ad720-90

গবেষণা: ফেইসবুক ‘জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক’


গবেষণাটি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংগঠন আভাজ। বিবিসি’র প্রতিবেদন বলছে, সাম্প্রতিক এই গবেষণার আলোকে সংগঠনটির দাবি, ফেইসবুক জনস্বাস্থ্যের জন্য “বড় হুমকী” হয়ে উঠেছে।

সামাজিক মাধ্যমটিতে টিকা বিষয়ে মিথ্যা দাবি প্রচার চলছে। এর ফলে কোভিড-১৯ এর টিকা এলেও এইসব প্রচারণার কারণে তাতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা কমে যেতে পারে।

এই গবেষণার লক্ষ্য ছিল সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের বিস্তার রোধ করা, সে লক্ষ্যকে সমর্থন করলেও ফেইসবুক বলেছে, গবেষণা প্রতিবেদনে ফেইসবুক যে পদক্ষেপ নিয়েছে তার প্রতিফলন নেই।

এরপর অবশ্য ফেইসবুক এক ফর্দ দিয়েছে তাদের গৃহীত কার্যক্রমের। এর মধ্যে রয়েছে, প্রায় ১০ কোটি তথ্যে সতর্কতামূলক লেবেল লাগানো এবং প্রায় ৭০ লাখ ক্ষতিকর তথ্য সরিয়ে ফেলার বিষয়টি।

“আমরা দুইশ’ কোটিরও বেশি মানুষকে নির্দেশনা দিয়েছি এবং যখন কেউ কোভিড -১৯ সম্পর্কে কোনও লিঙ্ক শেয়ার করেছেন তখন আমরা তাদের বিশ্বাসযোগ্য স্বাস্থ্য তথ্যের সঙ্গে সংযোগ করার জন্য আমরা তাদের একটি পপ-আপ দেখিয়েছি।” – বলেছে ফেইসবুক।

ভুয়া চিকিৎসা

ফেইসবুকের দাবির প্রসঙ্গে আভাজ বলছে, আদতে প্রতি ১০০টি ভুল তথ্যের মধ্যে গড়পড়তা স্রেফ ১৬টিতে সতর্কতামূলক লেবেল যোগ করতে পেরেছে ফেইসবুক।

কেবল তাই নয়, গবেষণায় আরও তুলনা এসেছে ভুল তথ্য ছড়ানো সাইট আর সঠিক তথ্যের উৎস সাইটগুলোর মধ্যে। ভুল তথ্য ছড়ানো শীর্ষ ১০টি ‘সুপারস্প্রেডার’ সাইট ফেইসবুকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো নির্ভরযোগ্য শীর্ষ ১০টি নির্ভরযোগ্য সাইটের তুলনায় চারগুণ বেশি ‘ভিউ’ পেয়েছে।

আর ভুল তথ্যের বিরাট অংশই এসেছে পাবলিক পেইজ থেকে। এমন ৪২টি পেইজে প্রায় দুই কোটি ৮০ লাখ অনুসারী রয়েছে।

এইসব পেইজে উল্লেখযোগ্য তথ্যের মধ্যে রয়েছে:

বিল গেটস এমন একটি পোলিও টিকাকে সমর্থন করেছেন যেটি ভারতে প্রায় পাঁচ লাখ শিশুকে পক্ষাঘাতগ্রস্থ করেছে। এই পোস্টের ভিউ সংখ্যা ৮৪ লাখ।

ইবোলার মতো মারাত্মক রোগের চিকিৎসায় কলয়েডাল সিলভারের ভুয়া চিকিৎসার পোস্ট দেখেছেন ৪৫ লাখ লোক।

কোয়ারেন্টিনে থাকই বরং জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি এমন বক্তব্যওয়ালা এক পোস্ট পেয়েছে ২৪ লাখ ভিউ।

গবেষণায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইতালি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে।

আভাজ-এর প্রচারণা পরিচালক ফাদি কুরআন বলছেন, “ফেসবুকের অ্যালগরিদম জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি।”

“মার্ক জাকারবার্গ মহামারী চলাকালীন নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অথচ তার অ্যালগরিদম ফেসবুকের ২৭০ কোটি ব্যবহারকারীর বড় একটি অংশকে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে ভুল তথ্য-প্রচারের নেটওয়ার্কগুলিতে টেনে নিয়ে এই উদ্যোগের ক্ষতি করছে।”

“ফেইসবুক যতোক্ষণ না তার অ্যালগরিদমকে বিষমুক্ত করছে ততক্ষণ এই তথ্য-মহামারীটি স্বাস্থগত মহামারীকে আরও খারাপ জায়গায় নিয়ে যাবে।” — যোগ করেছেন ফাদি কুরআন।

বিষাক্ত মিথ্যা

যে বা যারা ফেইসবুক প্ল্যাটফর্মে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ভুল তথ্য দেখেছেন তাদের প্রত্যেককে স্বাধীনভাবে যাচাই করা সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে হবে বলে মত উঠে এসেছে আভাজের প্রতিবেদনে। নিউজ ফিডে ভুল তথ্যওয়ালা পোস্টগুলির র‌্যাংকিং কমিয়ে সেগুলোর নাগাল সীমিত করা উচিৎ বলেও মত এসেছে গবেষণায়।

ওয়ার্ল্ড মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ফ্রাঙ্ক উলরিচ মন্টগোমরি বলেন, “টিকা কতটা সফল এই মহামারীটি তার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মারক হওয়া উচিৎ। অথচ টিকা বিরোধীরা ফেইসবুককে বিষাক্ত মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্ব ছড়িয়ে দিতে ব্যবহার করছে।”

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন অফ মেডিক্যাল স্পেশালিস্টস’-এর মহাসচিব ড. জোয়াও মিগুয়েল গ্রেনহো বলেছেন: “মার্ক জাকারবার্গকে এই তথ্য-মহামারী বন্ধে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে টিকার বিরুদ্ধে বিষিয়ে তোলা মানুষের সংখ্যা এতো বেড়ে যাবে যে এই মহামারী সামাল দেয়া যাবে না।”

ফেসবুক বলছে যে, তারা স্বাস্থ্যবিষয়ক ভুল তথ্যের বিস্তার রোধে উদ্যোগ নিচ্ছে এবং আপনি যদি ফেইসবুকের সার্চ বাক্সে “ভ্যাকসিন” শব্দটি লেখেন তবে আপনি নির্ভরযোগ্য তথ্যের দিকে দৃষ্টি রাখতে পারেন।

তবে এটাও সত্যি যে, ভুল তথ্য ছড়ানো হাজার হাজার গ্রুপ এবং ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়ার বেলায় ফেইসবুকের দিক থেকে আদতে কোনো বাধাই আসে না।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar