ad720-90

মার্কিন নির্বাচন: বিপদ ঠেকাতে কী করছে সামাজিক মাধ্যমগুলো


কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই নিজ নিজ ভোট দাখিল করছেন ডাক মারফত। নজিরবিহীন সংখ্যক ভোট দাখিল হতে পারে এবার। ফলাফল ঘোষণা আনুষ্ঠানিকভাবে পিছিয়ে যেতে পারে কয়েক দিন, এমনকি কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত।

শঙ্কা রয়েছে এ সময়ের মধ্যে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে নাগরিক অস্থিরতা। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দুই পক্ষ থেকেই নিজেকে বিজয়ী দাবি করে বসার হুমকিও রয়েছে। ভুল তথ্যে সয়লাব হয়ে উঠতে পারে সামাজিক মাধ্যম। এমনকি ভুল তথ্যের মাসুল গুণতে হতে পারে মার্কিন নাগরিকদের প্রাণ হারানোর মধ্য দিয়ে।

সমস্যা সমাধানে কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে সামাজিক মাধ্যমের সেবা। কিন্তু সেটির শেষ পরিণতিও ভালো ফলাফল বয়ে আনবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। বিবিসি এক নিবন্ধে জানিয়েছে, হট্টগোল সামাল দিতে এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছে সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো।

টুইটার

টুইটার বলছে, নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল আসার আগ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীরা যাতে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা না করতে পারেন, অন্তত তাদের প্ল্যাটফর্মে, সেটি নিশ্চিত করবে তারা। এ ছাড়াও নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে এমন কোনো কনটেন্ট প্রার্থীকে টুইট ও রিটুইট করতে দেবে না মাইক্রোব্লগিং সাইট খ্যাত এ প্রতিষ্ঠানটি।

টুইটারের এ নিয়ম ভাঙলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে তারা। না, টুইট সরাবে না তারা, শুধু লেবেল জুড়ে দেবে ওই টুইটে। অন্তত সেটাই মনে হচ্ছে, টুইটারের ভাষ্যে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, নিয়ম ভাঙলেই নির্বাচন সম্পর্কিত নির্ভুল ‘আপ-টু-ডেট’ তথ্য ওই টুইটে দেখানোর ব্যবস্থা করবে তারা।

ফেইসবুক

মার্কিন নির্বাচন নিয়ে সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে রয়েছে ফেইসবুক। গত মাসে ফেইসবুকের নিক ক্লেইগ জানিয়েছিলেন, চরম মুহূর্তের জন্য কিছু “ব্রেক-গ্লাস অপশন” তাদের হাতে হাতে রয়েছে। কিন্তু সে অপশন আদতে কী, তা জানাতে রাজি নন তারা।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন বলছে, পরিকল্পনায় নিজেদের নিউজ ফিড পরিবর্তন করে দেওয়ার কথাও ভেবেছে ফেইসবুক। এভাবে সহিংসতা ও ভুয়া খবরের ভাইরাল পোস্ট ঠেকানোর চেষ্টা করবে প্রতিষ্ঠানটি। নির্বাচনী ফলাফলের সময়টিকে কাজে লাগিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু ‘হ্যাশট্যাগ’ ডিঅ্যাক্টিভেট করে দিতে পারে মার্কিন এ সামাজিক মাধ্যম জায়ান্ট।

পোস্ট মুছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের যে নীতি রয়েছে, সেটিকেও শিথীল করবে ফেইসবুক। ফলে বিপজ্জনক পোস্ট মুছতে সুবিধা হবে তাদের।

কৌশলগুলো আগেও ব্যবহার করেছে ফেইসবুক। শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের নির্বাচনে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখেছে তারা। এ ছাড়াও ভুল তথ্যে লেবেল জুড়ে দেওয়ার কাজটি অব্যাহত থাকছে।

নির্বাচনের সময়টিতে ভুল তথ্য সামাল দিতে রয়টার্সের সঙ্গেও জোট বেঁধেছে প্রতিষ্ঠানটি।

রেডিট

মার্কিন নির্বাচনকে ঘিরে ফেইসবুক ও টুইটারের চেয়ে কঠোর হয়েছে ইন্টারনেটের প্রথম পাতা খ্যাত সামাজিক মাধ্যম রেডিট। নির্বাচনের ফলাফলকে ঘিরে কোনো ভুল তথ্য বা ভুল উপস্থাপন সহ্য করা হবে না বলে আগাম জানিয়ে রেখেছে সাইটটি। সরাসরি এরকম পোস্ট মুছে দেবে তারা।

নির্বাচনের পরে কী হচ্ছে তা ব্যবহারকারীদের জানাতে একটি পেইজও রাখছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়াও নির্বাচন পরবর্তী দিন থেকেই ‘আস্ক মি এনিথিং’ নামে ধারাবাহিক সেশন আয়োজন করবে রেডিট। নির্বাচন সম্পর্কিত প্রশ্নে উত্তর দেবেন ভোটিং বিশেষজ্ঞরা।

গুগল এবং ইউটিউব

গুগল এরইমধ্যে নির্বাচন ফলাফল সম্পর্কিত তথ্য জানাতে জোট বেঁধেছে সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সঙ্গে। কোনো ব্যবহারকারী “কে জিতেছে” প্রশ্ন ছুড়লেই, তাকে সোজা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের আপডেটেড ফলাফল দেখাবে প্রতিষ্ঠানটি।

নির্বাচন, ফলাফল, প্রার্থী সম্পর্কিত সব বিজ্ঞাপনেও লাগাম টানছে গুগল। নির্বাচন পরবর্তী ভ্রান্তি দূর করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়াও নিজেদের পরিষেবায় মেইল-ইন ব্যালট বা ডাক যোগে ভোট দেওয়ার কারণে নির্বাচন ফলাফল পরিবর্তন হয়ে গেছে এমন বিভ্রান্তিকর দাবি কোনো পোস্টে এলে, সেটি মুছে দেবে সার্চ জায়ান্ট খ্যাত প্রতিষ্ঠানটি।

সহিংসতায় ইন্ধন যোগায় এমন কনটেন্টের লাগাম টানতে আগে থেকেই জারি রাখা নিয়ম অনুসরণ করবে বলেও জানিয়েছে গুগল। হিসেবে টুইটার ও ফেইসবুকের জন্য বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছে গুগল।

স্ন্যাপচ্যাট

স্ন্যাপচ্যাট অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের তুলনায় একটু ভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। প্ল্যাটফর্মটির গতানুগতিক কোনো নিউজ ফিড নেই, ভুল তথ্য ভাইরাল হওয়ারও আশঙ্কা কম। তারপরও নিজেদের ‘তারকা’ ব্যবহারকারীদের সাবধান করছে সামাজিক মাধ্যমটি।

স্ন্যাপচ্যাটের তারকা ব্যবহারকারীদের কনটেন্ট সামাজিক মাধ্যম অ্যাপটির ‘ডিসকভার’ অংশে এসে হাজির হয়। তারকা ব্যবহারকারীরা যাতে অনিচ্ছাকৃতভাবেও এমন কোনো পোস্ট না দেন, যা নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়াতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে মাঠে নেমেছে প্রতিষ্ঠানটি।

সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মটি আরও জানিয়েছে, অভ্যন্তরীন টাস্ক-ফোর্সকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যারা “প্ল্যাটফর্মটিকে যে কোনো ধরনের অপব্যবহারের হাত থেকে রক্ষা করবে।”  

টিকটক

মার্কিন নির্বাচন প্রশ্নে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে টিকটকও। সামাজিক ভিডিও অ্যাপটি জানিয়েছে, নির্বাচন চলাকালে স্বাধীন সত্যতা যাচাইকারীদের সঙ্গে কাজ করছে তারা। ২০২০ সালের নির্বাচন সম্পর্কিত সব ভুল তথ্য সরানোর আশ্বাসও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

নিজেদের সেবায় নির্বাচন ভুল তথ্য সম্পর্কিত এক অপশনও যোগ করছে টিকটক। এর সাহায্যে ব্যবহারকারীরা ভুল তথ্যের কনটেন্ট সম্পর্কে টিকটককে জানিয়ে দিতে পারবেন।

টিকটক বলেছে, “এরকম গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমরা আমাদের প্ল্যাটফর্মের বিশুদ্ধতা বজায় রেখে কমিউনিটিকে সমর্থন জানাতে চাচ্ছি।”

এক কথায় বলা চলে, সব সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানই নির্বাচনের ব্যাপারে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, এবং এর পরবর্তী সময়টিকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছে। নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের হলেও গোটা বিশ্বই তাকিয়ে থাকে ফলাফলের দিকে। এর পেছনে অবশ্য কারণও রয়েছে। বিশ্ব রাজনীতির অনেককিছুই নির্ভর করে পাঁচ মোড়লের এক হিসেবে পরিচিত এ দেশটির প্রেসিডেন্টের উপর।

আদৌ সামাজিক মাধ্যম মার্কিন নির্বাচন প্রশ্নে যথেষ্ট সতর্কতা পদক্ষেপ নিতে পেরেছে কি না, তার প্রমাণও মিলবে সামনেই।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar