ad720-90

নিজে শিখে মাকেও শেখালেন আফরোজা


মা মোহছেনা বেগম ও মেয়ে আফরোজা সিদ্দিকা (বসা)—দুজনই এখন আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছেন। ছবি: প্রথম আলোমা বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি বলেই চেয়েছিলেন মেয়ে প্রতিষ্ঠিত হোক। মেয়েও তা-ই চেয়েছিলেন। আর চেয়েছিলেন বলেই সব বাধা পেরিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি করে যাচ্ছেন মুক্ত পেশাজীবী (ফ্রিল্যান্সার) হিসেবে আউটসোর্সিংয়ের কাজ। শুধু যে নিজে করছেন তা-ই না, মাকেও শিখিয়েছেন। এখন মা-মেয়ে কাজ করেন একসঙ্গে। এই গল্প মেয়ে আফরোজা সিদ্দিকা এবং মা মোহছেনা বেগমের। ৫ সেপ্টেম্বর কথা হয় তাঁদের সঙ্গে।

আফরোজা সিদ্দিকার সঙ্গে কথা শুরু হয় তাঁর পড়াশোনা নিয়ে। তিনি বললেন, ‘ইচ্ছে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ হলো না। পরে ভর্তি হয়েছি তেজগাঁও কলেজে। তবে মনে একটা জিদ ছিল কিছু করার। ভাবতাম নিজে কিছু করতে পারলে ভালো হতো। পরে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের কথা জানতে পারি বন্ধু হাবিবের কাছে।’

তথ্যপ্রযুক্তিতে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শেখার আগ্রহের কথা মাকে জানান আফরোজা। মা সমর্থন দেন। প্রথমে বাড়ির কাছেই ঢাকার যাত্রাবাড়ীর একটি আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এবং পরে ধানমন্ডির আরেকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শুরু হয় আফরোজার গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ শেখা। তিনি বলেন, ‘আমার মা গ্রাফিক ডিজাইনের একটা কোর্সে আমাকে ভর্তি করে দিল। এরপর থেকেই আমার ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজের শুরু।’

আফরোজা পড়াশোনা করছেন তেজগাঁও কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে তৃতীয় বর্ষে। একই সঙ্গে চলছে গ্রাফিক ডিজাইনের প্রশিক্ষণ। এ জন্য তাঁকে নিয়মিত যাত্রাবাড়ী থেকে ধানমন্ডি যেতে হয়। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে আফরোজা বুঝতে পারেন শুধু শিখলেই চলবে না, নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। এর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ক্লাসে শিখে তা অন্য কাউকে শেখানো। এতে অনুশীলনও হবে, অন্য কেউ তা শিখতেও পারবে। আফরোজা তা করেছিলেন। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যা শিখতেন, বাড়িতে এসে মাকে তা-ই শিখিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেন। এভাবেই চলতে থাকে মা-মেয়ের গ্রাফিক ডিজাইনের দীক্ষা।

আফরোজা প্রথম সাফল্য পান চলতি বছরের এপ্রিলে। ‘ডিজাইন ক্রাউড’ নামের ওয়েবসাইটে লোগো নকশার প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে ১৫০ ডলার পান। পরের দিনই ফ্রিল্যান্সার ডটকমের একটি প্রকল্পে তাঁর আরেকটি লোগোর নকশা নির্বাচিত হওয়ায় পান ৭০ ব্রিটিশ পাউন্ড। এভাবেই শুরু। আফরোজা বললেন, ‘এপ্রিলের পর থেকে এখন পর্যন্ত আমার মোট আয় প্রায় ৩ হাজার ডলার। এখন আমি বাসায় আমার মায়ের সঙ্গে আরও তিনজন মেয়েকে কাজ শেখাচ্ছি।’

দেশে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য মায়েদের বড় ভূমিকা রাখা উচিত বলে মনে করেন মোহছেনা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমি পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা করতে পারিনি। তাই সব সময় চেয়েছি আমার মেয়ে কিছু করুক, নিজের পায়ে দাঁড়াক। এই জন্যই কারও কথায় কান না দিয়ে মেয়ের ইচ্ছায় সমর্থন জানিয়েছি। মেয়েও আমাকে সহযোগিতা করেছে। তার কাছে কাজ শিখেছি টুকটাক, আর এখন পর্যন্ত আয়ও করেছি ৩০০ ডলারের মতো। আমি প্রত্যেক মাকেই বলব মেয়েদের ইচ্ছাকে সমর্থন জানাতে। আমাদের সমর্থন পেলেই মেয়েরা সামনে এগিয়ে যেতে পারবে।’





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar