ad720-90

সৌদিতে গুগল ক্লাউড প্রকল্পে মানবাধিকার জোটের ‘না’


গত বছরের শেষের দিকে গুগল সৌদি আরামকোর সঙ্গে অংশীদারিত্বে দেশটিতে একটি ‘ক্লাউড অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ঘোষণা করে। গুগল বলেছে, রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসাবে দেওয়া সুবিধা এ অঞ্চলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে “আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাদের পরিষেবা বাড়ানোর” সুযোগ দেবে।

কিন্তু, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ মানবাধিকার সমর্থক বিভিন্ন সংগঠন এই চুক্তির সমালোচনা করেছে। তারা ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগজিকে হত্যার ঘটনা এবং সৌদি আরবে ভিন্নমতাবলম্বীদের উপর গুপ্তচরবৃত্তির জন্য সাইবার সরঞ্জাম ব্যবহার করার বিষয়টি সামনে এনেছে।

“সৌদি আরবে একটি গুগল ক্লাউড অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্য অসংখ্য মানবাধিকার ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গোপনতার অধিকার লঙ্ঘন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং যোগাযোগ, বৈষম্যহীনতার অধিকার এবং এসব বিষয়ে যথাযথ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণের বিষয়টি রয়েছে ঝুঁকির তালিকায়”– বুধবার এক বিবৃতিতে দলগুলো বলেছে।

গুগল এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া দেয়নি। কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গুগলের একটি প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে যেখানে গুগল বলছে, সৌদি আরবে ক্লাউড প্রকল্পের জন্য প্রতিষ্ঠানটি একটি স্বাধীন মানবাধিকার মূল্যায়ন করেছে এবং “সেই পর্যালোচনার অংশ হিসাবে চিহ্নিত বিষয়গুলি সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে।”

কিন্তু, জোটের দাবি, গুগল ওই পর্যালোচনার অংশ হিসাবে স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করুক এবং এর ফলাফল প্রকাশ করুক। পাশাপাশি, সৌদি সরকার যদি “মানবাধিকারের প্রচলিত নিয়মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক” কোন অনুরোধ করে, সেটি কীভাবে গুগল সামলাবে তা-ও পরিষ্কার করে বলার দাবি আছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিএনএন।

গুগল ক্লাউড গত বছর লোকসান করলেও এর জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে। গত বছর এ থেকে এক হাজার তিনশ’ কোটি ডলার আয় হয়েছে যা এক বছর আগেই নয়শ’ কোটি ডলার ছিল। এ থেকে গুগলের মোট আয়ের এক পঞ্চমাংশ আসছে।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তার ‘ভিশন ২০৩০’ অর্থনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিশ্বের বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তার দেশে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটের ভিতরে সৌদি এজেন্টদের হাতে খাশোগজি হত্যাকাণ্ডের পর অনেক প্রতিষ্ঠানই পিছু হটেছে।

খাশোগজি হত্যার আদেশ দেওয়ার বিষয়টি যুবরাজ অস্বীকার করলেও তিনি বলেছেন, ওই ঘটনার দায় তার ওপরও বর্তায়।

২০১৯ সালে সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এটি একটি জঘন্য অপরাধ। কিন্তু আমি সৌদি আরবে একজন নেতা হিসেবে সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছি, বিশেষ করে যেহেতু এটি সৌদি সরকারের হয়ে কাজ করা ব্যক্তিরাই ঘটিয়েছেন।”

অধিকার সমর্থক সংগঠনগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনে সৌদি আরবের “নিজ নাগরিকদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করার ব্যাপক রেকর্ড” নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ২০১৯ সালে দুই সাবেক টুইটার কর্মীর সৌদি ভিন্নমতাবলম্বীদের সম্পর্কে সংবেদনশীল এবং গোপন তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছিল।

“আমরা আশঙ্কা করছি, সৌদি সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বে গুগল ভবিষ্যতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়বে যা সৌদি আরব এবং মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের জনগণকে প্রভাবিত করবে।” বিবৃতিতে বলেছে জোটটি।

সিবিএস-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বিন সালমান দাবি করেছিলেন, সৌদি আরব মানবাধিকার সমর্থন করে না, বিশেষ করে নারীদের বেলায়, এমন ধারণা ভুল।

“সৌদি আরব সম্পর্কে অন্যদের এই ধারণা আমাকে কষ্ট দেয়। যখন কিছু লোক খুব সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে ছবিটি দেখেন তখন আমার কষ্ট হয়,” যুবরাজ বলেন।

“আমি আশা করি সবাই সৌদি আরবে আসবেন, বাস্তবতা দেখবেন এবং নারী ও সৌদি নাগরিকদের সঙ্গে দেখা করবেন এবং নিজেদের জন্য বিচারকদের সঙ্গে দেখা করবেন।”





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar