ad720-90

দু’জনের সময়ের মিল কাকতাল মাত্র: স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন


কেবল তা-ই নয়, নিজের মহাকাশ যাত্রা স্বচক্ষে দেখার জন্য জেফ বেজোসকে স্যার রিচার্ড আমন্ত্রণও জানিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে জানাচ্ছে সিএনএন।

শুক্রবার সিএনএন-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ব্র্যানসন বলেন, ভার্জিন গ্যালাকটিকে তার দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত মহাকাশ যাত্রা বেজোসের সঙ্গে কয়েক দিনের ব্যবধান হওয়াটি “কাকতাল মাত্র”। এর সঙ্গে বেজোসের দিনক্ষণের কোনো সম্পর্ক নেই বলেই জানালেন এই অভিযাত্রী। বেজোস গত মাসেই ঘোষণা করেছেন নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিনে তিনি জুলাইয়ের ২০ তারিখে যাত্রা করবেন।

“আমি নিশ্চিত করে জানি না ঠিক কবে জেফ বেজোস যাত্রা করছেন। উনি আমাদের আগেও যেতে পারেন।”- সিএনএন-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলছিলেন ভূপর্যটনসূত্রে স্যামসোনাইটের এক সময়ের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ব্র্যানসন। “আমি তো বরং চাইবো বেজোস চলে আসুন আমাদের উৎক্ষেপণ দেখতে, সেটা যে সময়েই হোক।”

“তবে, সত্যিকার অর্থে আমি একে মহাকাশযাত্রায় প্রতিদ্বন্দ্বীতা হিসেবে দেখি না।”

ব্র্যানসন আরো যোগ করেন, “আমি নিজেও চাইবো তার উৎক্ষেপণ দেখার জন্য চলে যেতে। আমার মনে হয়, আমরা দু’জনেই পরস্পরের মঙ্গল কামনা করি।”

সেই ২০০০-এর শুরু থেকেই ব্র্যানসন এবং বেজোস দুজনেই চেষ্টা করছেন পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ বলের প্রান্ত পর্যন্ত নভোপর্যটন অভিযান পরিচালনার উপায় খুঁজে বের করতে। ধনী এবং দুঃসাহসীদের লক্ষ্য করে তৈরি এই পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত বিলিয়নেয়ারদের মহাকাশ প্রতিযোগিতার তকমা পায়।

স্পেসএক্স-এর সিইও ইলন মাস্কের নামও অনেক সময় ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে এই নভোমণ্ডলে ইঁদুর দৌড়ের তালিকায়। তবে, সত্যি কথা হলো, ইলন মাস্ক খেলছেন একেবারেই ভিন্ন মাঠে, বা বলা চলে ভিন্ন আকাশে। স্পেসএক্স যে রকেট তৈরি করে, সেগুলো বেজোস বা ব্র্যানসসনের রকেটের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। মাস্ক নিজেও নভোযাত্রা নিয়ে তেমন কিছু বলেননি। অনেক আগে, একবার কেবল তিনি বলেছিলেন, তিনি মৃত্যুবরণ করতে চান মঙ্গল গ্রহে, তবে কোনো আঘাতে নয়!‍

বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে ব্র্যানসন একাধিকবারই বলেছেন মহাকাশ যাত্রায় কোনো রকমের প্রতিযোগিতার মধ্যে তিনি নেই। কিন্তু, এ বছরের শুরুতেই যখন গোটা বছরের পরিকল্পনা প্রকাশ করে ভার্জিন গ্যালাকটিক, সে তালিকায় নামগন্ধ ছিলো না এই ১১ তারিখের অভিযানের। সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে তিনি কেবল বলেছেন, বেজোসের আগে মহাকাশে যাওয়ার জন্য নিরাপত্তার সঙ্গে কোনো রকমের আপোস করা হচ্ছে এমন মনে করা হবে “একেবারেই ভুল”।

“আপনাদের মনে রাখা দরকার, ভার্জিন গ্যালাকটিকের প্রতিটি ফ্লাইটেই লোকজন ছিল। … ফ্লাইটে আমিও আছি এই বিষয়টিই ভরসা যোগায়।” ব্র্যানসন বলেন, “আমার মনে হয়, মালিকের অন্তত উচিৎ নিজের লোকজনের সঙ্গে ভ্রমণ করা।”

ভার্জিন গ্যালাকটিক

ভার্জিন গ্যালাকটিক

ভার্জিন গ্যালাকটিকের স্পেস প্লেন, যেটিকে স্পেসশিপ টু নাম দেওয়া হয়েছে, সেটি নিয়ে গবেষণা চলেছে এক দশকের বেশি সময় ধরে। ব্লু অরিজিনের চেয়ে এর কার্যক্রমও একেবারে আলাদা। ব্লু অরিজিনের রকেট মানবশূন্য অবস্থায়ও লঞ্চপ্যাড থেকে উল্লম্বভাবে যাত্রা করতে পারে।

স্পেসশিপ টু যাত্রা শুরু করে রানওয়ে থেকে, বিশেষভাবে ডিজাইন করা দুই ফিউসিলাজ আর চার ইঞ্জিনযুক্ত বিশাল জেট প্লেনের ডানার নিচে থেকে। এই মাদারশিপের নাম হোয়াইটনাইট টু। এই মাদারশিপ ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪০ হাজার ফিট উচ্চতায় পৌঁছানোর পর মাদারশিপ তার ডানার নিচ থেকে রকেটশিপকে ছেড়ে দেয় এবং সঙ্গেসঙ্গেই এর রকেটইঞ্জিন চালু হয় এবং সোজা উপরে উঠতে থাকে। গতি বাড়তে বাড়তে একসময় ঘণ্টায় তিন হাজার সাতশ’ কিলোমিটার বা শব্দের তিনগুণ গতি পায়। এই গতিতে একসময় মধ্যাকর্ষণের প্রায় প্রান্তে পৌঁছে যায় স্পেসশিপ টু। এই মাইক্রোগ্র্যাভিটি অঞ্চল থেকে এটি সোজা হয় এবং গ্লাইডিং করে নামতে থাকে রানওয়েতে ল্যান্ডিংয়ের জন্য। টেইকঅফ থেকে ফের ভূমিতে নেমে আসা পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা।

দীর্ঘদিন আগে থেকেই ভার্জিন গ্যালাকটিক আগ্রহীদের জন্য অর্থের বিনিময়ে ভ্রমণে নেওয়ার পরিকল্পনা করে আসছে। তবে, কয়েকবারই এর পরিকল্পনা পিছিয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালে এক দুর্ঘটনায় এক সহকারী পাইলটের প্রাণও গেছে।

এরপরও প্রায় ছয়শ’ আগ্রহী ব্যক্তি লাইন ধরেছেন স্যার রিচার্ডের দরোজায়। একএকটি সিটের জন্য খরচ হবে দুই থেকে আড়াই লাখ ডলার। ভার্জিন গ্যালাকটিক বলছে, তাদের ধারণা, একবার যাত্রা শুরু করার পর ক্রেতার চাপ আরও বাড়বে, যদিও ওই সময়ে টিকেটের দামও আরও বাড়বে।

বেজোসের ব্লু অরিজিন এখনও টিকেট বিক্রির কথা কিছু বলেনি। তবে আসন্ন ফ্লাইটের একটি টিকেট বিক্রি হয়েছে অনলাইন নিলামে দুই কোটি ৮০ লাখ ডলারে, যদিও ক্রেতার নামপরিচয় এখনও প্রকাশ পায়নি। জেফ বেজোস, তার ভাই মার্ক, নিলাম বিজয়ী এবং ওয়ালি ফাঙ্ক নামে ৮২ বছর বয়সী এক নারী পাইলট যাবেন পরিকল্পিত ফ্লাইটে। ষাটের দশকে ‘মার্কারি ১৩’ অভিযানে ওয়ালি’র মহাকাশে যাওয়ার কথা ছিল। তিনি প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন কিন্তু তিনি কখনোই অভিযানে যাওয়ার সুযোগ পাননি।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar