ad720-90

ঘরে বসেই গ্রাহকরা পাচ্ছেন ল্যান্ডফোন!


আলীমুজ্জামান হারুন: বিটিসিএলের টেলিসেবা অ্যাপের মাধ্যমেই উন্নত বিশ্বের মত ঘরে বসেই গ্রাহকরা ল্যান্ডফোনের সংযোগ নিতে পারবেন। এই অ্যাপের সহায়তায় আগামী এপ্রিলে শেরেবাংলা নগরের গ্রাহকদের জন্য এই সুবিধা উন্মুক্ত করা হবে। সহসাই পুরো দেশে সংযোগ নেওয়ার প্রক্রিয়া অটোমেশন করা হবে । এই অ্যাপের আধুনিকায়নের কাজ চলছে ।
যা গ্রাহকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে । সুফল পেয়ে অনেক গ্রাহক বেজায় খুশি বিটিসিএলের ওপরে ।

বিটিসিএল সুত্রে জানা গেছে , এই অ্যাপে অভিযোগ করলে দুই দিনের মধ্যে গ্রাহকের ফেনের সমস্যার সমাধান হবে। না হলে এর পরের দিন ওই অঞ্চলের প্রধানের কাছে পৌঁছে যাবে অভিযোগ। এর এক দিনের মধ্যে সমাধান না হলে বিটিসিএলের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে চলে আসবে অভিযোগ। তাই অজুহাত দেখিয়ে গ্রাহকের অভিযোগ ফেলে রাখার সুযোগ নেই। গ্রাহক প্রতিনিয়ত জানতে পারছেন তার অভিযোগ কোন টেবিলে আছে। প্রধান কার্যালয়ে একটি টিম তৈরি করা হয়েছে এই টেলিঅ্যাপে আসা গ্রাহকের অভিযোগ মনিটরিংয়ের জন্য।

বিটিসিএলের গ্রাহক সেবার মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা অসন্তুষ্টি ছিল। এ অবস্থা দূর করতে চালু করা হয়েছে অ্যানড্রয়েড অ্যাপ ‘টেলিসেবা’। এই অ্যাপ বিটিসিএলের গ্রাহক সেবার চিত্র বদলে দিয়েছে।

বিটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, নতুন সংযোগের পাশাপাশি টেলিফোনের পুনঃ সংযোগের ক্ষেত্রেও গ্রাহকদের জন্য এই অফার দেওয়া হচ্ছে। ২০১৯ সালের আগস্ট মাস থেকে বিটিসিএলের ল্যান্ডফোনের মাসিক লাইন ভাড়া তুলে দেওয়া হয়। এর পরিবর্তে প্রতি মাসে ১৫০ টাকায় বিটিসিএলের ল্যান্ডফোন থেকে ল্যান্ডফোনে কথা বলার সুবিধা চালু করা হয়। এ ছাড়া বিটিসিএল থেকে অন্য যেকোনো মোবাইল ফোন অপারেটরে প্রতি মিনিটে ৫২ পয়সায় কথা বলার সুবিধা চালু হয়।

এদিকে ফের গতি ফিরে এসেছে বিটিসিএলে ( সাবেক টিএন্ডটি )। দেয়া হয়েছে নতুন এমডি । করা হয়েছে পদোন্নতি দিয়ে বেশ কয়েকজন ডিএমডি । জোরে সোরে চলছে সারা দেশে নতুন নেটওয়ার্ক এক্সচেঞ্জ স্থাপনের কাজ । বিটিসিএল বেশ কয়েকটি নয়া প্রকল্পের হাতে নিয়েছে । যার কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে । যার মধ্যে অন্যতম ২ হাজার ৫শ‍‍‌‌‌‌ ৭৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প যার নাম “মর্ডানাইজেশন অফ টেলিকমিউনেকেশন নেটওয়ার্ক” (এমওটিএন) । এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে টেলিযোগাযোগ খাতে সেবা প্রদান, সেবার নির্ভরযোগ্যতা, নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা এবং ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ সব ক্ষেত্রেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। পুরাতন এক্মচেঞ্জগুলো পরিবর্তন করে অত্যাধুনিক করা হচ্ছে । এতে থাকবে নানা সুবিধা ।

বিনামূল্যে ল্যান্ডফোন সংযোগ ও পুনঃসংযোগের ঘোষণা করা হয়েছে। ওই ঘোষণার পর থেকে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডে (বিটিসিএল) গ্রাহকদের আবেদন জমা পড়তে শুরু করে। বিটিসিএলের জনসংযোগ বিভাগের জিএম মীর মোরশেদ জানান, নতুন সংযোগ পেতে গ্রাহকদের বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। পুরনো সংযোগ নতুন করে পেতে গ্রাহকেরও সাড়া কম নয়। সব মিলিয়ে আবেদনের পরিমাণ সন্তোষজনক।

উল্লেখ্য, গত ২২ অক্টোবর ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এ সিদ্ধান্ত দেন। তারপর থেকে দেওয়া শুরু হয় সংযোগ ও পুনঃসংযোগ।

মুজিব বর্ষে বিটিসিএলের ‘ফ্রি টেলিকম’ সেবার উদ্বোধন করা হয়। এর মাধ্যমে বিটিসিএলের ল্যান্ডফোন সংযোগ বিনামূল্যে পাবেন সারাদেশের গ্রাহকরা। এর পাশাপাশি নতুন একটি অ্যাপও উদ্বোধন করা হয় ওই অনুষ্ঠানে যার মাধ্যমে বিটিসিএলের গ্রাহকরা ল্যান্ড ফোন সেবা নিয়ে তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার লাস্টনিউজবিডিকে বলেন, অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি। প্রতিদিনই নতুন সংযোগ পেতে আবেদন জমা পড়ছে। এছাড়া পুনঃসংযোগ নিতেও আগ্রহ দেখা গেছে ল্যান্ডফোন ব্যবহারকারীদের। তিনি বলেন, এমনিতেই আমরা ল্যান্ডফোন টু ল্যান্ডফোন কল মাসে ১৫০ টাকায় বেঁধে দিয়েছি প্যাকেজ হিসেবে। কোনও মাসিক লাইন রেন্ট নেই। অনেকে ভেবেছিলেন বিটিসিএলের ক্ষতি হবে। আসলে হয়েছে উল্টো। কারণ ল্যান্ডফোন থেকে প্রচুর কল যাচ্ছে মোবাইল ফোনে। এই চার্জ প্যাকেজের বাইরে। ফলে সেখান থেকে রাজস্ব ভাগাভাগি হবে।

মন্ত্রী মনে করেন, এই উদ্যোগের ফলে বিটিসিএলের হারানো গৌরব ফিরবে, আরও বেশি লাভজনক হবে প্রতিষ্ঠানটি। মন্ত্রী জানান, পুরনো লাইনের সংযোগ তথা পুনঃসংযোগ বিনা খরচে নেওয়া যাবে। তবে কোনও বিল বকেয়া থাকলে তা পরিশোধ করতে হবে। বিল বকেয়া থাকলে পুনঃসংযোগ দেওয়া যাবে না।

মন্ত্রী বলেন, তিনটা প্রতিষ্ঠান- সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড, টেলিটক ও বিটিসিএলকে (ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের কোম্পানি) গতি ফিরে পেয়েছে । অচীরেই টেশিসও (টেলিফোন শিল্প সংস্থা) আরো ভাল করবে । যদিও মন্ত্রী উল্লেখ করেন, টেশিস গত বছর লাভ করেছে। ফলে এটিও আমাদের লাইনে চলে আসবে। দোয়েল ল্যাপটপ ও স্মার্টফোন দিয়ে টেশিস অনেক দূরে এগিয়ে যাবে।

জানা গেছে, রাজধানীর গুলশান এক্সচেঞ্জে গত ৭ ও ৮ ডিসেম্বর নতুন সংযোগ পেতে ৯টি আবেদন জমা পড়ে। অন্যদিকে শেরে বাংলা নগর এক্সচেঞ্জে দুই সপ্তাহে নতুন সংযোগ পেতে ১৮০টি আবেদন জমা পড়ে। অন্যান্য এক্সচেঞ্জেও আবেদন জমা পড়ার হার এমন বলে জানা গেছে বিটিসিএল সূত্রে।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে বিটিসিএলের গ্রাহক ছিল ১০ লাখের বেশি। ২০১১ সালে তা দাঁড়ায় ৯ লাখ ৪৩ হাজারে। ২০১৬ সালে বিটিসিএলের গ্রাহক ছিল ৭ লাখ ১৬ হাজার। গত বছর ছিল ৬ লাখের মতো। গত ১০ বছরে বিটিসিএলের গ্রাহক কমেছে ৪ লাখের বেশি।

অনেক গ্রাহক বিল পরিশোধ করে সংযোগ বন্ধ করেছেন বিটিসিএলের আঞ্চলিক অফিসগুলোতে। এর বিপরীতে নতুন টেলিফোন সংযোগ নেওয়ার আবেদনের সংখ্যা খুবই কম ছিল বলে জানা যায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, এরই মধ্যে এই চিত্র বদলে যেতে শুরু করেছে।

তবে বিটিসিএল কোস্পানি হবার পর আজ পর্যন্ত এক জন নিয়োগের মাধ্যেমে রেগুলার এমডি নিয়োগ দিতে পারেনি। কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ।

১১ বছরে ১৯ জন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পালন করেছেন রাষ্ট্রিয় মালিকানাধীন কোম্পানি বিটিসিএলে। জানা যায়, এই ১৯ জন এমডির মধ্যে কেউ কেউ একাধিকবারও চেয়ারে বসেছেন।

২০০৮ -০৯ অর্থবছরে কোম্পানির মোট আয় ১,৬৮৯.৩৬ ছিলো। কিন্তু ঠিক দশ বছরের মাথায় এই অঙ্ক নেমে আসে ৩৮৯.৩৯ কোটিতে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে বিটিসিএল লোকসান গুনেছে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা।

এক অনুসন্ধান থেকে বেরিয়ে এসেছে, ২০১৮ সাল ও ২০১০ সালে চারবার বদল হয়েছে এমডি। ২০১৪ সালে তিনবার এবং চলতি বছরেও তিনবার পরিবর্তন হয়েছে বিটিসিএলের এমডি। এর পাশাপাশি এ যাবত ১৯ জন ভারপ্রাপ্ত বা অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। এরমধ্যে কেউ কেউ মাত্র কয়েক সপ্তাহের জন্য ছিলেন এই পদে।

চলতি বছরের ৩ নভেম্বর নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ড. মো. রফিকুল মতিন। বিটিসিএলে ৩১ বছর ধরে চাকুরি করা এই ৯১ তম ব্যাচের টেলিকম ক্যাডার কর্মকর্তাকে সকলে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

তিনি জানান, বর্তমানে বিটিসিএলের বেশ কয়েকটি প্রকল্প চলছে। এর মধ্যে এমওটিএন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সারাদেশব্যাপী বিটিসিএলের একটি সুবিন্যস্ত, সমন্বিত ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি হবে বলে আশা করা যায় এবং আধুনিক পদ্ধতিতে গ্রাহকবান্ধব সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। কিছুদিনের মধ্যে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে গতিশীলতা ফিরে আসবে বিটিসিএলে । আশাবাদ এই নতুন এমডির । ইতেমধ্যেই মাঠপ্রশাসনে কঠোর বার্তা দিয়েছেন এই কর্মকর্তা । নড়েচড়ে বসেছে মাঠের কর্মকর্তারা ।

Print Friendly, PDF & Email





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar