ad720-90

সাইবার অপরাধ: শিকার হলে কোথায় যাবেন, সাবধান থাকতে কী করবেন


“আমি তাকে বিশ্বাস করেছিলাম! সে বলতো, তুমি আর আমি তো একই। যা আমার তা তো তোমারই। মোবাইলের আনলক কোড জানলে সমস্যা কী?”

তরুণী বললেন, “আমি আমার সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে দেশবিদেশ সফর করেছি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। সব ছবি ফেইসবুকে ছিল। সব ডিলিট করে দিয়েছে।”

ভুক্তভোগী ০২: তরুণ, বয়স ২৫। তার ফেইসবুক থেকে ছবি ডাউনলোড করেছে কেউ একজন। তারপর সেই ছবি ব্যবহার করে তার নাম দিয়েই ভুয়া একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছে। সেখান থেকে তার বন্ধুদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। এরপর মূল অ্যাকাউন্টের মালিক সেজে লোকজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে।

“লোকজন তো মনে করতেছে ওইসব কথা আমি বলতেছি। আমার আত্মীয়স্বজনদের সাথেও খারাপ খারাপ কথা বলছে।”

ভুক্তভোগী ০৩: চল্লিশোর্ধ পুরুষ। বিকাশ এবং নগদ এজেন্ট। তাকে ফোন করে কেউ একজন বলেন যে তার অ্যাকাউন্ট লকড অবস্থায় আছে। আনলক করার জন্য কোড পাঠানোর পর সেই কোড জানতে চায় ফোনের অপর প্রান্ত থেকে। তিনি বিশ্বাস করেছিলেন বিকাশ অফিস থেকেই ওই কল এসেছে।

ভদ্রলোকের খোয়া গেছে কয়েক লাখ টাকা।

ভুক্তভোগী ০৪: ভুক্তভোগী একজন নারী। ফোন করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটে। তিনি বলছেন, তার আর আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। দুই মাস আগে ফেইসবুকে পরিচয় হয়েছে এমন একজন পুরুষ তাকে ফোনে এখন ভয় দেখাচ্ছেন। হুমকিদাতা থাকেন সৌদি আরবে। ইউনিটের হেল্প ডেস্কের একজন তাকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন, তিনি যেন বিচলিত না হন। ভদ্রলোক লিখে নিলেন অভিযোগ।

ভুক্তভোগী ০৫: বিশ পেরোনো তরুণ। বিক্রয় ডটকম-এম মাধ্যমে মোবাইল ফোন বিক্রি করেছেন। কিন্তু বিক্রি করার সময় ফেইসবুক, ইমেইল থেকে লগ আউট করেননি। ফোনের নতুন মালিক ফোনের সঙ্গে সঙ্গে তার ফেইসবুক আর মেইলের নাগাল পেয়েছেন এবং পরিচিত লোকদের কাছ থেকে আগের মালিক সেজে অর্থ ধার করছেন।

ভুক্তভোগী ০৬: কলেজ ছাত্রী। ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে। তার অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড ছিল ১২৩৪৫ তারপর নিজের নাম এবং তারপর #। কেউ একজন সেটি অনুমান করতে পেরেছেন।

ঢাকার রমনায় মেট্রোপলিটান পুলিশের সাইবারক্রাইম ইউনিটে তিন ঘণ্টার চিত্র এটি।

“প্রতিদিন এমন প্রায় ২০-২৫টি অভিযোগ পাই আমরা। এদের অধিকাংশই সামাজিক মাধ্যম সম্পর্কিত। এরসঙ্গে আছে মোবাইলভিত্তিক লেনদেনে প্রতারণার অভিযোগ।” – বলছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম। ২০১৬ সাল থেকে নতুন গঠিত সাইবার ক্রাইম ইউনিটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

 

নাজমুল বললেন, “দিন দিন অভিযোগ বাড়ছে এবং নারীরাই বেশি সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন।” কতোটা বেশি? উত্তর মিলল, শতকরা ৯০ ভাগ সাইবার অপরাধের শিকার নারীরা।

প্রশ্ন হলো, অপরাধও কি বাড়ছে নাকি সাইবার অপরাধের শিকার লোকজন এখন আগের চেয়ে বেশি অভিযোগ জানাতে আসছেন?

“হ্যা, লোকজন এখন জানেন যে এই ধরনের অপরাধে অভিযোগ করার জন্য নির্দ্রিষ্ট ইউনিট রয়েছে, সেটা একটা প্যারামিটার তো বটেই।” তবে তাদের হিসাব অনুসারে “অপরাধও বেড়েছে।” – বললেন নাজমুল।

সেই বৃদ্ধির হারটি কেমন? “এখন গড়ে প্রতিদিন অভিযোগ পাই ২০-২৫টি। মানে হলো মাসে গড়ে পাঁচশ’ অভিযোগ। সে হিসেবে বছরে হিসেবটি আসে প্রায় ছয় হাজার। আমি যখন প্রথম এই বিভাগে আসি তখন কয়েকশ’ ছিল অভিযোগ সংখ্যা।”

উল্লিখিত অভিযোগের পাশাপাশি রয়েছে সাইবার পর্নোগ্রাফি। এই ধরনের অপরাধে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীরা সাবেক প্রেমিকের প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন।

কেবল পর্নোগ্রাফি নয়, স্রেফ কারো চেহারা ব্যবহার করে ভিডিও তৈরির মাধ্যমে কুৎসা রটানোর মতো অভিযোগও তারা পান। আইনের চোখে সেটিও অপরাধ তো বটেই।

এই সব ধরনের অভিযোগেই এই সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ জানানো সম্ভব। ব্যক্তিগত পর্যায়ে সংঘটিত অপরাধের পাশাপাশি সাইবার জগতে জঙ্গী তৎপরতা, প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়েও এই একই ইউনিট কাজ করছে।

ব্যক্তিগত পর্যায়ে সংঘটিত সাইবার অপরাধ রোধ করার উপায় কী?

নিরাপত্তা ও অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার নির্মাতা ক্যাসপারস্কি নিরাপদ থাকার অনেক উপায় বাৎলে দিয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলোই ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় প্রতিদিনের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে আপনার কাজে আসবে। আসুন দেখে নেই সেই বিষয়গুলো-

০১. ডাউনলোডে সাবধান হোন: ওয়েব থেকে কী নামাচ্ছেন সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। একটু বেখেয়ালেই আপনার পিসি বা মোবাইল ফোনে নামিয়ে ফেলতে পারেন স্পাইওয়্যার বা ম্যালওয়্যার।

০২. শক্ত পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন: নিশ্চিত করুন আপনার পাসওয়ার্ডে অন্তত একটি ক্যাপিটাল লেটার, একটি স্মল লেটার ও একটি অঙ্ক/সংখ্যা রাখার। অনুমান করা সম্ভব এমন শব্দ বা সংখ্যা ব্যবহার করবেন না। যেমন আপনার বা কাছের কারো নাম, জন্ম তারিখ ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ – পাসওয়ার্ড বা কোড কখনও কারো সঙ্গে শেয়ার করবেন না।

০৩. অনলাইনে নতুন কার সঙ্গে আলাপ করছেন? : হ্যা, অনলাইনে নতুন কারো সঙ্গে আলাপ পরিচয়ে সতর্ক থাকুন। অনেক মানুষই অনলাইনে যে পরিচয় দেন, বাস্তবে তা নন। এর পেছনে অনেক সময়ই থাকে বদ মতলব। কাজেই সাবধান।

০৪. সতর্ক থাকুন অ্যাটাচমেন্ট ফাইলে: মেইল হোক বা অনলাইন চ্যাটিংয়ে অপরিচিত কারো কাছ থেকে পাওয়া অ্যাটাচমেন্ট ফাইল খুলবেন না, তা সে যতো লোভনীয়ই হোক না কেন। অনেক সময়ই এইসব ফাইলে থাকে পাসওয়ার্ড চুরি করার গেপন কোড, থাকতে পারে ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার।

আর হ্যা, ফোনে আসা কোনো পিন নম্বর, কোড বা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) কারে সঙ্গে শেয়ার করবেন না।

এই সতর্কতাগুলো মেনে চললে অনেকটাই নিরাপদ থাকা সম্ভব অনলাইন জীবনে।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar