ad720-90

কর্মীবান্ধব হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের পাশাপাশি কাজ করবে।কৃত্রিম বুদ্ধিমান যন্ত্র মানুষের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠবে বলে অনেকে ভয় পাচ্ছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উঠে আসায় সবচেয়ে শঙ্কায় আছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিকেরা। কম্পিউটার প্রোগ্রামচালিত বুদ্ধিমান রোবট তাঁদের চাকরির জায়গা দখল করে নেবে বলে তাঁরা ভয় পাচ্ছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা অভয় দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহায়তাকারী বা বন্ধু হতে পারে। ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলির গবেষক কেন গোল্ডবার্গ ও ভারতের টাটা কমিউনিকেশনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিনোদ কুমার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। তাঁরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উঠে আসায় ভয়ের কারণ নেই। তাঁরা একে সাধারণ কর্মীদের জন্য ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। তাঁদের প্রতিবেদনে বলেছেন, অনেকে ক্ষেত্রেই কাজের সন্তুষ্টি বাড়বে। একঘেয়ে কাজের বদলে মানুষ আরও সৃজনশীল কাজে উৎসাহী হবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণার জন্য ১২০ জন জ্যেষ্ঠ নির্বাহীর মধ্যে একটি সমীক্ষা চালান গবেষকেরা। এতে ৭৭ শতাংশ মতো দেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নতুন ভূমিকা সৃষ্টি করবে। ৫৭ শতাংশের বিশ্বাস হচ্ছে বর্তমান অবস্থানকে সরিয়ে দেবে এসআই। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে তাই বাড়তি দক্ষতা দরকার হবে। অর্ধেকের বেশি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাঁদের কর্মীদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।

গবেষকেরা বলেন, অতীতে প্রযুক্তির উদ্ভাবনে খুব বেশি চাকরিতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। যেমন বারকোড স্ক্যানার উদ্ভাবনে ক্যাশিয়ার পদ বিলুপ্ত হয়নি। এমনকি এটিএম মেশিন উদ্ভাবনে কর্মীদের টাকা গুনে দেওয়ার কাজ কমেছে। এর বদলে গ্রাহকদের আর্থিক পরামর্শ দেওয়ার কাজ করছেন তাঁরা।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে কিছু কাজ সহজে করা যায়। একটি কাজ হচ্ছে লরি চালানো। অনেকে আশঙ্কা করেন, ট্রাকচালকের জায়গা নেবে স্বয়ংক্রিয় গাড়িব্যবস্থা। ব্যস্ত সড়কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর নির্ভর করা কঠিন। তাই বড় শহর থেকে দূরে যাওয়ার পথে স্বয়ংক্রিয় মোডে গাড়ি ছাড়া যেতে পারে। উড়োজাহাজে অনেক সময় এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ক্লান্ত চালকদের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

যদি অফিসের কাজের কথা বলা হয়, তবে সাপ্লাই চেনের একঘেয়েমি কাজের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমান যন্ত্রের ওপর ভরসা করা যায়। মিটিংয়ের রেকর্ড রাখার মতো কাজটাও করানো যেতে পারে। এতে সময় বাঁচে এবং কর্মীকে অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগানো যায়। এ ছাড়া ভাষার পার্থক্য দূর করা এবং আলোচনা ফলপ্রসূ করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাহায্য করতে পারে।

গবেষকেদের যুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যে সিদ্ধান্ত দিতে পারে, তা ভালো হয়। তাই দলবদ্ধ কাজের সময় এআইয়ের সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। এ ছাড়া এমন প্রোগ্রাম আছে, যা ই-মেইল বিশ্লেষণের মতো কাজ করে ভুয়া অনুমান বিষয়ে সতর্ক করে দিতে পারে। কাজের আসল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হলেও সতর্ক করতে পারে এ সিস্টেম।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের গবেষক হেলেন পোয়েটভেন বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠানে কৃত্রিম বুদ্ধিমান সফটওয়্যার ব্যবহার করে কর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ সম্পর্কে ধারণা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কর্মীদের নিজস্ব প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করতেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকেরা কর্মীদের অসন্তুষ্টির জায়গাগুলো বের করতে পারছেন। তারা যদি সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে, তবে কর্মীদের জীবন উন্নত হয়।

এ বিষয়গুলো থেকে দেখা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সংশয়ের পাশাপাশি ইতিবাচক দিকও রয়েছে। তবে এটা মনে রাখতে হবে, প্রোগ্রাম ততটাই উন্নত হবে, যত ডেটা প্রোগ্রামকে দেওয়া হবে। যদি যন্ত্রকে দেওয়া তথ্যের মধ্যে জোচ্চুরি থাকে তবে প্রোগ্রামে তা প্রতিফলিত হবে।

পোয়েটভেন বলেন, কর্মক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তবে এটা চাইতে হবে। চাকরিদাতা হিসেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কর্মীর জন্য ইতিবাচক করে তুলতে হবে। তবেই সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়া যাবে।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar