ad720-90

মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে এবার গুগল-ওরাকল কপিরাইট লড়াই


বুধবার গুগল, ওরাকলের বক্তব্য শুনেছেন সুপ্রিম কোর্ট বিচারকরা, ক্ষেত্রবিশেষে ছুড়ে দিয়েছেন পাল্টা প্রশ্ন। মূলত গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে ওরাকলের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জাভা ব্যবহার করা নিয়ে বিবাদে জড়িয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি। ওরাকলের দাবি, এতে কপিরাইট লঙ্ঘিত হয়েছে। আর গুগলের ভাষ্যে, জাভার “ন্যায্য ব্যবহার’ করেছে তারা।

উল্লেখ্য, গুগল এবং ওরাকলের এ বিবাদকে এরইমধ্যে এ দশকের সবচেয়ে সেরা কপিরাইট লড়াইয়ের আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

“আমি উদ্বিগ্ন” জানিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বিচারক স্যামুয়েল এ, আলিটো জুনিয়র গুগলের এক আইনজীবিকে বলেন, “আপনাদের তর্ক অনুসারে, সব কম্পিউটার কোড সুরক্ষা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।”

প্রধান বিচারক জন জি. রবার্টস জুনিয়র আবার তুলে ধরেছেন অন্য একটি শঙ্কা। তিনি বলেন, “আমাদের বলা হয়েছে, আমরা যদি ওরাকলের সঙ্গে সম্মত হই, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি শিল্প ধ্বংস করে ফেলবো।”

নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, গুগল-ওরাকলের পুরো তর্ক-বিতর্কই টেলিফোনে শুনেছেন বিচারকরা। দুই পক্ষের দাবি খতিয়ে দেখতে স্বল্প-প্রযুক্তির উপমা ব্যবহার করেছেন তারা। প্রশ্নে সেফক্র্যাকিং, টাইপরাইটার, কিবোর্ড, রেস্টুরেন্ট মেন্যু, টেলিফোন সুইচবোর্ড, ফুটবল প্লেবুকের মতো উপমা ব্যবহার করেছেন বিচারকরা।

মামলায় গুগলের কাছে শত শত কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চাইছে ওরাকল। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, ওরাকলের সফটওয়্যার কোডের ১১ হাজার লাইন অবৈধভাবে নকল করেছে গুগল।

কয়েক বছর ধরেই চলছে এ মামলাটি। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্রান্সিসকোর জুরিরা গুগলের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, গুগল কপিরাইট লঙ্ঘন করেনি, কারণ কোডের “ন্যায্য ব্যবহার” হয়েছে। পরে ২০১৮ সালে ওয়াশিংটনের ‘ইউনাইটেড স্টেটস কোর্ট অফ আপিলস ফর দ্য ফেডারেল সার্কিট’ ওই বিশ্লেষণের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে।

বুধবারের তর্ক-বিতর্কে গুগল আইনজীবি টমাস সি. গোল্ডস্টিন বলেছেন, “এর জন্য কোনো কপিরাইট সুরক্ষা নেই। কম্পিউটার কোডের জন্য কার্যকরী হওয়ার এটাই একমাত্র পন্থা।”

প্রত্যুত্তরে প্রধান বিচারক রবার্টস বলেন, “সিন্দুকের তালা ভাঙা হয়তো পয়সা হাতানোর একমাত্র পন্থা, কিন্তু তার মানে এই নয় যে এটি আপনি করতে পারেন।”

গুগল আইনজীবি গোল্ডস্টিন পাল্টা উত্তরে বলেন, “আপনার কাছে যদি সিন্দুকের পেটেন্ট থাকে, আপনি আমাদের তা থেকে দূরে রাখতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি সিন্দুকের ব্যাপারে বই লিখেন যে কীভাবে সিন্দুক ভাঙা সম্ভব, তাহলে তা কিন্তু আপনাকে এটি করার মতো বিশেষ কোনো অধিকার দেয় না।”

পরে ভিন্ন উপমা ব্যবহার করে প্রধান বিচারক রবার্টস ওরাকল আইনজীবি ই. জশুয়া রসেনক্রানজ কে জিজ্ঞাসা করেন, “রেস্টুরেন্টের মেন্যু কি এভাবে কপিরাইট করা যায় যে এতে অ্যাপেটাইজার, প্রধান ডিশ এবং ডেসার্ট আলাদা করে দেখানো থাকবে?”

উত্তরে রসেনক্রানজ বলেন, “যদি সেটা প্রচলিত বিষয় হয় তবে তা কপিরাইট করা সম্ভব নয়।” এরপর তিনি যোগ করেন, জাভা কোডের ব্যাপারটি ভিন্ন। রসেনক্রানজ বলছেন, “এখানে অ্যাপস এবং ওখানে ডিনার প্লেটস” – ব্যাপারটি এতো সহজ নয়।

পুরো উত্তরটির সারমর্ম দাঁড়াচ্ছে, গুগল যেভাবে অনুমতি ছাড়া ওরাকলকে উপেক্ষা করে নিজের ইচ্ছামতো জাভা কোড ব্যবহার করেছে, ওরাকল সেটি সমর্থন করতে পারছে না।

অন্যদিকে বিচারক সোনিয়া সোটোমায়ার বলেন যে গুগল অনেক কোডই রূপান্তর করে নিয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন ফেডারেল সরকারের আইনজীবি ম্যালকম এল. স্টুয়ার্টকে। এর আগে ওরাকলের পক্ষ হয়ে লড়েছেন স্টুয়ার্ট। বিচারক সোটোমায়ো জানতে চান, কেন গুগলের কাজকে সমর্থন করছেন না তিনি?

উত্তরে স্টুয়ার্ট জানান, একেবারে নতুন ধরনের ব্যবহার হলেও কপিরাইট করা সামগ্রীর ব্যবহার আইনসম্মত নয়। “ধরে নিন নতুন কোনো চলচ্চিত্র শুধু হলে মুক্তি পেয়েছে, কেউ হয়তো সেটির প্রিন্ট পেলো এবং তা ইন্টারনেটে লাইভস্ট্রিম করলো। হিসেবে কিন্তু একই কনটেন্ট, কিন্তু ভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করা হয়েছে। এটি কিন্তু সমর্থনযোগ্য নয়।”

বিচারক সোটোমায়ো গুগল আইনজীবি গোল্ডস্টিনকে এক পর্যায়ে প্রশ্ন করেন, “তাদের আসল কাজ ব্যবহার করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে?”

বিচারক নেইল এম. গোরসাচও গুগলকে ছেড়ে কথা বলেননি। তিনি বলেছেন, গুগলের হাতে জাভা ব্যবহার বাদেও অন্য পথ খোলা ছিলো, “অন্যান্যরা এটি এড়িয়ে উদ্ভাবনের রাস্তা খুঁজে নিয়েছে।” অ্যাপল ও মাইক্রোসফটের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন যে “তারা ফোন নিয়ে আসতে পেরেছে এরকম কোনো নকল করা ছাড়াই।”

গুগলের কর্মকাণ্ড প্রশ্নে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন আরেক বিচারক ব্রেট এম. ক্যাভেনাও। তিনি বলেছেন, “শুধু ওভাবে গাইলেই গান হবে, এমন যুক্তিতে কোনো গান নকল করার অনুমোদন নেই আপনার।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar