ad720-90

৫জি প্রযুক্তি চালু হলে কী হবে?


দেশে পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক তথা ৫জি চালু হবে ২০২১ সালে। এই টার্গেট ধরে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিতে ২৫ জুলাই হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘বাংলাদেশ ৫জি সামিটে’ ৫জির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালানো হলো। সফল এই কার্যক্রমে গতি উঠেছে ৪ দশমিক ১৭ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড)। এত প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয় হুয়াওয়ে।

প্রসঙ্গত, এর আগে দেশে ফোরজির সেবার ন্যূনতম গতি ২০ এমবিপিএস নির্ধারণ করে সরকার। মোবাইলফোন অপারেটররা এই গতিকে বাস্তবসম্মত নয় বলে অভিহিত করে। পরবর্তী সময়ে সেবার মান নিয়ন্ত্রণে বিধিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। খসড়া বিধিমালায় ফোরজি সেবার গড় গতি নির্ধারণ করা হয় ৭ এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড)।

৫জির বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘২০২১ সালে পৃথিবীর অনেক দেশ ৫জিতে চলে যাবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই আমরা।কোনওভাবেই পিছিয়ে থাকা যাবে না।’ এখনই কেন ৫জির পরীক্ষা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এখনই ৫-জি টেস্টের অর্থ হলো আমাদের সক্ষমতা যাচাই করা। স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনসহ আরও অনেক কিছু করতে হবে এই সময়ে। কারণ ৫জির মান এখনও ঠিক হয়নি। ফলে সঠিক সময়েই আমরা ৫-জির টেস্ট করেছি।’ মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সক্ষমতা যাচাই, তারা কাজ করতে কতটা প্রস্তুত, তারা সফল হবে কিনা এসব বিষয় যাচাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।

৫জি দিয়ে কী হবে জানতে চাইলে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এই উন্নত নেটওয়ার্ক আগামী ২০২০ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করবে। নিউ রেডিও একসেস টেকনোলজি (আরএটি) এবং বিদ্যমান তারহীন টেকনোলজি (এলটিই, এইচএসপিএ, জিএসএম ও ওয়াইফাই) উভয়ের মাধ্যমে ৫জি রেডিও একসেস তৈরি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘৫জি মানুষ ও ডিভাইসের মধ্যে জিরো ডিসটেন্স কানেক্টিভিটি সরবরাহ করবে। ফলে মানুষের জীবনের প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো সমৃদ্ধ হবে, যা ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রভাবিত হচ্ছে। শিক্ষা, বাণিজ্য, আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, ব্যাংকিং ও যোগাযোগের সব মাধ্যমে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।’ তিনি মনে করেন, ৫জির ব্যবহারে অনেক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা হবে।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ নেওয়ার্ক অপারেটর্স গ্রুপের (বিডিনগ) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ‘৫জি প্রযুক্তি মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রা বদলে দেবে। ৫জি প্রযুক্তির মাধ্যমে চালকবিহীন গাড়ি চলবে রাস্তায়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আরও শক্তিশালী হবে। স্মার্ট সিটি বিনির্মাণ সহজ হবে। এর সঙ্গে যুক্ত থাকা রোবট পরিচালনা করা যাবে। বাড়বে আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) প্রযুক্তির ব্যবহার। এছাড়া বিগডাটা,কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে ফাইভ জি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’

৫জি চালু হলে আমূল পরিবর্তন আসবে চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে। ৫জি প্রযুক্তির মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবার উন্নয়নের ফলে গ্রামে বা প্রত্যন্ত এলাকায় বসেও রোগী শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে পারবেন। চাইলে বিশ্বের খ্যাতনামা চিকিৎকের কাছ থেকেও পরামর্শ নিতে পারবেন। দূর শিক্ষণ বা অনলাইন ক্লাসরুমের ফলে দূরগ্রাম বা প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষালাভের সুযোগ পাবে। ৫জি ডিজিটাল ডিভাইড বা প্রযুক্তিগত বৈষম্য দূর করতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বে ইন্টারনেট সংযোগওয়ালা ডিভাইস হবে ৫ হাজার কোটির বেশি। এগুলোতে আইওটি ‍সুবিধা থাকবে। ফলে এগুলো পরিচালনা করতে প্রয়োজন হবে ৫জি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফোরজির চেয়ে অন্তত ৪০ গুণ দ্রুতগতির হবে ৫জি। এই নেটওয়ার্কে থ্রিডি সিনেমা ডাউনলোড করা যাবে ৬ সেকেন্ডে, ফোর-জিতে যা লাগে ৬ মিনিটের মতো। যদিও এগুলো অনুমিত। সেবা চালু হলে সময় আরও কম বা বেশি লাগতে পারে।

জানা গেছে, এর আগে ৫জির সফল পরীক্ষা চালায় চীনের কয়েকটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে অন্যতম হুয়াওয়ে। ইতালির তুরিন শহরে এই পরীক্ষা চালানো হয়। ওই পরীক্ষায় ৩ গিগা পর্যন্ত গতি পাওয়া গিয়েছিল।

২০১৬ সালের নভেম্বরে হুয়াওয়ের পক্ষ থেকে চীনে ৫জি প্রযুক্তি উপস্থাপনা দেখার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন এই প্রতিবেদকসহ কয়েকজন বাংলাদেশি সাংবাদিক। সেখানে ‘ওপেন রোড টু আ বেটার কানেক্টেড ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক একটি উপস্থাপনায় দেখানো হয় আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) এনাবল্ড ইন্ডাস্ট্রি, ডিজিটাল বিজনেস এনাবেলমেন্ট, ৪ দশমিক ৫জি, ফাইভ-জি, এলটিই, গিগা প্রকল্পসহ আরও অনেক কিছু। সেখানে দেখানো হয়, ৫জি প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি শহরকে কীভাবে স্মার্টসিটি করা যায়, কীভাবে ৫জি প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপকে আলোকিত করে উন্নত শহরের সমকক্ষ করা যায় সেসব।

দেশে ৫জি প্রযুক্তি চালু হলে সাধারণ মানুষের এমন অনেক অসম্ভব কল্পনাই তখন বাস্তব হয়ে দেখা দেবে, জানান প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar