় কী করবো, কী করবো না


নতুন এই পরিস্থিতিতে আগের মতো স্বাভাবিক না হলেও আমাদেরকে মানিয়ে নিতে হবে ‘নতুন স্বাভাবিকতার’ সঙ্গে।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, কেমন হবে এই ‘নতুন স্বাভাবিক’ জীবন? এই জীবনে কী আমরা পুরোপুরি ঝুঁকি মুক্ত হতে পারবো? ঝুঁকিমুক্ত থাকতে হলে কোনটা করা যাবে আর কোনটা করা যাবে না? আবার কোনটা করা যাবে, কিন্তু ঠিক আগের মতো নয়?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান সেন্টারস ফর ডিজিজ কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, বাইরে যাওয়ার সময় বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় এনে ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।

এই বিষয়গুলো হয়তো সরাসরি প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট নয়। তবে বিষয়গুলো বোঝার জন্য প্রযুক্তিজ্ঞান আপনাকে সাহায্য করবে অনেক খানি।

আসুন দেখে নেই সেই নতুন স্বাভাবিক জীবনের গাইডলাইন-

সবচেয়ে জরুরী হলো প্রয়োজন না হলে একেবারেই বাইরে না যাওয়া। ছবি: রয়টার্স

সবচেয়ে জরুরী হলো প্রয়োজন না হলে একেবারেই বাইরে না যাওয়া। ছবি: রয়টার্স

 

বাড়ি থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো সবার আগে জানতে হবে-

>> আপনি যতো বেশি মানুষের সংস্পর্শে আসবেন, যতো বেশি সময় সংস্পর্শে থাকবেন, আপনার দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি ততো বাড়বে।

>> আপনি যদি লোকজনের মধ্যে মধ্যে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে প্রতিদিন নিজের সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

>> কিছু জিনিস হাতের নাগালে রাখুন, মুখ ঢাকার জন্য কাপড়, টিস্যু, সম্ভব হলে অন্তত ৬০ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার।

মারাত্মক ছোঁয়াচে নভেল করোনাভাইরাস মহামরী চলতে থাকলেও ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে বিভিন্ন ব্যবসা এবং আশপাশের সমাজ। আপনি হয়তো দৈনন্দিন কাজগুলো যতোটা নিরাপদে সম্ভব করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সংক্রমণের ঝুঁকি পুরোপুরি নিশ্চিত করার কোনো উপায় নেই।

সংক্রমণের ঝুঁকি কীভাবে কমানো যেতে পারে সেটিই এখন বিবেচনা করতে হবে। এজন্য নির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা দিয়েছে সিডিসি।

এখনও গণপরিবহন এড়িয়ে চলা জরুরী। সবচেয়ে ভালো হয় বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারলে। ছবি: রয়টার্স

এখনও গণপরিবহন এড়িয়ে চলা জরুরী। সবচেয়ে ভালো হয় বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারলে। ছবি: রয়টার্স

 

আপনি যতো বেশি মানুষের সংস্পর্শে আসবেন, যতো বেশি সময় সংস্পর্শে থাকবেন, আপনার দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি ততো বাড়বে।

এজন্য কিছু বিষয় মাত্রায় রাখাটা জরুরি। কিছু প্রশ্ন করতে হবে নিজেকেই-

আপনি কতো মানুষের সংস্পর্শে আসবেন?

>> যতো বেশি মানুষের সংস্পর্শে আসবেন ঝুঁকি ততো বাড়বে।

>> এমন কোনো দলের মধ্যে থাকছেন যেখানে সামাজিক দূরত্ব কেউ কেউ মানছে না বা মাস্ক ব্যবহার করা হচ্ছে না, আপনার ঝুঁকি বাড়ছে।

>> অপরিচিত মানুষের সংস্পর্শে আসাটাও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। কারণ, আপনি তাদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা জানেন না বা তাদের জীবনযাপন অভ্যাস জানেন না। মোটকথা আপনার পক্ষে জানা সম্ভব নয় অপরিচত ব্যক্তিটি আপনার জন্য কতটা ঝুঁকি নিয়ে এসেছেন।

>> কিছু মানুষ হয়তো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিছু তার কোনো উপসর্গ দেখা দেয়নি। উপসর্গ দেখা না দেওয়া ব্যক্তির মাধ্যমে কতো দিন পর্যন্ত ভাইরাস ছড়াতে পারে তা এখনও অজানা।

আপনি কী ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে পারবেন? আপনি কী আবদ্ধ জায়গায় থাকবেন না কি বাইরে?

>> আপনি সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তির যতো কাছে থাকবেন সংক্রমণের ঝুঁকি ততো বাড়বে।

>> আগে থেকেই জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দূরত্ব বজায় রাখা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষকরে বয়স্ক লোকজন।

>> বাইরের উন্মুক্ত জায়গার চেয়ে আবদ্ধ জায়গা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

>> অনেক প্রতিষ্ঠানই শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে আসন ব্যবস্থা নতুন করে সাজিয়েছে। যাওয়ার আগে জেনে নিন এ বিষয়ে।

আপনি কতোটা সময় অন্য ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকছেন?

>> সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যতো বেশি সময় কাটাবেন সংক্রমণের ঝুঁকি ততো বাড়বে।

>> আপনি নিজেই যদি আগে থেকে আক্রান্ত হন, তাহলে অন্য ব্যক্তির সঙ্গে যতো বেশি সময় কাটাবেন তার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ততো বাড়বে।

বিষয়গুলো বিবেচনা করে ঘরে বসে থাকাটাও তো সম্ভব নয়। সামনে এগোতে হবে সবাইকে। বাড়ির বাইরে বের হতে হবে। সেক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো ভাবনায় রাখতে হবে তা জানিয়েছে সিডিসি।

কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান শারীরিক দূরত্ব বাজায় রাখার জন্য আসন চিহ্নিত করে দিচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান শারীরিক দূরত্ব বাজায় রাখার জন্য আসন চিহ্নিত করে দিচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

 

বাইরে যেতে হলে কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে

নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে আপনি আপনার ঝুঁকির মাত্রা সম্পর্কে ধারণা পাবেন। প্রশ্নগুলো এমন–

আমার এলাকায় কী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে?

সর্বশেষ কোভিড-১৯ তথ্য এবং নির্দিষ্ট অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা খুঁজে বের করুন।

স্থানীয় নির্দেশগুলো কী?

এলাকার পরিস্থিতি জানতে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের আপডেটগুলোতে নজর রাখুন এবং স্থানীয় নির্দেশগুলো সম্পর্কে জেনে নিন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা, ব্যবসা পুনরায় চালু করা এবং বাড়িতে থাকার নির্দেশনাগুলো দেখে নিন।

সবুজ, হলুদ ও লাল চিহ্নিত এলাকা জেনে রাখুন। আপনি যেখানে যাচ্ছেন সে এলাকা কোন রঙে চিহ্নিত সেটি জেনে নিন ও সেই অনুসারে প্রস্তুতি নিন। লাল চিহ্নিত এলাকার প্রশ্নে সবচেয়ে হগুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সেখানে আদৌ না যাওয়া!

নিতান্ত প্রয়োজন না হলে জনসমাগম হয় এমন স্থান এড়িয়ে চলুন। ছবি: রয়টার্স

নিতান্ত প্রয়োজন না হলে জনসমাগম হয় এমন স্থান এড়িয়ে চলুন। ছবি: রয়টার্স

 

আমার কার্যক্রম কী আমাকে অন্যের ঘনিষ্ট সংস্পর্শে আনবে?

যেহেতু করোনাভাইরাস মূলত নিকট সংস্পর্শ থেকে ছড়ায়, তাই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন।

>> আপনি এবং আপনার আশপাশের মানুষের মাস্ক পরা জরুরি, বিশেষভাবে যখন ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

>> বাইরের কাজগুলো বেছে নিন এবং এমন জায়গার ব্যবস্থা করুন যেখানে ছয় ফুট দূরত্ব মেনে চলা সহজ।

>> সাংকেতিক চিহ্ন, চেয়ার সাজানো, মেঝেতে সংকেত বা তীর চিহ্ন এঁকে দৃশ্যমান কিছু তৈরি করুন, যা আপনাকে শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টি মনে করিয়ে দেবে।

আমি গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকিতে আছি কি না?

বয়স্ক বা যে কোনো বয়সের কেউ জটিল রোগে আক্রান্ত থাকলে তার কোভিড-১৯ গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি বেশি। যদিও অন্যান্যদের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি কম, তবে সকলেরই কিছু ঝুঁকি থাকেই। কারও কারও বেলায় কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না, কারও কম উপসর্গ দেখা যায় এবং কেউ কেউ গুরুতর অসুস্থ হন ।

আমি এমন কারও সঙ্গে বাস করি কি না, যার গুরুত্ব অসুস্থতার ঝুঁকি রয়েছে?

আপনি যদি বয়স্ক বা গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে এমন কারও সঙ্গে বসবাস করেন, তাহলে ঝুঁকি কমাতে আপনি এবং আপনার পরিবারের অন্যান্যদেরকে বাড়তি সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে হবে।

ছবি: রয়টার্স

ছবি: রয়টার্স

 

আমি দৈনন্দিন সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি কি না?

দৈনন্দিন সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলো মেনে চলুন, যেমন- নিজের উপসর্গগুলো পর্যবেক্ষণ, হাত না ধুয়ে মুখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকা, নিয়মিত হাত ধোয়া, শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা, জীবাণুমুক্ত করা, মাস্ক ব্যবহার করা এবং অসুস্থ হলে বাড়িতে থাকা।

আমাকে কী অন্যের সঙ্গে কোনো কিছু, যন্ত্রাংশ বা টুল শেয়ার করতে হবে কি না?

এমন জায়গাগুলো বেছে নিন, যেখানে আপনাকে অন্যের সঙ্গে বিভিন্ন জিনিস কম শেয়ার করতে হবে। শেয়ার করতে হলে বস্তুগুলো ভালোভাবে জীবানুমুক্ত করা হচ্ছে কি না সেটি খেয়াল রাখুন।

আমাকে কী গণপরিবহন ব্যবহার করতে হবে?

গণপরিবহন আপনাকে অন্য ব্যক্তিদের নিকট সংস্পর্শে আনতে পারে। তাই গণপরিবহনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করুন এবং নির্দেশনা মেনে চলুন।

আমি যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হই, আমাকে কী স্কুল বা কাজ বাদ দিতে হবে?

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বাসাতেই থাকুন। আপনার কর্মক্ষেত্র বা স্কুলে বাসা থেকে কাজ করা বা অসুস্থতাজনিত ছুটির নীতিমালা দেখে নিন।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar