ad720-90

শিশুর শৈশব কেড়ে নিচ্ছে প্রযুক্তি ?


ডিএমপি নিউজঃ একবিংশ শতাব্দীর জয়জয়কার চলছে ইন্টারনেট দুনিয়ায়। সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেটের ব্যাপক বিস্তৃতি ও ঘরে ঘরে অনলাইন ব্যবস্থা চালু হওয়ায় ইন্টারনেট ব্যবহারের সহজলভ্যতা এসেছে। এখন যেন সমস্ত পৃথিবী ঝুঁকে পড়েছে ইন্টারনেটে। এর প্রভাব থেকে বাদ পড়েনি কোমলমতি শিশুরাও। এই ইন্টারনেট বধ করেছে তাদের শৈশবকেও। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা  শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। যেটি আমাদের দেশের শিশুদের মধ্যেও সাম্প্রতিক সময় অতিমাত্রায় দেখা যাচ্ছে। শিশুকিশোররা ইউটিউব, ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারের মতো অ্যাপসগুলো তাদের ইচ্ছেমত ব্যবহার করছে। আর এগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে তারা বাসার কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন ব্রাউজ করছে।  থাকছেনা কোন ভয়ভীতি ও শ্রদ্ধা বা পরিমিতিবোধ।

শিশুরা কিভাবে পাচ্ছে ইন্টারনেটের ধারণাঃ

আপনার কোমল এই শিশুটি তার জীবনের শুরুতেই কিভাবে পাচ্ছে ইন্টারনেটের ধারণা। এই ধারণাটা কি আপনিই তাকে দিচ্ছেন? একবার ভাবুনতো, অনেক বাবা-মা মনে করেন আমার সন্তান এতো অল্প বয়সেই মোবাইল ল্যাপটপ সবকিছু ব্যবহার করতে পারে। এই নিয়ে অনেকে গর্ববোধ করে। মনে করেন সন্তান কত স্মার্ট। কিন্তু প্রযুক্তির এই আসক্তি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আপনার সন্তানকে। যাই হোক, আমরা যেভাবে আদর সোহাগের ছলে সন্তানকে ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি করে তুলছি, বলছি তা নিয়ে। অনেক বাবা-মা তাদের  শিশু সন্তানকে শান্ত রাখতে স্মার্ট ফোনে বিভিন্ন  ভিডিও বের করে দেখতে দেয়। এতে শিশুর মধ্যে প্রযুক্তি উপভোগ করার অভ্যাস গড়ে উঠে। কেউবা সন্তানদের নিরাপত্তাহীনতার কথা চিন্তা করে তাদেরকে বাহিরে যেতে দেয়না। শিশুটি বন্দি হয়ে পড়ে ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে। আর এই সময় শিশুরা ঘরের ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও মোবাইল স্মার্ট ফোনের মধ্যে আসক্ত হয়ে পড়ে। এছাড়াও বাবা-মা, বড় ভাই-বোন যখন দিনরাত ইন্টারনেট নির্ভর ফেসবুক, ইউটিউব ব্যবহারে মগ্ন থাকে। তখন শিশুরা তা দেখে-দেখে ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে।  

আর আসক্ত হওয়ার পর ইন্টারনেটে কি খুঁজে শিশুরাঃ

ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও পারিবারিক দৃঢ়তার অভাবে আজকালের শিশুরা একেবারে ইন্টারনেটভিত্তিক বিনোদনে আশ্রয় খুঁজছে। পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার পর শিশুরা সহজেই ইউটিউব, ফেইসবুক ইত্যাদি ব্যবহার করছে। শিশুরা এখন বুঝতে পারে ইউটিউবে, গুগলে যা সার্চ দেওয়া হয় তাই আসে। কেউ ব্রাউজ করছে বিভিন্ন গেমস, কেউবা খুঁজছে কার্টুন ও শিক্ষা বিষয়ক অনুষ্ঠান কিন্তু এগুলো বের করতে গিয়ে নানা ধরনের খারাপ সাইটে ঢুকে পড়তে পারে তারা। অনেকে আসক্ত হয়ে পড়ছে পর্নো সাইটগুলোতেও। অথচ যা তাদের জানারই কথা ছিল না এই বয়সে। কিশোররা ফেইসবুকে বিভিন্ন ছেলে-মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করছে, তাদের মধ্যে কেউ ভালো, কেউ বা খারাপ। কিশোররা ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে বিভিন্ন বাজে চ্যাটিং ও খারাপ ছবিরও আদান-প্রদান করছে পিতা-মাতার অগোচরেই। এইগুলো আবার ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন বখাটেদের হাতে থাকা মোবাইল ফোনে। যার প্রভাব পড়ছে সমাজে। ঘটছে যৌন নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণ ও খুনের মতো ঘটনা। এমনকি ধর্মীয় আদর্শের ভুল ব্যাখ্যায় প্ররোচিত হয়ে নানা ধ্বংসাত্মক কাজেও লিপ্ত হতে পারে। কেননা সে ঐ বয়সে যা দেখবে, শুনবে তার মনমানসিকতা তাকে ঐভাবে ভাবতে শুরু করাবে। 

শিশুদের ইন্টারনেটের আসক্তি থেকে ফেরাতে কি করবেনঃ

বাবা-মার সাথে পারিবারিক দূরত্বের কারণে শিশুটি ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়তে পারে। বাবা মা যদি শিশুকে একা ফেলে কর্মক্ষেত্রে চলে যায় তখন একাকি শিশুটির ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রতি কোন বাধাই থাকে না। যা পরিবারের সবার লক্ষ্য রাখা উচিত। শিশুদেরকে ইন্টারনেটে দৈনিক একটি নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখতে দেওয়া যেতে পারে। মাঝে মাঝে শিশুদেরকে নিয়ে বাইরে বেড়াতে যান। শিশুদের বন্ধু হোন। তাদেরকে বই উপহার দিন, প্রযুক্তিগত ডিভাইস শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। শিশুদেরকে কিছুতেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, যাতে পারদর্শী শিশুরা সহজেই এগুলো ব্যবহার করতে না পারে।

এই শিশুটিই ভবিষ্যতের কর্ণধার। তাদেরকে সমাজে সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে দেওয়াটাও এই সমাজেরই দায়িত্ব। তাই আপনার সন্তানের প্রতি যত্নবান হওয়াটা জরুরী।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar