ad720-90

অর্ণবের ইস্কুল [পর্ব-১৭] :: ওয়েবসাইট বিষয়ে A টু Z জানুন আর হয়ে হয়ে যান ওয়েব এক্সপার্ট [মেগাটিউন]


আজকাল আমরা প্রায় সবাই ইন্টারনেট ব্যবহার করি; কিন্তু ওয়েবসাইট সম্পর্কে কে কতোটুকু জানি?
আসুন আজ আমরা শুরু হতেই শেষ পর্যন্ত জানি এবং ফ্রিতে ওয়েবসাইট তৈরী করা শিখি।

ওয়েবসাইট কি?
ওয়েবসাইট হলো ইন্টারনেট জগতে আপনার অন্যতম একটি পরিচয়। যেমন আমার নাম “অর্ণব আহসান” এবং আমার বাড়ি “গুলশান” তাহলে আমাকে আপনি খুঁজে পেতে পারেন “ঢাকার গুলশান এলাকার অর্ণব আহসান” এই পরিচয়ে এবং আমার সাথে চাইলে বসে এক কাপ কফিও খেতে পারেন।
ঠিক তেমনি http://www.google.com কিংবা http://www.facebook.com হলো এমনি ওয়েবসাইট। ২০১৪ সালের গণনা মতে এমন ১ বিলিওন ওয়েবসাইট আছে এবং তার মধ্যে ২০০ মিলিওন ওয়েবসাইট জিন্দা আছে(অর্থাৎ এক্টিভ আছে)।
এখন http://www.google.com এর www হলো World Wide Web যার মানে পুরো বিশ্বের কম্পিউটারের সাথে জড়িত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। এই www সকল ওয়েবসাইট এর পূর্বেই থাকে এবং বর্তামানে কোন ওয়েবসাইটের নাম লেখার সময় এটি না লিখলেও চলে কেননা এটি ইউনিভারসাল হয়ে গিয়েছে যেমন আমাদের নামের পূর্বে যেমন সচরাচর “মোঃ” আমরা প্রায় স্কিপ করি কিংবা হিন্দু ধর্মের ক্ষেত্রে “শ্রীমান” ইত্যাদি এড়িয়ে যাই ঠিক তেমনি(কিন্তু এই www কল্যানেই পুরো নেটওয়ার্কিং সিস্টেম যে টিকে আছে এটা বলাই বাহুল্য)।
আবার http://www.google.com এর google হলো ওয়েবসাইটের “নাম” অর্থাৎ “ডোমেইন নেম” যেমন আপনার আমার প্রত্যেকের এক একটা নাম আছে। আর.com হলো বংশ পরিচয় বা ডোমেইন যেমন আপনার আমার বংশ পরিচয় শেখ, চৌধুরী ইত্যাদি ইত্যাদি।
তো এই বংশ পরিচয় যেমন সবার যেমন এক নয় তেমনি com/net/org ইত্যাদি আরো অনেকে ওয়েব-বংশ বা ডোমেইন ইন্টারনেটে আছে।

ডোমেইন কি?
ডোমেইন মানে একটা বংশ আর ঐ বংশের নাম দিয়েই কাউকে চিহ্নিত করা যায়। যেমন আমি “অর্ণব আহসান চৌধুরী” এখানে “অর্ণব আহসান” আমার নাম(ডোমেইন নেম) আর “চৌধুরী” হলো বংশ পরিচয় অর্থাৎ “ডোমেইন”।
তাহলে http://www.google.com এর google হলো ডোমেইন নেম এবং.com হলো ডোমেইন।

হোস্টিং কি?
একটু আগেই আমি বলেছি না “আমি অর্ণব আহসান ঢাকার গুলশানে থাকি” এখানে আমার এলাকার ঠিকানা “গুলশান ” হলো আমার হোস্টিং বা এলাকা। কিন্তু http://www.google.com এর হোস্টিং কোথায়?
দেখুন আমি গুলশানে থাকি তাইবলে তো পুরো গুলশান এলাকা আমার বাপের সম্পত্তি নয় আর পুরো গুলশানও সারাদিন কাধে নিয়ে বেড়াতে পারবো না তাই http://www.google.com এই ওয়েব এড্রেসের ভেতর এই হোস্টিং নামক জিনিসটা লেখা থাকে না(যদি আমার হোস্টিং বা এলাকার ঠিকানা দিয়ে দিতাম তাহলে তো সরাদিন মেহমান আসতেই থাকতো তখন কি কান্ডই না হতো বলুন দিকিনি?)!

সি প্যানেল কি?
আমার নাম “মোঃ অর্ণব আহসান চৌধুরী এবং ঢাকার গুলশানে থাকি” এই ঠিকানাতে সহজে আপনি আমাকে খুঁজে পেতে পারবেন?
মোটেই না বরং সারাদিন লেগে যেতে পারে আমার টিকিটা খুঁজে পেতে কিন্তু আপনি যদি আমার বাসার ঠিকানা জানেন তাহলে নিশ্চয়ই আমাকে খুঁজে পেতে কোন কষ্টই হবেনা তাইতো?!
হুম এই সি প্যানেল বা কনট্রোল প্যানেল হলো আমার বাসায় ঠিকানা।

ওয়েবসাইটের দরজা কি?
আমার বাসায় ঠিকমতো পৌছালেন কিন্তু আমার রুম যদি তালাবন্ধ থাকে তাহলে কি করবেন? নিশ্চয়ই এতোদূর এসে আপনাকে শুধু শুধু দরজার ওপারে দাড়িয়ে থাকতে হবে তাইনা?
এই ওয়েবসাইটের দরজা হলো “এডমিন প্যানেল”।
মূলত এই দরজা দিয়ে কেবলমাত্র এডিমন এবং এডমিন প্রোভাইডেড পারসন(অর্থাৎ এডমিনের দাওয়াত দেওয়া মেহমান) এবং হোস্টিং প্রোভাইডার (বাড়ির মালিক) প্রবেশ করতে পারেন।

তালার চাবি কোই?
তো এই দরজার তালা ও চাবি হলো যথাক্রমে এডমিন ইজারনেম এবং পাসওয়ার্ড। সাধারণত তালা অর্থাৎ এডমিন ইউজারনেম এটা সচারাচর “admin” নামের হয় এবং চাবি হলো “পাসওয়ার্ড” যা আপনি নিজে তৈরী করে নিতে পারেন।
আপনার দরজার তালা (এডমিন ইউজার নেম) এবং চাবি (পাসওয়ার্ড) যতোটা জটিল এবং কঠিন হবে ততোটাই সুরক্ষিত থাকবে আপনার ওয়েবসাইট।
নইলে কিন্তু চোর ঢুকবে, সাবধান!

চোর চোর চোর!
সাদারণ দূর্বল তালা চাবি কিংবা বাসায় তালা খুলে রাখলে চোর তো আসবেই, আর এই চোরই হলো “হ্যাকার” একবার চোর ঢুকলে কিন্তু ঘরের সব গোপনীয় সিন্দুক(ডাটাবেজ) খুলে মূল্যবান বস্তু (ইনফো/ডাটা) নিয়ে পালাবে। তার চোর যে আপনার বাড়িতে চুরি করেছিলো তার একটা স্বাক্ষরও রেখে যাবে যাতে আপনাকে সবাই দেখে ক্ষেপাতে পারে।

চোরের স্বাক্ষর!
মূলত চোর যে আপনার বাসায় আঘাত এনেছিলো তথা আপনার ওয়েবসাইট হ্যাক করেছিলো তার প্রমান সে “মিরর” করে রাখে; বিশ্বরের অন্যতম মিরর প্লেস হলো জোন এইচ!
চোর তালা চাবি ছাড়াও তালা ভেঙ্গে কিংবা সিদ কেটে আপনার বাসায় চুরি করতে পারে যেমন কয়েকটি উপায় হলো Keylogger, Denial of Service (DoSDDoS), Waterhole attacks, Fake WAP, Eavesdropping (Passive Attacks), Phishing, Virus, Trojan, ClickJacking Attacks ইত্যাদি।
যে যতো দক্ষ চোর সে ততো লীট হ্যাকার!

নিরাপদ রাখুন আপনার ওয়েবসাইট:
মূলত এই চোরের হাত থেকে আপনার ওয়েবসাইট বাচানোর জন্য আপনি মজবুত তালা চাবি(এডমিন এক্সেস) ব্যবস্থা করতে পারেন। এছাড়াও সিদ কাটা যেমন Keylogger, Denial of Service (DoSDDoS), Waterhole attacks, Fake WAP, Eavesdropping (Passive Attacks), Phishing, Virus, Trojan, ClickJacking Attacks ইত্যাদি হতে বাচতে আপনার বাড়ির দেয়াল শক্ত করতে পারেন তথায় ওয়েবসাইট ভার্নাবিলিটি (দূর্বলতা রোধ) করতে পারেন।
আপনার যদি এতোটা নলেজ থাকে তবে আপনি নিজে নিজেই তা করতে পারেন নয়তো ওয়েবসাইট ডেভলপার তো আছেনই!

ওয়েবসাইট ডেভেলপার:
যিনি আপনার বাড়িকে চোরের হাত হতে বাচানোর জন্য যাবতীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা করেন তিনিই হলেন ওয়েবসাইট ডেভলপার।
একজন ডেভলপার যতোটা দক্ষ এবং জ্ঞানী হবেন তার বাজার কদর ততোই বেশী।
আর হ্যা, একজন হ্যাকারও কিন্তু একজন ভালো মানের ওয়েব ডেভলপার হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।

ওয়েবসাইট ডিজাইন
আপনি বাড়ি তৈরী করলেন ঠিক আছে কিন্তু বাসা তো সজাতে হবে; ঠিক তেমনি ওয়েবসাইট সাজানোই হলো ওয়েবসাইট ডিজাইন। একটি বাড়ি সাজাতে যেমন মনোমুগ্ধকর রং করে হয় তেমনি ওয়েবসাইট ডিজাইন করতে লাগে টেম্পলেট। আবার বাড়ির শৌখিন আসবার পত্র হিসেবে ওয়েবসাইটের বেলায় প্রয়োজন লে আউট, ফুটার ডিজাইন, গ্যাজেট কম্বিনেশন ইত্যাদি।
যিনি ওয়েবসাইট ডিজাইন করেন তাকে ওয়েব-ডিজাইনার বলে।

ওয়েবসাইট এসইও:
আপনি বাড়ি বানালেন, ডেভপল, ডিজাইন সবই করলেন কিন্তু আপনার বাড়ির যদি নেমপ্লেট না লাগান তবে সেটা কি কেউ সহজে চিনতে পারবে? তেমনি ওয়েবসাইট এর ক্ষেত্র নেমপ্লেট হলো SEO অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন। মূলত গুগল, ইয়াহু, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিনে আপনার ওয়েবসাইটের পরিচয় করিয়ে দেওয়ায় হলো SEO যাতে আপনার বাড়ি তথা ওয়েবসাইট সবাই চিনতে/জানতে পারে এবং তা জনপ্রিয় হয়।
সর্বাধিক জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগলের সাথে কন্টাক্ট করে টাকার বিনময়ে ওয়েবসাইট পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো অনপেইজ এসইও।
আবার আপনি চাইলে গুগলের শর্ত মেনে গুগল কনসোল হতেই এসইও করতে পারেন, এটা সম্পূর্ণ ফ্রি!

ফ্রি ওয়েবসাইট
ইন্টারনেটে এমন অনেক ওয়েবসাইট আছে যারা আপনাকে ফ্রি ওয়েবসাইট বানতে দিবে অনেকটা বাসা ভাড়া করার মতোন।
তবে বাসার ভাড়া হিসেবে তারা আপনার ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপণ দিবেই এটাই শর্ত।
এমনি কিছু কিছু ওয়েবসাইট হলো:
(১) http://www.wix.com/
(২) http://www.squarespace.com/
(৩) https://www.websitebuilder.com/
(৪) https://www.sitebuilder.com/
(৫) http://www.soholaunch.com/
(৬) http://www.simbla.com/
(৭) http://www.ewisoft.com/
(৮) http://www.moonfruit.com/
(৯) http://www.weebly.com/
(১০) http://mobirise.com/
(১১) http://www.webydo.com/ ইত্যাদি ইত্যাদি

বাড়ির মালিক:
আপনি অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকবেন আর বাড়ির মালিক তার নাম জানান দিবেনা তাই কি হয়?
ঠিক তেমনি এমন ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরী করলে সেখানে ঐ বাড়ির মালিক বা ওয়েবসাইট প্রোভাইডার তার নিজের ওয়েবসাইটের নামের সাথে একটা টাইটেল ব্যবহার করে।
যেমন abcd.wix.com এখানে abcd হলো ভাড়াটিয়া আর wix হলো মালিক যাতে abcd.wix এটা হলো ভাড়া বাড়ি বা সাবডোমেইন!

ভালো বাড়িওয়ালা:
পৃথিবীতে কোন বাড়িওয়ালাই তার ভাড়াটিয়াদের কাছে ভালো হয়না(চিরন্তন সত্য) তবুও অপেক্ষাকৃত ভালো বাড়িওয়ালা হলো GOOGLE তাই বাড়ি ভাড়া করতে চাইলে আপনি গুগল হতে http://www.blogger.com হতে ওয়েবসাইট বানাতে পারেন। যেহেতু বাড়ি ওয়ালা মহাশয় অপেক্ষাকৃত ভালো তাই এখানে ডেভেলপিং তথা সিকিউরিটি, ডিজাইন যেমন টেম্পলেট, এসইও ইত্যাদি খুবই সহজতর এবং বিনামূল্যে পাবেন।

বাড়ি ভাড়া দিয়ে ইনকাম:
আপনার যদি একটা বাড়ি থাকে তবে তা হতে আপনি ভাড়া দিয়ে ইনকাম করতে পারেন তেমনি ওয়েবসাইট হতে ইনকাম করতে আপনি এডসেন্স এর সহায়তা নিতে পারেন অর্থাৎ আপনার ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপণ বসিয়ে ইনকাম করতে পারেন। প্রসিদ্ধ কিছু বিজ্ঞাপণ দাতা হলো
(১) https://www.google.com/adsense/
(২) http://www.media.net/
(৩) http://www.infolinks.com/
(৪) http://chitika.com/
(৫) http://www.madadsmedia.com/
(৬) http://buysellads.com/
(৭) https://www.ayboll.com/ ইত্যাদি

ভাড়াটে ওয়েবসাইট নাকি নিজের ওয়েবসাইট?
দেখুন ভাড়া বাড়ির চেয়ে নিজের বাড়ি যেমন নিরাপদ তেমনি সাবডেমেইন যুক্ত কিংবা ফ্রি হোস্টিং প্রোভাইডেড ওয়েবসাইট এর তুলনায় নিজের কেনা ডোমেইন+হোস্টিং হতেই ওয়েবসাইট বানানো নিরাপদ। তাথাপি প্রফোশনাল মানের ওয়েবসাইট বানাতে ডোমেইন হোস্টিং কেনা অতি আবশ্যিক।

আসুন নিজে নিজেই একখানা ফ্রি ওয়েবসাইট বানানো যাক:

সবার আগে https://www.wix.com/ এ যান এবং Get Started ক্লিক করুন। signup ক্লিক করে আপনার ইমেইল এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে একাউন্ট ক্রিয়েট করুন। এরপরের ধাপে আবার Get Started ক্লিক করুন এবং ওয়েবসাইটের ক্যাটাগরি সিলেক্ট করুন, ওয়েবসাইটের নাম দিন, লোকেশন ঠিক করুন এবং [→] ক্লিক করে ok করুন। পরের ধাপে আপনার ওয়েবসাইট স্টাইল বাছাই করুন build website ক্লিক করুন এবং কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন [ওয়েবসাইট তৈরী হচ্ছে] এরপর প্রসেস শেষে pubish ক্লিক করুন(পাবলিশ হতে কিছুক্ষন সময় নিবে এবং পবশিশ প্রসেস শেষে আপনাকে নোটিফাই করবে)।

ব্যাস তৈরী হয়ে গেল আপনার ওয়েবসাইট!

শেষকথা:
শিখতে থাকুন সফলতা আসবেই; সফলতার শেষে নিশ্চিত আপনার হাতেই থাকবে আলোর শিখা আর সেই আলোর শিখাতে শিক্ষা ছড়িয়ে দিন সবার মাঝে!

আমার টিউন গুলো ভালো লাগলে অবশ্যই আমার টিউন বেশি বেশি জোসস করুন

আমার টিউন গুলো আপনার ‘টিউন স্ক্রিন’ নিয়মিত পেতে অবশ্যই আমাকে ফলো করুন। আমার টিউন গুলো সবার কাছে ছড়িতে দিতে অবশ্যই আমার টিউন গুলো বিভিন্ন সৌশল মিডিয়াতে বেশি বেশি শেয়ার করুন

আমার টিউন সম্পর্কে আপনার যে কোন মতামত, পরামর্শ ও আলোচনা করতে অবশ্যই আমার টিউনে টিউমেন্ট করুন

আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য ‘টেকটিউনস ম্যাসেঞ্জারে’ আমাকে ম্যাসেজ করুন। আমার সকল টিউন পেতে ভিজিট করুন আমার ‘টিউনার পেইজ’



সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar