ad720-90

সাইবার নিরাপত্তায় ’সাইবার  থ্রেট   ডিটেকশন এন্ড রেসপন্স” প্রকল্পটি বিলম্ব !


Tuesday, 19th June , 2018, 06:05 pm,BDST

Print Friendly, PDF & Email


আলীমুজ্জামান হারুন, ১৯ মে,  ঢাকা:  সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রোধ, দেশের ভামমূর্তি রক্ষা, সকল পর্নোসাইট বন্ধ করা, সর্বোপরি সাইবার অপরাধ রোধকল্পে সরকার ডিপিআই (ডিপ প্যাকেজ ইন্সপেকসন ) নামে  পরিবর্তন করে ’সাইবার  থ্রেট   ডিটেকশনএন্ড রেসপন্স”   করা হয়েছে।    প্রকল্পটির কাজের মেয়াদ  মে ১৮ থেকে বৃদ্ধি করে মে ১৯ করা হয়েছে।  প্রকল্পটির কাজ পেয়েছে  দেশী প্রতিষ্ঠান টেকভেলী সলিউশন লি: ।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেড়‘শ কোটি টাকা ব্যয় হবে । সম্পূর্ন সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এই অর্থ যোগান দেয়া হবে।  পিডি‘র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,  প্রকল্পটির কাজ পেয়েছে  দেশী প্রতিষ্ঠান টেকভেলী সলিউশন লি: ।  দেশের স্বার্থে এই প্রকল্পটি বাংলাদেশে একটি সময়োপযোগী প্রকল্প বলে তিনি উল্লেখ করে বলেন সিঙ্গাপুরেও এই  প্রকল্পটি অনেক আগে থেকেই চালু আছে ।

জানা গেছে, ১৮ মাসের মধ্য প্রকল্পের কাজ শেষ করে বিটিআরসিকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। প্রকল্পের কাজ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর (ডট ) এর কর্মকর্তারা থাকবেন। এই প্রকল্পের পিডি‘র দায়িত্ব পেয়েছেন ড‘টের পরিচালক আলহাজ্ব রফিকুল মতিন । টেকনিক্যাল বিষয়ে তাঁর ভাল অভিঞ্জতা ,দক্ষতা এবং সৎ কর্মকর্তা হিসাবে সুনাম থাকায় সরকার তাকে এই প্রকল্পের পিডি করেছে বলে বিটিসিএলের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান।

ফেইসবুকে ভূয়া আইডি খুলে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, দেশে বসে ফেইসবুক বা কোন অন-লাইনে সরকার বিরোধী অপপ্রচার সহ সব ধরনের সাইবার অপরাধ রোধে এই মেশিন কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে কোন অন-লাইন বন্ধে ২৮ টি আইআইজি এবং ৩ টি নিক্স একচেঞ্জকে অনুরোধ করতে হয়। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিটিআরসি এক মিনিটেই বন্ধ করে দিতে পারবে। পারবে ভূয়া ফেইসবুক আইডি বন্ধ করতে । এমনকি সরকার যদি চায় সকল অন-লাইনের টেক্স এই মেশিনের ভিতর দিয়ে ফিল্টার হয়ে প্রকাশ হবে। চাইলে ১৮ বছরের নীচে কেউ পর্নো সাইটে প্রবেশ করতে পারবেনা। যদি  কেউ  ‍ঢুকতে চাঁয়  তবে তার ভোটার আইডি আইডি নাস্বার  দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।

জানা গেছে ২৮ টি আইআইজি এবং ৩ টি নিক্স একচেঞ্জে এই ইকুয়েপমেন্ট বসানো হবে। যার সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রন থাকবে বিটিআরসি‘র হাতে । বর্তমানে ডট থেকে ১৯ জন কর্মকর্তা এই প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। তবে এই প্রকল্পে ডুকতে অনেকেই এখনও চেষ্টা করছেন। কারন দেড়‘শ কোটি টাকা খরচ হবে তাঁদের হাতে। তবে টানকি প্রকল্প হিসাবে এই প্রকল্পের সার-সংক্ষেপে উল্লেখ রয়েছে।

পর্নো ছবি দেখার ওপর এমন কঠোরতাই আরোপ করতে যাচ্ছে ব্রিটিশ সরকারও। ওয়েবসাইটে পর্নো দেখা ব্যক্তির তথ্য সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করবে তারা। অনলাইন পর্নোগ্রাফি ব্যবহারের জন্য দেশটির সরকার বয়স যাচাইয়ের পদক্ষেপও হাতে নিয়েছে। এর অর্থ হলো, বয়স যাচাইয়ের জন্য ব্যবহারকারীকে নিজের মোবাইল ফোন ও পাসপোর্টের বিবরণ জানাতে হবে। মোবাইল ফোন ও পাসপোর্টের বিবরণের সঙ্গে বয়স মিলে গেলেই অনলাইনে পর্নো ছবি দেখতে পারবেন ওই ব্যবহারকারী।

এতে করে ব্যবহারকারীর সব তথ্য থেকে যাবে ওই ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ ও সরকারে কাছে। এর আগে ক্রেডিট কার্ডের তথ্য দেয়ার মাধ্যমে অনলাইনে বয়স যাচাই করা হতো। কিন্তু কিশোর-তরুণেরা বড়দের বা অন্য সদস্যের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে পর্নো দেখে। এ বিষয়টি রোধ করতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

ব্রিটিশ আইন অনুসারে, ১৮ বছরের কম বয়সী কোনও ব্যক্তির জন্য এ ধরনের ছবি ধারণ কিংবা প্রেরণ- উভয়ই অবৈধ। এমনকি নিজের ছবিও। ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত সেক্সটিংয়ে জড়িত ৪ হাজারের বেশি শিশুকে শনাক্ত করেছে ব্রিটিশ পুলিশ। এদের বেশিরভাগের বয়সই ১৩ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। বারবার বিভিন্ন সতর্কতা সত্ত্বেও ঠেকানো যাচ্ছে না এই ক্ষতিকর সংস্কৃতি।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের শুরুর দিকে এ সংক্রান্ত ডিজিটাল ইকোনমি অ্যাক্ট পার্লামেন্টে পাস হয়েছে। দেশটির ডিজিটাল ইকোনমি মন্ত্রী ম্যাট হ্যানককের তত্ত্বাবধানে ব্রিটিশ বোর্ড অব ফিল্ম ক্ল্যাসিফিকেশন নামের একটি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কিছু কিছু পর্নো সাইট ব্লক করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া ১৮ বছরের নিচের কাউকে পর্নো দেখতে অনলাইনে বাধা দেয়া হচ্ছে। আর নতুন ওই নিয়ম বাধ্যতামূলকভাবে জারি হবে আগামী বছরের এপ্রিল থেকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন এই নিয়মকে দেশটির ন্যাশনাল সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু চিলড্রেন (এনএসপিসিসি) স্বাগত জানিয়েছে। সংগঠনটি দাবি করে আসছিল, পর্নো ছবি কোমলমতি তরুণদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

তবে এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তারা বলছে, পর্নো সাইটে বয়স যাচাইয়ের জন্য ব্যবহারকারীকে নিজের মোবাইল ফোন ও পাসপোর্টের বিবরণ জানাতে হবে- এটা ভালো। কিন্তু একই সঙ্গে ব্যবহারকারীর যাবতীয় তথ্য থেকে যাচ্ছে ওই ওয়েবসাইটের ডেটাবেসে। কোনো কারণে হ্যাকাররা ওই তথ্য চুরি করলে ব্যবহারকারীদের সমূহ বিপদ হতে পারে।

প্রসঙ্গত, ব্রিটেনে শিশুদের মধ্যে যৌনতা বেড়ে যাওয়া নিয়ে অনেকদিন ধরে উদ্বেগ দেখিয়ে আসছিল দেশটির সরকার ও অভিভাবকরা। শিশুদের এই যৌনতা ছড়িয়ে পড়ার জন্য বিশ্লেষকরা সবচেয়ে বেশি দায়ী করছেন সামাজিকমাধ্যমকে। প্রথমে এই মাধ্যমেই তারা যৌন আচরণে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। তবে পারিবারিক শিক্ষাকেও গুরুত্ব দিয়েছেন তারা। পরিবারের মধ্য থেকে শিশু সঠিক শিক্ষা না পেলে তার চরিত্রের বিকাশ সম্ভব নয় বলে মনে করছেন তারা। এছাড়া শিশুকে অবাধে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেয়াও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

দেশটির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জানান, অনলাইনে পর্নোগ্রাফি অবাধ হওয়ায় স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর আগেই শিক্ষার্থীরা ভয়াবহ এই নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে এক জরিপ প্রতিবেদনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের এমন আচরণ সম্পর্কে জানেন দুই-তৃতীয়াংশ বা শতকরা প্রায় ৬২ ভাগ শিক্ষক। দেড় হাজারেরও বেশি শিক্ষকের ওপর ওই জরিপ চালানো হয়েছে।

ব্রিটিশ আইন অনুসারে, ১৮ বছরের কম বয়সী কোনও ব্যক্তির জন্য এ ধরনের ছবি ধারণ কিংবা প্রেরণ- উভয়ই অবৈধ। এমনকি নিজের ছবিও। ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত সেক্সটিংয়ে জড়িত ৪ হাজারের বেশি শিশুকে শনাক্ত করেছে ব্রিটিশ পুলিশ। এদের বেশিরভাগের বয়সই ১৩ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। বারবার বিভিন্ন সতর্কতা সত্ত্বেও ঠেকানো যাচ্ছে না এই ক্ষতিকর সংস্কৃতি।

ইন্টারনেটের এই অবাধ দুনিয়ায় চাইলেই এখন অনেক কিছু হাতের মুঠোয় পাওয়া যায়। ব্রাউজিং শেষে আপনি সব মুছেও ফেলতে পারবেন। কেউ জানতে পারবে না কিছু। কিন্তু এটাই শেষ নয়, পর্নো ছবি দেখাতে ওয়েবসাইটে ঢুকলে সেই সাইটই চিনে রাখবে আপনাকে। কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে হিস্ট্রি মুছে ফেললেও ওই সাইটের নজরদারি এড়ানো যাবে না। এতে চাইলে যেকোনো সময় আপনার নাম, পরিচয়ও প্রকাশ করা যাবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, শ্যাম সুন্দর সিকদারের একটি লেখা থেকে জানা গেছে —-

যে স্বপ্ন নতুন করে দেখিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে তার নাম ডিজিটাল বাংলাদেশ। একথা এখন দুনিয়ার মানুষ জানে। দেশকে ডিজিটাল বানানোর অভিধায় তাঁর শক্ত হাত হয়ে কাজ করছেন তাঁরই সুযোগ্য পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। বিগত আট বছরে দেশ বিস্তর এগিয়েছে। সেটা তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণেই—একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। খুব বেশি করে পরিসংখ্যান দিয়ে তা প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই। শুধু দু-একটি তথ্যই যথেষ্ট। যেমন—২০০৯ সালের গোড়ার দিকে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের বৈদেশিক আয় ছিল মাত্র ২৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার, কিন্তু তা এখন ৭০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার (তথ্যসূত্র: বেসিস)। আর মাথাপিছু আয় ছিল তখন ৭২৮ ইউএস ডলার, যা এখন ১৪৬৬ ইউএস ডলার। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ছিল ২০ মিলিয়ন, যা এখন ১৩০ মিলিয়ন।

বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তির অগ্রগতি বিশ্বের অনেক দেশের কাছেই ঈর্ষণীয়। মানুষ এখন ঘরে বসেই অনেক সেবা পাচ্ছে। আর সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকার এরই মধ্যে উপজেলা পর্যন্ত ফাইবার অপটিক ক্যাবল লাইন স্থাপন করেছে। আবার প্রত্যন্ত ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ৫৩০০ ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে, যেখান হতে প্রায় একশ’ ধরনের ই-সেবা দেওয়া যায়। সকল জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করা যায় যে কোনো স্থান থেকে। এমন অভূতপূর্ব অগ্রগতির জন্যই জাতিসংঘ শেখ হাসিনাকে দিয়েছে Sustainable Development Award এবং জয়কে দিয়েছে ICT For Development Award।

এমন সাফল্যের গর্বিত আসনে দাঁড়িয়ে থাকলেও বিজ্ঞজনেরা এখন ঘন ঘন প্রশ্ন উত্থাপন করছেন সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে। বিশেষত দু-একটা ঘটনার কারণে একেবারে সাধারণ মানুষের কাছেও এ সব প্রশ্নের যৌক্তিকতা আছে বলেই মনে হতে পারে। প্রথমত, অনলাইনে সেবা প্রদান ও গ্রহণ, তথ্য আদান-প্রদান, আর্থিক লেন-দেনসহ ব্যবসায়িক যোগাযোগ এবং অন্যবিধ সরকারি বেসরকারি কার্যকলাপ পরিচালনায় ঝুঁকির বিষয়। দ্বিতীয়ত, ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্তত শিশু-কিশোরদের অবাধ প্রবেশ সম্পর্কে আপত্তি থাকার প্রশ্নটি কেউ কেউ বড় করে দেখছেন। সেখানেই এ প্রশ্নটি এসে যায় যে, সরকার সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে কতোটা প্রস্তুত? কিন্তু তার আগের প্রশ্নটি হলো, সাইবার নিরাপত্তার প্রয়োজন কী? সে বিষয়টি আরো স্পষ্ট করা দরকার বলে আমি মনে করি।

প্রকৃতপক্ষে সাইবার নিরাপত্তা হলো, তথ্য এবং প্রযুক্তির পদ্ধতিকে মুখ্য সাইবার হুমকি (Threat) থেকে, যেমন—সাইবার সন্ত্রাস, সাইবার যুদ্ধ ও সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি থেকে সুরক্ষা করা। কাজেই ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যবসায়িক তথ্যাদির সুরক্ষার নিমিত্ত অনলাইনে সাইবার আক্রমণের বিষয় আগাম উদঘাটন করা, প্রতিরোধ করা এবং প্রতিক্রিয়ায় প্রতিহত করাই হলো সাইবার নিরাপত্তার মূলনীতি। কোনো রাষ্ট্রের গোপন বিষয়, অবকাঠামোগত সম্পদ, রাজনৈতিক এবং সামরিক বিষয়ে সাইবার হুমকি থাকে অধিক। এজন্য প্রত্যেক সরকারের জন্যই এ বিষয়টি কৌশলগতভাবে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, বাংলাদেশ বিগত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে ইতিহাসের সর্ববৃহত্ সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে। আন্তর্জাতিক সাইবার ক্রিমিনালরা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলারের সমান টাকা অনলাইনে চুরি করে নিয়ে গেছে।

বিশ্বের এমন অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা আছে সাইবার আক্রমণের। যেমন— স্যাডো ক্রিমিনাল নেটওয়ার্ক দালাইলামার ব্যক্তিগত ই-মেইল বার্তা চুরি করেছিল; গত বছর ৩৭১ আইডেন্টিটিতে আক্রমণের ফলে ১২,৮৭১,০৬৫ সংখ্যক রেকর্ড ফাঁস হয়ে গেছে; তেল, পানি, গ্যাস ও বিদ্যুত্ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে ১৭৫টি সাইবার আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে; ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জি-এর ওপর প্রতিদিন ১ কোটিবার আক্রমণ হয়; ইউএস ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট তার কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এর ওপর প্রতিদিন ৩ মিলিয়ন অবৈধ অনুসন্ধানের ঘটনা উদঘাটন করে; স্টেট ডিপার্টমেন্ট প্রতিহত করে ২ মিলিয়ন; Zeus Trojan গ্রেট ব্রিটেনে ১ মিলিয়ন ডলারের অধিক অর্থ চুরি করেছে; একটি কোম্পানি হতে চাকরি ছেড়ে দেওয়া ৫৯% এমপ্লয়ি কোম্পানির ডাটা চুরি করেছে; গত বছরের প্রথমার্ধে ৩৩৫ কোম্পানির উল্লেখযোগ্য ডাটা চুরি হয়, যার মধ্যে ১১৩ কোম্পানি ছিল হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার; বিগত জুলাই মাসে ক্যালিফোর্নিয়ার ৫টি হাসপাতালকে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হয়েছে বার বার রোগীদের তথ্যের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে; শতকরা ৮০ ভাগ ব্যাংক অর্থ স্থানান্তর করার আগে জালিয়াতি ধরতে ব্যর্থ হয়; এটিএম মেশিন হতে চুরির একটি ঘটনায় ১০ মিলিয়ন ডলার খোয়া গেছে।

কাজেই শুধু বাংলাদেশ নয়, সাইবার হুমকিতে বিশ্বের অনেক ধনী দেশও রয়েছে, যাদের আর্থিক সক্ষমতা বাংলাদেশের চাইতে অনেক বেশি এবং সে সব দেশের ঝুঁকিও আমাদের দেশের চাইতে অনেক বেশি। উইকিপিডিয়ার এক তথ্যে প্রকাশ, ইউএস ফেডারেল গভর্নমেন্ট ২০১০ সাল হতে এ খাতে বার্ষিক ব্যয় বরাদ্দ রাখছে ১৩ বিলিয়ন ডলার।

মূলত ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়ন কাজ সক্রিয়ভাবে শুরু করা হয় ২০০৯ সালে। তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় শুরু থেকেই তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তির নিরাপত্তা ও সাইবার অপরাধ মোকাবিলার বিষয়টিও মাথায় রেখেই পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলেন। সে কারণেই প্রণীত হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) নীতিমালা ২০০৯। তাছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ সংশোধন করা হয় ২০০৯ ও ২০১৩ সালে। সংশোধনের মুখ্য কারণ ছিল সাইবার অপরাধ দমনের জন্য অপরাধের সংজ্ঞা, শাস্তি ও তদন্ত পদ্ধতি সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা। তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে সাইবার হুমকি বা ঝুঁকির আগাম তথ্য চিহ্নিতকরণ বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো সুনির্দিষ্ট বিধান নেই।

অপরদিকে আইসিটি নীতিমালাটি ২০১৫ সালে পুনরায় পরিমার্জন করা হয়। এ নীতিমালার ১৬০নং কর্মপরিকল্পনায় কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম (CERT) গঠন এবং সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি স্থাপনের কথা আছে। ১৬৪নং কর্মপরিকল্পনায় ইলেকট্রনিক লেনদেন সহজতর ও নিরাপদ করতে নতুন আইন প্রণয়ন ও সাংঘর্ষিক আইন সংশোধনের কথা আছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬-এর বিভিন্ন ধারায় সাইবার অপরাধ তদন্ত প্রক্রিয়া এবং বিচার পদ্ধতি বিধৃত। তবে অনেকে সামাজিক কারণে লজ্জায় কিংবা ভয়ে অভিযোগ করতে চায় না। আবার কারো কারো অনুযোগ রয়েছে যে, অভিযোগ দায়ের করতে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করতে গড়িমসি করে। কেউ কেউ বলেন, অভিযোগ করেও প্রমাণের অভাবে বিচার পাওয়া যায় না।

উক্ত আইনে বিদ্যমান এই তদন্ত ও বিচার ব্যবস্থা আরো উন্নত এবং সহজতর পদ্ধতি চালু করার জন্য সরকার ইতোমধ্যেই একটি নতুন আইন ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ২০১৬’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে। আশা করা যায়, খুব শীঘ্রই এ আইনটি জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হবে। এ আইনে একটি স্বতন্ত্র সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি এবং একটি জাতীয় সাইবার সিকিউরিটি কাউন্সিল গঠন করার কথা আছে। পাশাপাশি একটি জাতীয় সাইবার রেসপন্স টিম গঠন ও ফরেনসিক ল্যাব গঠনের বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে। সাইবার ট্রাইব্যুনালের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হবে।

এ সকল আইনি কাঠামো শক্তিশালীকরণ ছাড়াও সরকার ইতোমধ্যে কিছু সতর্কতামূলক ও সচেতনতামূলক কার্য-ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তন্মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি নিরাপত্তা পলিসি গাইডলাইন ২০১৪, তথ্য প্রযুক্তি নিরাপত্তা কৌশল ২০১৪ এবং National Cyber Security Guidelines ২০১৬-এর প্রণয়ন উল্লেখযোগ্য। তথ্য প্রযুক্তি নিরাপত্তা পলিসি গাইডলাইন ২০১৪-এর মডেল অনুসরণ করে প্রত্যেক সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব প্রয়োজন মতে নিরাপত্তা পলিসি প্রণয়ন ও পরিকল্পনা করতে পারে।

বর্তমানে সাইবার আক্রমণ বা হ্যাকিং ডিটেকশনের জন্য সরকারের একটি সিকিউরিটি অপারেশন সেন্টার রয়েছে, যেখানে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ চলছে। এই কেন্দ্রে বসে বহির্বিশ্ব হতে দেশের কোথাও কোনো সাইবার আক্রমণ বা হ্যাকিং হলে তা তাত্ক্ষণিকভাবে ডিটেন্ট করা যায় এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা যায়। এই ব্যবস্থাটির কথা অনেকেই অবগত নয় বলে সরকারি নিরাপত্তা প্রস্তুতির বিষয়ে দুর্বলতার কথা বলে থাকেন। আসলে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ততটা ঘাটতি এখন আর নেই। যদিও এই কেন্দ্রের সক্ষমতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। অন্যদিকে কাজ করছে ন্যাশনাল টেলিকম্যুনিকেশনস মনিটরিং সেন্টার (NTMC), যেখানে ভয়েস কল রেকর্ডিংসহ পর্যবেক্ষণ করা যায় এবং এখানকার বিশেষজ্ঞ দল সাইবার অপরাধ সংঘটিত হলে তা শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।

এবার বলি ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় শিশু-কিশোরদের অবাধ প্রবেশ সম্পর্কে অনেকের আপত্তির প্রসঙ্গটি। সরকার গত ২৯ মার্চ ২০১৭ তারিখে একনেক সভায় ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন এন্ড রেসপন্স’ শিরোনামে একটি নতুন প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবার কথা ২০১৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ার কোনো কন্টেন্ট বর্তমানে ফিল্টার করার ব্যবস্থা নেই। ফলে শিশু-কিশোররা তাদের বয়সে যেসব সাইটে প্রবেশ করা সমীচীন নয়, সেসব সাইটে অবাধে প্রবেশ করার সুযোগ পায়। এজন্য এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ হলে এমন অবাধ প্রবেশের সুযোগ আর থাকবে না। একটি কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের মাধ্যমে এসব সাইটের কন্টেন্ট ফিল্টার করা যাবে। একই পন্থায় রাষ্ট্রের জন্য সাইবার হুমকির বিষয়গুলোও আগাম উদঘাটন করা সম্ভব হবে। সুতরাং এই প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এবং এটির মাধ্যমে বিটিআরসি, এনটিএমসি, বিসিসি এবং সরকারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সাইবার সেবা প্রদানকারী সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে।তথাপি বলি প্রত্যেক ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ নিরাপত্তার জন্য কিছু কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। সে ব্যবস্থা না করে শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করে বসে থাকা সমীচীন নয়।

অভিভাবকদের উচিত বাচ্চাদের ইন্টারনেট তত্ত্বাবধান করা। সন্তানের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করা উচিত। দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে হবে, ভালো-মন্দ বুঝিয়ে দিতে হবে। নিশ্চিত হতে হবে যে সন্তান যে-ওয়েবসাইট ও সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, তার নিরাপত্তা ফিচার সক্রিয়। সন্তান যে-অনলাইন এনভাইরনমেন্ট ব্যবহার করছে তা জানার চেষ্টা করতে হবে এবং কিভাবে অসংগত বিষয় এড়িয়ে যাবে তা তাকে শেখাতে হবে। মনে রাখতে হবে, সচেতন থাকা ও সতর্কতা অবলম্বন করা হলো নিরাপত্তার মূল চাবিকাঠি।

 

 

 

Print Friendly, PDF & Email





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar