ad720-90

ফ্লাইটে সুরক্ষায় এয়ারলাইনগুলো ফিরছে মাস্ক নিয়ে


৩ এপ্রিলের পর যেদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরীক্ষার ঘোষণা আসে, তার একদিন পরই জেটব্লু এয়ারওয়েজ বলেছে, ৪ মে থেকে সব যাত্রীকে মাস্ক পরতে হবে। ক্রুদের জন্য মাস্ক পরা ইতোমধ্যেই বাধ্যতামূলক করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (টিএসএ)-এর তথ্য মতে, রোববার এক লাখ ২৮ হাজার ৮৭৫ জন যাত্রী যাচাই করা হয়েছে, যা গত বছর একই দিনে প্রায় পঁচিশ লাখ যাত্রীর মাত্র পাঁচ শতাংশ।

পয়লা মে থেকে ক্রুদের সবাইকে মাস্ক পরতে হবে সোমবার এমন ঘোষণা দিয়েছে আমেরিকান এয়ারলাইনস। এরপরই ঘোষণা দিলো জেটব্লু।

“সরবরাহ এবং ফ্লাইট পরিচালনার পরিস্থিতি ঠিক থাকলে” মে মাসের শুরুতেই যাত্রীদেরকে স্যানিটাইজিং ওয়াইপ, জেল এবং ফেইস মাস্ক দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আমেরিকান এয়ারলাইনস।

বিশ্বজুড়ে মানুষ যখন কিছুটা উন্মুক্তভাবে চলাফেরা শুরু করেছে, তখন মহামারীর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় নতুন নীতিমালা আনছে এয়ারলাইনগুলো।

পরিষ্কার এবং স্যানিটেশন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করার পরিকল্পনা রয়েছে সব এয়ারলাইনের। ব্যক্তিগত সুরক্ষা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আটলান্টিকের ওপারের মূল এয়ারলাইনগুলো বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আসুন দেখে নেই কী করছে তারা-

ইউনাইটেড এয়ারলাইনস

সব ফ্লাইট ক্রুর জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে ইউনাইটেড এয়ারলাইনস। মূল মার্কিন এয়ারলাইনগুলোর মধ্যে এমন ঘোষণা প্রথম দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সিনএনএন-কে প্রতিষ্ঠানের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, মে মাসের শুরুতে যাত্রীদেরকেও মাস্ক দেবে এই প্রতিষ্ঠান।

ইউনাইটেড মুখপাত্র নিকোল ক্যারিয়ে বলছেন, “যাত্রীকে মাস্ক পরতেই হবে আমরা এমন বাধ্যবাধ্যকতা দিচ্ছি না। তবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটা যখন কষ্টকর হয়ে উঠছে তখন আমরা যাত্রীকে সিডিসির নির্দেশনা অনুসরণ করতে উদ্বুদ্ধ করবো, যাতে তারা মুখ ঢাকতে কিছু পরে থাকেন।”

ফ্লাইটের সেবায়ও পরিবর্তন এনেছে প্রতিষ্ঠানটি, যাতে স্পর্শ কমানো যায়। এজন্য প্রাথমিক পর্যায়ে আগে থেকেই প্যাকেট করা খাবার এবং সিল করা পানীয় সরবরাহ করবে ইউনাইটেড।

অন্তত ৩১ মে পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রচারণার লক্ষ্যে বোর্ডিং এবং আসন বিন্যাসেও পরিবর্তন আনছে প্রতিষ্ঠানটি।

ডেলটা এয়ারলাইনস

সোমবার কর্মীদেরকে দেওয়া এক মেমোতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, যখন ছয় ফুট সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নীতিমালা ঠিক রাখা সম্ভব হবে না তখন সব কর্মীকে মাস্ক পরতে হবে।

মেমোতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, “গ্রাহকদেরকে মাস্ক পরতে আমরা উৎসাহ দিচ্ছি এবং এগুলো টিকেট কাউন্টার, গেইট এবং প্লেনে পাওয়া যাবে।”

সতর্কতার জন্য মধ্য সারির আসনগুলো ব্লক করছে ডেলটা। পাশাপাশি প্রতি ফ্লাইটে যাত্রীর সংখ্যাও কমানো হচ্ছে। বর্ডিংয়ের জন্য ঢুকতে পারবেন সর্বোচ্চ ১০ জন গ্রাহক।

আমেরিকান এয়ারলাইনস

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে যাত্রী এবং ক্রুদেরকে মাস্ক পরতে বলার পাশাপাশি টিকেট কাউন্টারে কিছু কম্পিউটার এবং বুথ বন্ধ করেছে আমেরিকান এয়ারলাইনস।

বোর্ডিং প্রক্রিয়ার সময় যাত্রীরা যাতে ভিড় না করেন সে বিষয়টি মনে করিয়ে দিতে প্রবেশদ্বারেই সংকেত দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

৩১ মে পর্যন্ত ফ্লাইটে খাবার এবং পানীয় সেবা কমোনার পাশাপাশি প্রতি ফ্লাইটে যাত্রীর সংখ্যাও সীমিত রাখবে আমেরিকান এয়ারলাইনস।

সময়িক নীতিমালায় প্রতিষ্ঠানটি বলছে, “মূল কেবিনের ৫০ শতাংশ মধ্যের আসন বা ক্রুদের জাম্প সিটের পাশের আসনগুলো বিক্রি করা হবে না এবং এই আসনগুলো দরকার না হলে ব্যবহার করা হবে না।”

জেটব্লু এয়ারওয়েজ

মার্কিন মূল এয়ারলাইন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জেটব্লু এয়ারওয়েজই প্রথম যাত্রীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে, যা ৪ মে থেকে কার্যকর হবে।

এক বিবৃতিতে জেটব্লু প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা জোয়ানা গ্যরাটি বলেন, “মুখ ঢাকার কিছু পরাটা নিজেকে সুরক্ষিত করা নয়, আশপাশের মানুষকেও সরক্ষা দেওয়া। এটিই উড্ডয়নের নতুন শিষ্টাচার।”

যাত্রীর সংখ্যা সীমিত করেছে এই প্রতিষ্ঠানও। যাত্রীর মধ্যে সর্বোচ্চ জায়গা খালি রাখতে নিয়মিত আসন বিন্যাস পর্যালোচনা করবে জেটব্লু।

পাশাপাশি একে অপরের স্পর্শ কমাতে খাবার এবং পানীয় সেবার পরিধিও কমিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ভাড়ার ভিত্তিতে এই সেবা কম বেশি হবে।

এয়ার কানাডা

কানাডিয়ান সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী কানাডায় আসা বা দেশ ছেড়ে যাওয়া যাত্রীদেরকে নন-মেডিকাল ফেইস মাস্ক বা মুখ ঢাকার জন্য কিছু পরাটা বাধ্যতামূলক।

বোর্ডিং প্রক্রিয়া পরিবর্তন করার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে অন্যান্য পদক্ষেপ নিয়েছে এয়ার কানাডা। কোনো ক্ষেত্রে যদি যাত্রীর জন্য ফ্লাইটে যথেষ্ট জায়গা রাখা সম্ভব না হয়, বাড়তি খরচ না দিয়েই পরবর্তী ফ্লাইট ধরতে পারবেন গ্রাহক।

ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে ফ্লাইটের সেবা এবং অন্যান্য সুযোগ যুবিধা পরিবর্তন করেছে এয়ার কানাডা। কিছু খাবার সেবা বাতিল করা হয়েছে বা আগে পাকেট করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। কিছু ফ্লাইটে বার সেবা এবং বালিশ ও কম্বল পুরোপুরি বাতিল করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এশিয়াতেও এয়ারলাইনগুলোতে মাস্ক এবং অন্যান্য সুরক্ষা সরঞ্জাম

২৩ এপ্রিল থেকে সব যাত্রীকে মাস্ক পরার নির্দেশণা দিয়েছে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস।

কেবিন ক্রুদেরকে সরক্ষা কাপড়, চশমা, মাস্ক এবং গ্লাভস দিচ্ছে কোরিয়ান এয়ার।

সুরক্ষা নীতিমালা নিয়ে কোরিয়ান এয়ার বলছে, “বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ দ্রুত ছড়াতে থাকায় আমরা দীর্ঘ এবং মাঝারি ফ্লাইটে সুরক্ষা গাউন দিচ্ছি।”

কোরিয়ান এয়ারের সব যাত্রীকে মাস্ক পরতে হবে। এয়ারপোর্ট এবং প্লেনে সার্জিকাল মাস্ক এবং স্যানিটাইজার সরবরাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

মাস্ক বাধ্যতামূলক করেছে কিছু ইউরোপিয়ান এয়ারলাইনও

৪ মে থেকে সব যাত্রীর মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে লুফথানজা গ্রুপ। লুফথানজা, সুইস এবং অস্ট্রেলিয়ান এয়ারলাইন রয়েছে এই গ্রুপের আওতায়। ফ্লাইটের ক্রুদেরকেও মাস্ক পরার নির্দেশ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লুফথানজা গ্রুপ জানিয়েছে, মধ্য সারির আসন খালি রাখার আর কোনো দরকার নেই।

“নতুন নীতিমালার কারণে, ইকোনোমি এবং প্রিমিয়াম ইকোনোমি শ্রেণির মধ্য সারির আসনগুলো আর ফাঁকা রাখার দরকার নেই, কারণ মুখ ঢাকাতেই প্রয়োজনীয় সুরক্ষা পাওয়া যাচ্ছে।”

“তারপরও, বর্তমানে ফ্লাইটে যাত্রী কম থাকায়, যাত্রী আসনগুলো কেবিন জুড়ে যতোটা দূরে সম্ভব দেওয়া হবে।”

নিজস্ব ওয়েবসাইটে এয়ার ফ্রান্স জানিয়েছে, তাদের বেশিরভাগ ফ্লাইটই পরিপূর্ণ নয়, এতে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে।

“যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজার রাখা সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে দরজায় আমাদের ক্রু সদস্যরা মাস্ক বিতরণ করছেন, যাদের কাছে মাস্ক নেই।”

অন্যদিকে ডাচ প্রতিষ্ঠান কেএলএম জানিয়েছে, তাদের “ক্রুরা মাস্ক এবং সুরক্ষা গ্লাভস পরছে।” যাত্রীদের মাস্ক পরতে হবে কিনা তা নির্দিষ্ট করে জানায়নি প্রতিষ্ঠানটি।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar