ad720-90

ভূমিকম্প শনাক্তে ব্যবহার করা যাবে সাবমেরিন কেবল


ভূমিকম্প শনাক্ত করতে সক্ষম হবে পানির নিচে থাকা সাবমেরিন কেব্‌ল।একদিন যা ছিল অধরা, বিজ্ঞান তা ধরে দিচ্ছে। এক প্রযুক্তি আরেক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পথ খুলে দিচ্ছে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সাবমেরিন কেবলগুলোর কথাই ধরুন। শুধু ইন্টারনেটের লাইন হিসেবেই নয়, সাবমেরিন কেবল ঘিরে নতুন সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন গবেষকেরা। তাঁরা ভাবছেন, ভূমিকম্প শনাক্তে কার্যকর উপায় হতে পারে সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্ক।

ইকোনমিস্ট বলছে, পৃথিবীকে নজরদারির যে সুযোগ আগে ছিল না, এখন তা হাতের নাগালে। কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহার করে ঘূর্ণিঝড়, আগ্নেয়গিরির থেকে বের হওয়া ছাই-ধোঁয়া, মানুষের কার্যকলাপে ভূপ্রকৃতির পরিবর্তনের বিষয়গুলো এখন নজরদারি করা যায়। কয়েক দশক আগেও উন্নত ও ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর গোয়েন্দাদের কাছে উন্নত মানের ম্যাপ ও ছবি সীমাবদ্ধ ছিল, তা এখন গুগল ম্যাপের মতো বিনা মূল্যে সবার হাতের কাছে চলে এসেছে।

তবে পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চলই পানির নিচে। সেখানে কী হচ্ছে, তা ঠিকমতো পর্যবেক্ষণ করা বেশি কঠিন। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরি (এনপিএল) গবেষক জিউসেপ্পি মাররা নতুন এক তত্ত্ব দিয়েছেন। তাঁর গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্স সাময়িকীতে।

ওই নিবন্ধে, সমুদ্রের তলে একটি ভিন্নধর্মী অবকাঠামো ব্যবহার করে সমুদ্রের তলায় নজরদারি করার বিষয়ে আলোকপাত করেছেন তিনি।

মাররা ও তাঁর সহকর্মীদের প্রস্তাব হচ্ছে, সমুদ্রের নিচে বসানো ১০ লাখ কিলোমিটার ফাইবার-অপটিক কেবলের নেটওয়ার্ককে কাজে লাগানো। এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে ইন্টারনেট যেতে পারে। একে বিশাল সাবমেরিন সেন্সর হিসেবে ব্যবহারের কথা বলছেন তাঁরা।

তবে গবেষক মাররার মূল লক্ষ্য ভূমিকম্প শনাক্ত করা।

ইকোনমিস্ট বলছে, পৃথিবীর ভূভাগে অনেক সিসমোগ্রাফ যন্ত্র বসানো রয়েছে। তবে সমুদ্রের নিচে ভূমিকম্প মাপার সেন্সরের ঘাটতি রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠে গুটিকয়েক স্থায়ী সেন্সর বসানো হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে অনেক ছোটখাটো ভূমিকম্পের কোনো রেকর্ড থাকে না। কারণ, এসব ভূমিকম্প মৃদু বলে তা দূরের ভূপৃষ্ঠে স্থাপিত সেন্সরগুলোতে ধরা পড়ে না।

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, এনপিএল মূলত পরিমাপবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করে। এর সঙ্গে ইউরোপের অন্যান্য গবেষণাগারে ফাইবার অপটিক কেবল দিয়ে সংযুক্ত। এটি অ্যাটমিক ঘড়ির সিনক্রোনাইজে ব্যবহৃত হয়। এই কেবলগুলো রাস্তার নিচ দিয়ে বসানো। এতে রাস্তায় যান ও মানুষ চলাচল করার ফলে ওই লাইনে শব্দ তৈরি হয়, যা সঠিক নাদ পরিমাপের ক্ষেত্রে কিছুটা বাধা সৃষ্টি হয় বলে অধিকাংশ সময় তা বাতিল হয়ে যায়। এখন এ শব্দ-গোলযোগের পদ্ধতিটিকেই কাজে লাগাতে চাইচেন গবেষক মাররা।

ভূকম্পন শনাক্ত করার ক্ষেত্রে ভিন্ন ধরনের নাদ ব্যবহার করার প্রস্তাব করেছেন তিনি। তাঁর পরিকল্পনা হলো কেবলের মধ্যে থাকা কোনো অপটিক্যাল ফাইবারে উচ্চমানের লেজার বিম প্রেরণ করা। অন্য প্রান্তে ওই ফাইবার একই কেবলের অন্য আরেকটি ফাইবারের সঙ্গে যুক্ত থাকে, যা ফিরতি যাত্রা করে একটি লুপ বা ফাঁস তৈরি করে। কাছাকাছি ভূকম্পনের ফলে কোথাও সিসমিক তরঙ্গ তৈরি হলে এই লেজারের আলোকে তার দশা থেকে কিছুটা সরিয়ে দেবে। এ অসামঞ্জস্য বা গোলযোগ খুব ক্ষুদ্র। এই সূক্ষ্ম পার্থক্যের বিষয়টি ধরতে ফেমটোসেকেন্ডসের পার্থক্য ধরতে পারে, এমন যন্ত্রপাতি প্রয়োজন পড়বে। এক ফেমটোসেকেন্ড হচ্ছে এক সেকেন্ডের এক বিলিয়ন ভাগের এক মিলিয়নতম অংশ।

গবেষক মাররার ওই ধারণা দারুণ কাজে এসেছে। যেমন ২০১৬ সালে এনপিএল ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প শনাক্ত করতে পেরেছিল, যা মধ্য ইতালিতে আঘাত হানে। এটি ফাইবার অপটিক কেবলে ধরা যায়। লন্ডনে এনপিএলের কার্যালয় থেকে রিডিংয়ের ডেটা সেন্টারে ৭৯ কিলোমিটারে এটি ধরা পড়ে। ২০১৭ সালে মাল্টা ও সিসিলির মধ্যকার পানির নিচে থাকা ৯৬ কিলোমিটার কেবলের মধ্যে আরেকটি পরীক্ষা চালানো হয়। এটি ৩ দশমিক ৪ মাত্রার একটি ভূমিকম্প ধরতে পারে। ওই কেবল থেকে ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ৮৯ কিলোমিটার দূরে।

গবেষকেরা বলছেন, সমুদ্রের তলায় থাকা কেবল ব্যবহারের সুবিধা হচ্ছে, এতে বহিঃশব্দ বা গোলযোগের মাত্রা কম হয়। সিসিলি-মাল্টার ওই কেবলে ব্যাকগ্রাউন্ড শব্দের মাত্রা ছিল নগণ্য। তবে, গবেষকেরা এখনো তাঁদের পদ্ধতিটি পুরোপুরি সমুদ্রের নিচে থাকা দীর্ঘ কেবলের পরীক্ষা করেননি। তবে তাঁরা আশা করেন, তাঁরা যখন এ-সংক্রান্ত গবেষণা করবেন, আরও গোলযোগহীন সংকেত পাবেন। এতে বর্তমান সময়ে ধরা পড়ে না, এমন অনেক ভূকম্পনের তথ্য শনাক্ত করা সম্ভব। এটি ভূতাত্ত্বিকদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে।

গবেষকেরা বলছেন, তাঁদের উদ্ভাবিত পদ্ধতির অন্যান্য ব্যবহারও রয়েছে। মূলত এই পদ্ধতিতে যেকোনো শব্দের উৎস ধরা যেতে পারে; বিশেষ করে তেল বা গ্যাসের খোঁজে ব্যবহার করা গ্যাস গানের ফলে ডলফিন বা তিমির জায়গা পরিবর্তনের মতো বিষয়টিও ধরা যেতে পারে।

যদিও যোগাযোগের জন্য তৈরি এ সাবমেরিন কেবল পৃথিবীর ৭০ ভাগ পানির নিচের পুরো উপাত্ত দিতে পারে, তবেই একে সত্যিকারের ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বলা যাবে বলে মনে করেন গবেষকেরা।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar